বরিশাল অফিস: বরিশালের পোশাক বাজারে মানুষের ভীড় সামলাতে হিমশিম পুলিশ । তারপরও কিন্তু বেচাকেনা নেই পোশাক বাজারের কোথাও। ঠেলাঠেলি, রিক্সা, অটোরিকশা ও ইজিবাইক, মাঝেমধ্যে দু চারটি প্রাইভেট কার, জীপের আনাগোনায় সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। আর এই জটের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম পুলিশ ও দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট।
গত তিনদিন ধরে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামলাতে হচ্ছে বলে জানালেন বরিশালের বাণিজ্যিক এলাকা চকবাজারের ফলপট্টি মোড়ের দায়িত্বরত ট্রাফিক কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ ভীড় সামলাতে হতো। রমজান শুরুর পর গতকালই প্রথম প্রচ- চাপ পড়েছে নগরীর এই চকবাজার এলাকায়। বিকেল চারটা থেকে শুরু হয় এই ভীড়। নগরীর পোশাক বাজারে ক্রেতাদের এই চাপ সামলাতে না পেরে নগরীর অভ্যন্তরীণ সড়কে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা।
সরেজমিনে ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকালে চকবাজার, পদ্মাবতী, হেমায়েতউদ্দিন সড়ক ও কাটপট্টি হয়ে বড়বাজার, পোর্ট রোড পর্যন্ত বিশাল যানজট চোখে পড়ে। এ যানজট ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির প্রভাব যেয়ে ঠেকেছে প্রধান সড়কেও। বটতলা মোড়, গোরাচাঁদ দাস রোড, নতুন বাজার, চৌমাথাসহ আশেপাশের এলাকায় এমনিতেই যানজট এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। গড়িয়ারপাড় থেকে রুপাতলী পর্যন্ত সড়কের দুপাশ বিস্তৃত করে চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। মাটি খননের কারণে মহাসড়ক এখন যানজটে নাজেহাল দশা।
কিন্তু ১০ রমজানের পর থেকেই শহরমুখী মানুষের চাপ যেন আরো তিনগুণ হয়েছে বলে দাবী করলেন চৌমাথা ট্রাফিক বক্সের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বিদ্যুৎ। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে কাজের খোঁজে এবং ঘর গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতেই বেশিরভাগ মানুষ শহরে ভীড় করছেন। তবে এটা আরো বাড়বে বলে জানালেন তিনি। বিদ্যুৎ নিজেও স্বীকার করেন নগরীতে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের অভাব রয়েছে।
পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়নকেও দায়ী করেন এই ট্রাফিক ইন্সপেক্টর। এদিকে বিকেল সাড়ে চারটায় বরিশালের চকবাজার সড়কে প্রবেশ করেই দিশেহারা অবস্থা চোখে পড়ে। একজন ট্রাফিক কনস্টেবল ও একজন সার্জেন্টের এই নাজুক অবস্থায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছেন পদ্মাবতী এলাকার কয়েকজন তরুণ সাকিব, সার্জিল ও মাহতাব। তারাও ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি রিক্সা, অটোরিকশা ও ইজিবাইকে সৃষ্টি যানজট নিরসনের চেষ্টা করছেন।
বিশেষ করে ফলপট্টি মোড়, কাটপট্টির মোড়, বড়বাজার মোড়ের সংযোগগুলোতে এই জটের উৎপত্তি বলে জানালেন ট্রাফিক সার্জেন্ট ইমরান মৃধা। তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন এ মাথা থেকে ওমাথা। এ অংশের সড়ক ওয়ানওয়ে ঘোষণা করা হলে এতোটা সমস্যা হতোনা বলে জানালেন তিনি। চকবাজার সড়কের দুপাশে জুতা আর পোশাক বাজারের দোকানগুলোতে ঝুলছে রমজান উপলক্ষে বিশেষ ছাড়ের সাইনবোর্ড। ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এসব দোকানে। চেহারা আর পোশাক ও হিজাবের অন্তরালে থাকা মুখের বাক্য থেকে অনুমান করা যায় এই ক্রেতাদের বেশিরভাগই গ্রামাঞ্চল থেকে আগত অভিজাত পরিবার। আবার মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তের মানুষের উপস্থিতিও কম নয়।
কয়েকজন মা বোনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা জানালেন, চরমোনাই থেকে এসেছেন পোশাক ও জুতো কিনতে। ব্র্যান্ডের দোকান ঘুরে তারা এখন চকবাজারের দোকানগুলোতে দরদাম করছেন। নগরীর ব্র্যান্ডের দোকানগুলো বিশেষ করে টপটেন, চন্দ্রবিন্দু ও অঙ্গসাজের গলাকাটার সংবাদ প্রচার হতেই চকবাজারের ভীড় আরো বেড়ে গেছে বলে দাবী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। যদিও পোশাক বাজারের ব্যাবসায়ীরা তা স্বীকার করতে নারাজ। বৈশাখ, পরাণ, খান ক্লোথ, শবনম, ফিরোজা, তালুকদার ইত্যাদি বেশকিছু পোশাক ও জুতোর দোকানের ব্যবসায়ীরা বললেন, এই যে ভীড় দেখছেন, এটা ক্রেতার ভীড় না। এটা দেখার ভীড়। কোনো কাজে শহরে আসছে। সুযোগ বুঝে দরদাম দেখে গেল আরকি। ভীড়তো শুরু হবে২০ রোজার পর। তখন কিছুটা বেচাকেনার আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। তাদের কথার সত্যতা পাওয়া যায়, নতুনবাজার এলাকার রং, ঢাকা ফ্যাশন, বৈশাখী সহ বেশ কয়েকটি পোশাকের দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি কম দেখে।
আবার কয়েকজন পুরুষের সাথে কথা বলে জানা গেল, তারা কাজের খোঁজে এসেছেন। কেউ নিজের জন্য কেউ আবার বোন বা বউয়ের জন্য। রমজানের এই সময়টায় অতিরিক্ত দু চারজন শ্রমিক প্রয়োজন হয় পোশাক বাজারের ব্যবসায়ীদের। পরিবেশ আন্দোলনের নেতা কাজী মিজানুর রহমান বলেন, গ্রামে কাজ নেই, তাই শহরমুখী মানুষের চাপ কিন্তু বেড়েই চলছে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে যানজটের পরিধিও বাড়ছে ক্রমশ।
কারণ, শহরমুখী মানুষগুলো এসেই ইজিবাইক ও অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। ফলে সচেতন না হলে যানজট ও দুর্ঘটনা দুটোই শুধু বাড়তে থাকবে বলে জানান কাজী মিজান। মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, যানজট নিরসনের জন্য আগামীকাল থেকেই নগরীর কয়েকটি সড়ক ওয়ানওয়ে ঘোষণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ১৫ রোজা থেকে ঈদ পর্যন্ত চকবাজার ও কাটপট্টি সড়কটি ওয়ানওয়ে করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট কম থাকায় শহরের মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দিতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করেন তানভীর আরাফাত।
গত ১৫ মার্চ ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বরিশালের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্ণার উদ্বোধন শেষে বলছিলেন, এরই মধ্যে পুলিশের যে লোকবল সংকট ছিল তা দূর করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ পুলিশের আর কোনো সংকট নেই।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply