হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: মাধবপুর উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম যেভাবে চলছে তা সত্যিই হতাশাজনক। এ উপজেলায় মোট ৩৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ক্লিনিকের ভবন একেবারে জরাজীর্ণ। এ কারণে এসব ক্লিনিক অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে।
অনেক ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রায় সবকটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদায়ক (সিএইচসিপি) দিয়ে চলছে। অনেক ক্লিনিকে সিএইচসিপি থাকলেও তাঁরা ঠিক সময়ে আসেন না বা এলেও তাড়াতাড়ি চলে যান। ফলে এলাকার বাসিন্দারা ঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। মনে প্রশ্ন জাগে, একটি উপজেলার এতগুলো কমিউনিটি ক্লিনিকের যদি এ রকম বেহাল পরিস্থিতি বিরাজ করে, তাহলে সে এলাকার সাধারণ মানুষ কী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে ? এসব দেখার কি কেউ নেই ? বলতে গেলে একই ধরনের নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে উপজেলার সবকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে সংস্কারের অভাবে ক্লিনিকের ভবনগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
এসব ক্লিনিকে ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসা। বিভিন্ন সময় ভবন সংস্কারের জন্য বরাদ্দ এলেও কোনো কাজ হয় না। অনেক ক্লিনিকে ঔষধের সংকট লেগেই থাকে দিনের পর দিন। কোথাও কোথাও দেখা গেছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিক থাকে না। থাকে না নিয়মিত পানির সরবরাহ। কোথাও আবার শৌচাগার নষ্ট হয়ে অচল হয়ে আছে।
অনেক ক্লিনিকে রয়েছে দালাল চক্রের দৌরাত্ম। অবকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার কারণে এসব ক্লিনিকের সেবা কার্যক্রম বলতে আর কিছু নেই। বলতে গেলে মাধবপুর উপজেলার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অগ্রাধিকার প্রকল্প কমিউনিটি ক্লিনিক চলছে যেমন খুশি তেমন সাজে।
সঠিক তদারকির অভাবে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোপ্রাইটর (সিএইচসিপি) তাদের খেয়াল খুশিমত আসা যাওয়া করছেন, এতে করে বঞ্চিত হচ্ছে তৃণমূল সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে মাসের পর মাসে উপরের খুঁটির জোরে গাড়ির তেল বাবদ হাজার হাজার টাকা উত্তোলন করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর জনৈক কর্মকর্তা বলেন, মাঠ তদারকির অভাবে এমন বেহাল দশা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায় মাসের পর মাস যায় চলে যায় অথচ কমিউনিটি ক্লিনিকে একটি মাসিক সভার আয়োজন করা হয় না। সভাপতি নিজেই জানেন না যে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি পদে আছেন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসে ঔষধের কার্টুন খোলার সময় অবশ্যই সভাপতির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
সরেজমিনে উপজেলার আদাঐর ইউপির গোপালপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, বহরা ইউপির ঘিলাতলী কমিউনিটি ক্লিনিক, জগদীশপুর ইউপির খড়কি কমিউনিটি ক্লিনিক, নোয়াপাড়া ইউপির রতনপুর কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ ক্লিনিকই বন্ধ থাকে। অভিযোগ রয়েছে এসব ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা উপজেলার স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও ইউপি সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা পরিদর্শনকালে তাদের প্রতিবেদনে এসব অনিয়মের বিষয়টি উল্লেখ করেন না। যে কারণে দীর্ঘদিন ধরে একই অনিয়ম চললেও কোনো প্রতিকার নেই।
ফলে চিকিৎসা নিতে আসা গ্রামগঞ্জের সহজ সরল ও দরিদ্র মানুষরা বঞ্চিত হচ্ছেন সেবা থেকে। অনেকে টাকার অভাবে সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু ক্লিনিকগুলো বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকায় কিংবা দায়িত্বপ্রাপ্তরা কেউ না থাকায় চিকিৎসা না নিয়ে ফিরে আসতে হয়।
এদিকে মাধবপুর উপজেলার স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইসমাঈল হোসেনের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ। তিনি মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে অডিট রিপোর্টে নয় ছয় করে থাকেন। উল্লেখ্য প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করে।
বর্তমানে দেশে ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ছয় হাজার মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার কথা। এসব ক্লিনিকের মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা, প্রজননস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, টিকাদান কর্মসূচি, পুষ্টি, স্বাস্থ্যশিক্ষা, পরামর্শ সহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করার কথা।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, অবহেলা এবং কিছু মানুষের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে এর যে মূল উদ্দেশ্য তা আজ ব্যাহত হচ্ছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক যেন গ্রামের দরিদ্র মানুষকে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারে এ জন্য সরকারকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে। কী কী কারণে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে তার আসল কারণ খুঁজে বের করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply