নিজস্ব প্রতিনিধিঃ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত এ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের আইসিইউ শয্যা ও ভেন্টিলেটর কতিপয় চিকিৎসকের খামখেয়ালির কারণে সরঞ্জাম হতে চলছে। ২০২০ সালে বৈশ্বিক মহামারী করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে পাঁচতলা নতুন ভবনে ৩০০ শয্যার করোনা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছিল। শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে ৩০টি আইসিইউ শয্যা এবং ১২টি ভেন্টিলেটরসহ চিকিৎসাসেবার যাবতীয় সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছিল সেখানে। করোনার প্রকোপ এখন নেই বললেই চলে। এ কারণে সেগুলো এখন আর ব্যবহূত হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গিয়েছে, ৩০০ শয্যার করোনা ইউনিটে মাত্র একজন রোগী চিকিৎসাধীন। এ ভবনে আর কোনো চিকিৎসাসেবা বিভাগ নেই। আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ মোট ৩০০ শয্যার কক্ষগুলো অনেকটা পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। কক্ষগুলোর তালার ওপর মরিচা দেখে বোঝা যায় এগুলো দীর্ঘদিনেও খোলা হয়নি। কক্ষের ভেতরে চিকিৎসা সরঞ্জামগুলোর অবস্থাও যে একই তা বাইরে থেকেই অনুমান করা যায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনা রোগী না থাকায় নতুন ভবনে শেবাচিম হাসপাতলের মেডিসিন ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ, কিন্তু মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা মূল ভবন ছেড়ে নতুন ভবনে যেতে অস্বীকার করায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। মূল ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডে শয্যার অভাবে রোগীদের থাকতে হয় মেঝেতে। সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ডা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ শেবাচিম হাসপাতালে পরিদর্শনে গেলে মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীদের দুরবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নতুন ভবনে যেতে অনিহার প্রসঙ্গ জানতে পেরে চিকিৎসকদের ভর্ত্সনা এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবনে যেতে নির্দেশ দেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, শেবাচিম হাসপাতালের মূল ভবনে ১৫০ শয্যার মেডিসিন ওয়ার্ডে প্রতিদিন দুই-তিন গুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এ কারণে ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দার মেঝেতেও রোগী রাখা হয়। রোগীদের এ দুর্ভোগ লাঘব এবং আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর থাকায় শ্বাসকষ্ট রোগীদের চিকিৎসায় সহায়তা হবে এসব বিবেচনা নিয়েই মেডিসিন ওয়ার্ড নতুন ভবনে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। অন্যদিকে সেখানে না যাওয়ার ক্ষেত্রে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসরা যুক্তি দেখিয়েছেন, নতুন ভবনের অবকাঠামো চিকিৎসা সেবা উপযোগী নয়। ছোট হওয়ায় একটি কক্ষে আটজনের বেশি রোগী রাখা সম্ভব নয়।
অধিক কক্ষ ঘুরে রোগীদের সেবা এবং মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হবে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রাণলয়ের সচিব ও মহাপরিচালক সম্প্রতি হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে বৈঠকে পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম তাদের অবহিত করেন, মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের বাধায় নতুন ভবনে ওয়ার্ড স্থানান্তর করতে পারছেন না।
এমনকি বিভাগীয় প্রধান ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলু চাকরি থেকে ইস্তফা ও মামলার হুমকিও দিয়েছেন। তাত্ক্ষণিক ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলুকে বৈঠকে ডেকে আনার পর তার কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় এবং দ্রুত নতুন ভবনে মেডিসিন ইউনিট স্থানান্তরের নির্দেশ দেন সচিব ও মহাপরিচালক। ডা. বাবলু দায়িত্ব পালনকালে চিকিৎসক ইউনিফর্ম ছাড়া পাঞ্জাবি পরে তাদের সামনে আসায় তাকে ভর্ত্সনা করা হয় ওই বৈঠকে।
শেবাচিম হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. আনোয়ার হোসেন বাবলু বলেন, ‘নতুন ভবনের রুমগুলো এলোমেলো করা হয়েছে। এক রুম থেকে রোগী দেখে আরেক রুমে যেতে যে সময় অপচয় হবে এ সময়ে আরো তিনজন রোগী ভিজিট সম্ভব। সব মিলিয়ে নতুন ভবনটি হাসপাতালের পুরনো ভবনের আদলে করলে আর এ সমস্যা হতো না। চিকিৎসকদের সমস্যা কেউই বুঝতে চায় না।’
এসব বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, গত জুনে হাসপাতাল স্বাস্থ্যসেবা কমিটির সভায় নতুন ভবনে মেডিসিন ইউনিট স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বিরোধিতা করেন মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা। সম্প্রতি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্য মহাপরিচালক পরিদর্শনে এসে রোগীদের দুর্ভোগ দেখে মেডিসিন বিভাগ স্থানান্তর করার জন্য কঠোর নির্দেশ দেন। এর পর থেকে স্থানান্তরের প্রস্তুতিকাজে গতি পায়। এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন ভবনে মেডিসিন ইউনিট স্থানান্তর করতে পারবেন বলে দাবি করেন পরিচালক।
উল্লেখ্য, বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ৫০০ শয্যা ধারণক্ষমতার ১০ তলা একটি ভবন নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। পরবর্তী সময়ে সেটি সাততলা পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। ঠিকাদারের সঙ্গে মামলা জটিলতায় বছরের পর ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ থাকে। সব জটিলতা কাটিয়ে ২০১৯ সালে পঞ্চম তলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে বৈশ্বিক মহামারী শুরু হলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ছাড়াই নতুন ভবনে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ করোনা ইউনিট চালু করা হয়। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর স্থাপন করা হয়েছিল। এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত রোগীদের প্রয়োজনে ব্যবহূত হয়।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply