সুনামগঞ্জে হঠাৎ ডাকা বাস ধর্মঘট আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রত্যাহার করেছেন শ্রমিকেরা। সড়কে রাখা বাস পুলিশ জব্দ করার ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেন তাঁরা। এর ফলে গতকাল সন্ধ্যা থেকে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এদিকে বাস ধর্মঘট ডাকা হলেও বাসশ্রমিকেরা আজ দুপুরে শহরের মল্লিকপুর এলাকায় বাস টার্মিনালের পাশে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে অবস্থান নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলে বাধা দেন। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় লোকজন।
দিনভর দুর্ভোগের পর বিকেলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহসহ প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা বাসমালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে আলোচনার পর শ্রমিকেরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেজাউল করিম বলেন, বৈঠকে উভয় পক্ষের আলোচনার পর জব্দ করা বাসগুলো ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বাস টার্মিনাল সংস্কার হওয়ার আগপর্যন্ত বাসগুলো রাস্তার পাশে সুশৃঙ্খলভাবে রাখার সিদ্ধান্ত হওয়ার পরই তাঁরা বাস ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন।
আজ সকালে শহরের মল্লিকপুর এলাকায় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কোনো বাস চলছে না। টার্মিনালের ভেতরে ও বাইরে বাসগুলো সারি করে রাখা। টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ। পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা সেখানে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে দূরপাল্লার বাসগুলো ছাড়ে। সেখানেও দেখা গেছে একই চিত্র।
গতকাল বিকেলে টার্মিনালের পাশে ওয়েজখালী এলাকার সড়ক থেকে শ্যামলী, মামুন ও সাকিল পরিবহনের তিনটি বাস জব্দ করে পুলিশ লাইনসে নিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকেরা।
বাস টার্মিনালের একটি টংদোকানে বসে ছিলেন বুলবুল বেগম (৪৮), রাবেয়া বেগম (৪০) ও সুরুজ মিয়া (৪৫)। বুলবুল বেগমের বাড়ি জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী টেকেরঘাট এলাকায়। সেখান থেকে সুনামগঞ্জ শহরে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে আসতে হয়। বুলবুল বেগম বলেন, তিনি সিলেটে যাবেন। সকালে বাস টার্মিনালে আসতে তাঁর খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা। এসে দেখেন বাস বন্ধ। সকাল থেকে বসে আছেন, যদি বাস ছাড়ে এই আশায়।
রাবেয়া বেগম ও সুরুজ মিয়ার বাড়ি একই উপজেলার বালিজুরি গ্রামে। সুরুজ মিয়া বলেন, ‘সমস্যা একটা অইছে, এইটার সমাধানও আছে। গাড়ি বন্ধ করল কেন? এভাবে কথায় কথায় বাস বন্ধ করে মানুষকে হয়রানি করা উচিত নয়।’
দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলা গ্রামের ফাহিম আহমদ (৪২) স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় যাবেন বলে জেলা শহরে এসেছিলেন। নয়টার বাসে যাওয়ার কথা। কিন্তু এসে দেখেন বাস বন্ধ। ফাহিম আহমদ বলেন, ‘বাস বন্ধ রাখা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার মিটমাট করা দরকার ছিল।’
পরিবহনশ্রমিকেরা জানান, সুনামগঞ্জে সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক বাস আছে। বাস টার্মিনালে জায়গা কম থাকায় লোকাল বাসই সংকুলান হয় না। এই বাসগুলো টার্মিনালে রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই। দীর্ঘদিন ধরে বাস টার্মিনালের পুকুর ভরাট ও সংস্কার করে জায়গা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে এলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে সড়কের পাশে বাসগুলো রাখা হয়। গতকাল বিকেলে টার্মিনালের পাশে ওয়েজখালী এলাকার সড়ক থেকে শ্যামলী, মামুন ও সাকিল পরিবহনের তিনটি বাস জব্দ করে পুলিশ লাইনসে নিয়ে রাখা হয়।
জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি বোরহান উদ্দিন বলেন, ভেতরে জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তাঁরা কিছু বাস সড়কের পাশে রাখেন। পুলিশ বাস জব্দ করার পর মামলা দেয় এবং শ্রমিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। সড়কে পুলিশের হয়রানি এখন একটা বড় সমস্যা।
জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া বলেন, ‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাস টার্মিনাল সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন বলেন জানিয়েছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছি। সুনামগঞ্জের মতো এত অনুন্নত বাস টার্মিনাল দেশের আর কোথাও আছে বলে জানা নেই।’
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমনটি হয়েছিল। আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হয়েছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply