বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, মাস্টারকার্ড ও প্রিয়শপ এর যৌথ উদ্যোগে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য কো-ব্র্যান্ডেড টাইটেনিয়াম ক্রেডিট কার্ড চালু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান: মির্জা ফখরুল আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ফরেন রেমিট্যান্স হাউসগুলোর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত দেশে প্রথমবারের মতো আর্মরশেল প্রটেকশনের ফোন নোট ৬০ এনেছে রিয়েলমি শেখ হাসিনাসহ সহযোগীদের বিচার দাবি ফারুক হাসানের বীরগঞ্জে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত সিলেটের গোয়াইনঘাট রাতারগুল হারাচ্ছে পর্যটন আকর্ষণ, কমছে পর্যটক আইএফএ ২০২৪ প্রদর্শনীতে অনারের চমক সচিবদের চাকরির তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ

ঋণ জালিয়াতিতে নাজুক শেয়ারবাজারের ৬ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৪৭৪ Time View

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ কোম্পানি নানা অনিয়ম ও ঋণ জালিয়াতির কারণে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি কোম্পানি অধিক খেলাপি, প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতির কারণে খাদের কিনারে অবস্থান করছে।

কোম্পানিগুলো হলো- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফাস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড ও প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড।

অভিযোগ রয়েছে, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছে কোম্পানিগুলো, যেখানে কোম্পানিগুলো উদ্যোক্তা পরিচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে। যার কারণে বিতরণকৃত ঋণের টাকা ফেরত আসছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জুন প্রান্তিক শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যামেলস রেটিং থেকে দেখা যায়, এই ছয়টি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৬,৯১৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যা মোট খেলাপির ৬৬.৯৬ শতাংশ।

বিআইএফসি : খেলাপির নাজুক অবস্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। চলতি বছরের জুন শেষে প্রতিষ্ঠানটির বিতরণ করা ৮১৪ কোটি ৪ লাখ টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ৭৭৪ কোটি ১২ লাখ টাকা অর্থাৎ ৯৫ শতাংশের বেশি খেলাপি। এর মধ্যে ৭৭২ কোটি টাকা আদায়ের সম্ভাবনা কম। কারণ, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই কাগজে ঋণ দিয়েছে।

সূত্রমতে, বিআইএফসির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর ((অব.) আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন সানম্যান গ্রুপসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠানটির বড় খেলাপিদের অন্তর্ভুক্ত।

চলতি বছরের শুরুতে অনিয়মের অভিযোগে আদালতের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত কমিটি মেজর মান্নান ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

ফারইস্ট ফাইন্যান্স : ফারইস্ট ফাইন্যান্স ২০১৭ সাল থেকে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দিতে পারছে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে বেরিয়ে এসেছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক অনিয়ম। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকিং নিয়ম লঙ্ঘন এবং জাল নথির মাধ্যমে তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এবং আরও কয়েকটি কোম্পানিকে এই ঋণ দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই পর্যবেক্ষণ দলের কাছে প্রতিষ্ঠানটির অডিট রিপোর্টে ব্যয় এবং অনিয়মিত লোন-রাইট-অফে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ে। এরসঙ্গে জড়িত ছিলেন, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ খালেক, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শান্তনু সাহা, সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান এবং সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফারইস্ট ফাইন্যান্স তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একক প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ঋণসীমার বাইরে গিয়ে ১১৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

যদিও নীতিমালায় রয়েছে, কোনো নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তার পেইড আপ ক্যাপিটলের এবং রিজার্ভের ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ অনুমোদন করা যায় না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণের সীমা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে এফএফআইএল ব্যবস্থাপনা ও বোর্ড নিয়ম লঙ্ঘন করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই ওয়েস্টমন্ড পাওয়ার বাংলাদেশকে ৫ কোটি টাকা এবং এসকেএম ট্রেডিং সেন্টারকে ২ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে।

চলতি বছরের জুন শেষে ফারইস্ট ফাইন্যান্স ৯৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৪৯ দশমিক ৮২ শতাংশ অর্থাৎ ৪৭৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা খেলাপি। মন্দ বা আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ ১৭১ কোটি টাকা। এছাড়া সাড়ে ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

ফারইস্ট ফাইন্যান্স প্রায় ৫০ কোটি টাকার ঋণ দেয় আলোচিত পি কে হালদারের তিন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে। এখন এই তিন প্রতিষ্ঠানকে দেয়া পুরো টাকা আদায় অযোগ্য।

ফাস ফাইন্যান্স : প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের খপ্পরে পড়া অরেকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (ফাস ফাইন্যান্স)।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত মোট এক হাজার ৯৩৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাঙ্কটি। এর মধ্যে এক হাজার ১৭২৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা অর্থাৎ প্রায় ৯০ শতাংশই খেলাপি। আদায় অযোগ্য এক হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। এছাড়া মন্দ ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৩০৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা কমিটির যোগসাজশে নানা বেনামে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল শাহরিয়ারের একক স্বাক্ষরে ৭০০ কোটি টাকা ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। যদিও এর বিপরীতে কোন মর্টগেজ রাখা হয়নি। এমন দুর্নীতির পেছনে ছিলেন আলোচিত পি কে হালদার। ফাস ফাইন্যান্সের এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের রহস্য উদঘাটনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি দিয়েছেন রাসেল শাহরিয়ার।

ফার্স্ট ফাইন্যান্স : ফার্স্ট ফাইন্যান্স দীর্ঘ দিন ধরে জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে। গত সাত বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেখা যায় চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ঋণ রয়েছে ৮৮২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির খেলাপি ঋণ রয়েছে ২৭৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এছাড়া মন্দ বা আদায় অযোগ্য ঋণ রয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির প্রভিশন ঘাটতিতে রয়েছে ৪৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

ফার্স্ট ফাইন্যান্স এখন লোকসানে রয়েছে। ২০২১ সালের জুন শেষে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। যদিও ছয় মাস আগে লোকসান ছিল ১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এছাড়া শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদ মূল্য রয়েছে ৭.২০ টাকা।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং : রেড জোনে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরেকটি হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ঋণের পরিমাণ হলো ৩৯২৯ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপি ঋণ রয়েছে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭৩.৭৯ শতাংশ। এছাড়া আদায় অযোগ্য ঋণের পরিমাণ হলো ২ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা।

এই প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মালিকদের ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতি হয়েছে। গত ১৪ নভেম্বর এই প্রতিষ্ঠানের ৩২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৭ মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বোর্ডের সদস্যরা কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে জাল রেকর্ডপত্র তৈরি করে তার মালিকদের ঋণ পেতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেন।

এই প্রতিষ্ঠানটির নামে এই পর্যন্ত মোট মামলা হয়েছে ১৫টি, মোট টাকার পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং মোট আসামি ৩৭ জন। তাদের মধ্যে এই পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১ জন আর বিদেশে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ৬৯ জনের।

প্রিমিয়ার লিজিং : খেলাপিতে থাকা আরেকটি প্রতিষ্ঠান হলো লেনদেন বন্ধ থাকা প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির জুন প্রান্তিক শেষে মোট ঋণের খেলাপির পরিমাণ হলো ৭৬৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট ঋণের প্রায় ৭৪ শতাংশ খেলাপি।

এই প্রতিষ্ঠানটি একদিকে বিতরণ করা ঋণ আদায় করতে পারছে না। অন্যদিকে পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বেসিক ব্যাংকে ১৯৪ কোটি টাকা আমানত রেখেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব অর্থ ফেরত পাচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গত বছরের সেপ্টেম্বরভিত্তিক অনিরীক্ষিত এক আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এখানে যথাযথ নীতিমালা অনুসরণ করেনি। পরিশোধের সক্ষমতা না থাকলেও খেলাপি ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS