মোঃ আব্দুল্লাহ হক, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রতিনিধি: কেরু অ্যান্ড কোম্পানি শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় দু’পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হওয়া এই সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন শ্রমিক ও বহিরাগত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে।
গত সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাত থেকেই কেরু ক্যাম্পাসজুড়ে নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। নেতৃত্ব সংকট ও নির্বাচন না হওয়ায় শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছিল। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সকালে ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্সের নেতৃত্বে পূর্বঘোষিত নির্বাচনের দাবিতে একটি শ্রমিক সমাবেশ আহ্বান করা হয়।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, কেরু অ্যান্ড কোম্পানির সাবেক সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ সবুজ এবং বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাব্বিক হাসান পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে চাইছেন।
সমাবেশ চলাকালে এমডি রাব্বিক হাসান আলোচনার জন্য সাবেক সভাপতি সবুজকে অফিসে ডাকেন। সবুজ তার সমর্থকদের নিয়ে অফিসে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ রয়েছে, বহিরাগত কয়েকজন ব্যক্তি অফিস কক্ষে ঢুকে চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক আব্দুল মোতালেবের (৫০) সঙ্গে তীব্র বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
অল্প সময়ের মধ্যেই দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে কেরু ক্যাম্পাস, প্রশাসনিক ভবনসহ আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে শ্রমিক আব্দুল মোতালেব (৫০), রবিউল ইসলাম (৪৮), বহিরাগত সালাউদ্দিন (৩৫), উজ্জ্বল (৪০), সাইফুল ইসলাম মকুল (৫০), হিরোক (৪৮), রাসেল উদ্দিন টগর (৫০) সহ আরও কয়েকজন রয়েছেন। আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রশাসন ও এমডির বক্তব্য, সংঘর্ষের খবর পেয়ে দর্শনা থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেনা সদস্যদের একটি দলও তাদের সঙ্গে অভিযানে যোগ দেয়। বর্তমানে পুরো কেরু ক্যাম্পাসজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দর্শনা থানার ওসি (তদন্ত) সুলতান মাহমুদ বলেন, “ঘটনার পরপরই আমরা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করেছি। সেনাবাহিনীও আমাদের সঙ্গে মাঠে রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত হলেও আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি।”
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, “দুই পক্ষকে একসাথে বসিয়ে নির্বাচন বিষয়ক আলোচনার জন্যই ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অফিসে ঢোকার পর এক পক্ষ হঠাৎ অপর পক্ষের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। আমাকে ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলা হচ্ছে— এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। শ্রম আইনে ইউনিয়ন নির্বাচনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের হস্তক্ষেপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।”
অবরুদ্ধ এমডি, নির্বাচন স্থগিত এদিকে, সংঘর্ষের পর তৈয়ব-প্রিন্স গ্রুপ কেরুর জেনারেল অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে পুনরায় নির্বাচন দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুরো কেরু এলাকা থমথমে পরিবেশের মধ্যে কাটে।
বেলা আড়াইটা পর্যন্ত কেরু চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান জানান, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বিবার্ষিক নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে।”
শ্রমিক ও স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, যেকোনো সময় আবারও বড় ধরনের সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply