বরিশাল: আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বকনিষ্ট কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনিকে হেয় প্রতিপন্ন করতে নানা ষড়যন্ত্রের ভেসে আসছে! সর্বশেষ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার আবেদন করেছেন এক তরুণী।
গতকাল সোমবার (১৬ মে) বরিশাল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেন ওই তরুণী। আদালতের বিচারক ইয়ারব হোসেন মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত শেষে ১৬ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
আদালতে দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ৪/৫ মাস পূর্বে ওয়ার্ড কাউন্সিলর রনির সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সদ্য এইচএসসি পাস করা ঐ তরুণী্য। এক পর্যায়ে রনি ওই তরুণীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়। বিবাহের প্রস্তাব দিলে ঘনিষ্ঠতা আরো বেড়ে যায় দুজনের। পরবর্তীতে তারা দুজনেই বিভিন্ন সময়ে নগরীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে দেখা করতো। এছাড়াও রনি প্রায় সময়ই তরুণীকে তার বাসায় যাওয়ার প্রস্তাব দিতে থাকে।
সবশেষ ঘটনার দিন (৭ মে) শনিবার বিকেল ৪ টায় রনি মোবাইল ফোন করে জরুরি কথা আছে বলে ওই তরুণীকে বাসায় ডেকে আনে। পর রনি তার নিজ বাসার ২য় তলায় নিয়ে বিবাহের মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরের দিন (৮ মে) রাত ৮ টায় পুনরায় তরুণীকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে বিয়ের কথা বলে একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরে ওই তরুণী বিয়ের জন্য আসামী রনিকে চাপ দিলে ১২ মে রাত টায় তার বাসায় ডেকে নিয়ে মারধর করে দেয়ালে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তার সাথে সম্পর্কের সকল এভিডেন্স ডিলেট করে দেয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে মুখ খুললে হত্যা করার হুমকি দেয়।
তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ সড়যন্ত্র এবং আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে এটি সম্পূর্ণ সাজানো হয়েছে বলে দাবী করেছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনি। তিনি বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল সমাজে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। আমি ঐ মেয়েকে চিনি না। আসলে আর কিছু দিন পর সিটি নির্বাচন। তাই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমার প্রতিপক্ষরা এই মিথ্যা মামলা দিয়ে নাটকটি সাজিয়েছে।’
রনি আরো বলেন, ‘আমার বাসার চারদিকে সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করা রয়েছে। প্রশাসন চাইলে সিসি টিভি ফুটেজ যাচাই-বাছাই করে দেখতে পারে, যে আমার বাসায় কবে কে আসছে আর গেছে।’ তিনি বলেন, ‘কিছু দিন ধরে কয়েকটি অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বিয়ের জন্য বলে। এ ঘটনায় আমি একটি সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছি।’
গত ১২ মে কাউনিয়া থানায় ডায়েরিটি করেন কাউন্সিলর রনি, যাহার নং-৪৭০। ওই ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১৩ এপ্রিল তার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে দুটি মোবাইল নাম্বার থেকে ফোন করে পরিচয় জানতে চায়। কাউন্সিলর রনি তার পরিচয় দিলে অপর প্রান্তে থাকা তরুণী জানান, তার বান্ধুবী রনিকে পছন্দ করেন এবং বিয়ে করতে চায়। বিয়ের বিষয়ে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান কাউন্সিলর রনি।
তারপর থেকে ওই তরুণীর বান্ধুবী রনিকে ধারাবাহিকভাবে ফোন দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে থাকেন বলেও সাধারন ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়।
এ ছাড়া কাউন্সিলর রনি আরো উল্লেখ করেন, ওই তরুণীর প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা সহ আত্মহত্যার হুমকি দেয়। ওই তরুণী তার মাকে দিয়েও রনির মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এত কিছুর পরেও রনি ওই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার ওয়াটস্এ্যাপ নাম্বার ও ব্যক্তিগত নাম্বারে এসএমএস এর মাধ্যমে অসম্মানযোগ্য কথা বলার পাশাপাশি হুমকি প্রদানের অভিযোগ করেন কাউন্সিলর রনি।
সর্বশেষ থানায় সাধারন ডায়েরি দায়েরের বিষয়ে জানতে পেরে ওই তরুণী গতকাল আদালতে মামলাটির আবেদন করেন।
কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনির বড় ভাই ও বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম জনি বলেন,‘আমাদের বাড়িতে এতোগুলো ক্যামেরা রয়েছে, এরকম একটি ঘটনা যদি আমাদের বাড়িয়ে হয়ে থাকে তাহলে প্রশাসন আমাদের ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ চেক করে তদন্ত করুক। তাহলেতো সব সত্য বেড়িয়ে আসবে।’কিন্তু এখানেই শেষ নয়, সর্বশেষ কাউন্সিলর রনির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হলো, যা সংগঠনের ইজ্জত নিয়ে টান দিয়েছে।
এক তরুণীকে হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের জেরে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করেছেন এমন একটি নেতিবাচক খবর সামনে আসে। বিষয়টি তদন্তধীন হলেও একটি মহল কোমড় বেধে মাঠে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সরগরম করে তোলে।
শত্রুভাবাপন্নদের অতিউৎসাহী হয়ে অপপ্রচার নিয়ে নানান প্রশ্নে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে সাধারন মানুষের মনে। অভিযোগ প্রমাণের আগে ছবি প্রকাশ-প্রকাশের ক্ষেত্রে আইনের বাধ্য বাধকতা থাকলেও গোষ্ঠীবদ্ধ চক্রটি তোয়াক্কা করছেনা। তবে কাউন্সিলর রনি যে ‘ধোয়াতুলসিপাতা’ আপাতত পুলিশী তদন্তের আগে সেটিও নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। পুলিশের দায়িত্বশীল মহল বিষয়টি নিয়ে তৎক্ষণাৎ কোনো প্রকার মন্তব্য না করলেও ষড়যন্ত্রের অংশ যে এখানেও বিদ্যমান তা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন।
এক্ষেত্রে স্থানীয় সুশীল সমাজের অভিমত, হ্যা কাউন্সিলর রনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন, হচ্ছেন।কিন্তু তরুণীর অভিযোগটিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি। অন্তত দায়িত্বশীল পুলিশ মহলের কাছে অনুরোধ থাকছে, রনি যদি এই ঘটনায় সম্পৃক্ত না থাকে বা তরুণী নিপিড়িত না হন, তাহলে নেপথ্য সিরিজ ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ এবার উন্মোচন করা হোক।
নগরীর ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন খান(৫০) পেশায় একজন আটো রিকশা চালক তার কাছে কাউন্সিল কেফায়েত হোসেন রনির সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিগত কয়েক বার অনেক কাউন্সিল দেখলাম তার মতো সৎ ও গরীপ মানুষের বন্ধু আগে কখনো কাউকে দেখি নাই। আমাদের ওয়ার্ডের প্রতিটা মানুষের বিপদে আপদে সব সময় কাছে পাওয়া যায় তাকে । প্রতিনিয়ত মানুষের জন্য কাজ করেন এমন ভালো মানুষ সমাজে পাওয়া খুব কষ্ট কর।
তিনি জানান, হঠাৎ করে শুনলাম এক তরুণী কাউন্সিলার এর বিরুদ্ধে ধষণের অভিযোগ করছে এটা আমাদের অনেকের বিশ্বাস হয়নি। কাউন্সিল সাহেব এমন কাজ করতে পারে এটা ওয়ার্ডের অধিক অংশ মানুষ বিশ্বাস করে না।
তবে আমরা শুনছি ধষনের অভিযোগের ওই তরুণীর ফোন এ কল রেকর্ড ও ভিডিও ছিল তাহলে আমাদের প্রশ্ন তরুণীর ফোন এর ভিডিও ও কল রেকর্ড ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই সব ভিডিও ও কল রেকর্ড ডকুমেন্ট উদ্ধার করা হোক আর তা না হলে কাউন্সিল সাহেব বাসার সিসি ক্যামেরা চেক করা হোক। তাহলে আসল রহস্য বেড়িয়ে আসবে বলে আমরা অধিক অংশ মানুষ বিশ্বাস করি।
তিনি আরো জানান, আমাদের ৫ নং ওয়ার্ডের অধিক অংশ মানুষের বাদী সুষ্ঠ তদন্ত অনুসারে যদি কাউন্সিল কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে আইনের আওতায় আনা হোক। আর যদি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঘটনা মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে যারা এমন সৎ সাহসী গরীপ দুঃখী মানুষের বন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ রইল করি ।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাইদ বলেন, দেশের সর্বকনিষ্ট তরুণ কাউন্সিলরকে দমাতে গোষ্ঠীবদ্ধ সন্ত্রাসের সিরিজ ষড়যন্ত্রের কাহিনী ৫নং ওয়ার্ডবাসী তথা গোটা বরিশালবাসী প্রত্যক্ষ করুক জানুক। কাউন্সিলার রনির মত স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি স্থানীয় ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হয়েও কাজ করতে নানা বাঁধা পেলেও যেন কেউ ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ না নেয়।
অন্যদিকে এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দাবী জানিয়েছেন ৫নং ওয়ার্ডের সর্বস্থরের বাসিন্দারা।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply