জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দলের প্রতীক অন্য কাউকে দিতে চাইলে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।
বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকালে কাকরাইলে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ঢাকা জেলা শাখার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুমকি দেন।
জিএম কাদের বলেন, ‘‘আমরা বর্তমান সরকারের অপকর্মের বিরোধিতা করছি। ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পক্ষে কথা বলছি। সরকারের জুলুম-নির্যাতনের ভয়ে আমরা থেমে যাবো না। এজন্যই জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। দলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যাতে আমরা আগামীতে নির্বাচন করতে না পারি। আমাদের প্রতীক নিয়ে চক্রান্ত হচ্ছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমাদের লাঙ্গল অন্য কাউকে দিতে চাইলে আমরা রাজপথে আন্দোলন করব। যারা ভূমিকা রাখতে পারবে, তারাই জাতীয় পার্টির প্রকৃত নেতা। সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকব। জনগণের জন্য জীবন দিতেও রাজি আছি। অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করবোই।’’
জিএম কাদের বলেন, ‘‘আমাদের দলীয় প্রতীক অন্যদের দেয়া হবে— এমন ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাক মেইল করেছিল আওয়ামী লীগ। এখন আবার সেই খেলা শুরু হয়েছে। বিএনপির জনসমর্থন বেশি তাই শেখ হাসিনা আরেকটি দল সাজিয়ে তাদের ধানের শীষ প্রতীক দেয়ার সাহস করেনি। বিএনপি মজলুম দল ছিল তাই সাধারণ মানুষ তাদের সমর্থন করেছে। এখন আমরাও মজলুম। আমরাও জনগণের সমর্থন অর্জন করতে পারব। এখন জাতীয় পার্টি ছাড়া সব দলই সরকারি দলের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। সরকার আমাদের পিছে লেগে রয়েছে। সুবিধা তো দূরের কথা, আমরা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করতে পারি না। জনগণের চোখে এখন আমরাই মজলুম।’’
‘‘শেখ হাসিনা সরকার আইনের মারপ্যাঁচে আমার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, এখন এই সরকারও আইনের মারপ্যাঁচে আমাকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। দেশীয় রাজনীতিবিদ ও বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে একটি সফল সম্মেলনে আমাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে। চেয়ারম্যান হিসেবে আমি যাকে নিয়োগ দিয়েছি, তাকে বাদ দেয়ার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্ষমতাও আছে। আওয়ামী লীগ সরকার যা করেছে, বর্তমান সরকারও তাই করছে, পরিবর্তন কী হলো? আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার বলা হয়, একই কাজ যদি বর্তমান সরকারও করে তাকে কী বলবেন?’’ প্রশ্ন রাখেন জিএম কাদের।
আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না জানিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, আমি তার প্রতিবাদ করেছি। একইভাবে এখন বলছি, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।’’
তিনি বলেন, ‘‘জুলাই গণহত্যায় অনেক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমার এবং আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মিথ্যা হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। আইন উপদেষ্টা ও আইজিপি বলেছেন— অনেক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। তাহলে যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না কেন? আইনের কথা হচ্ছে, একজন নিরপরাধকে বাঁচাতে প্রয়োজনে দশজন দোষীকে ছেড়ে দাও। কিন্তু এখন কী হচ্ছে? একজন দোষীকে শাস্তি দিতে দশজন নিরাপদ মানুষকে শাস্তি দিচ্ছে। বাড়িঘর ও অফিসে আগুন দিয়ে, মামলা হামলা করে আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’’
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘‘দেশের মানুষের মুখে হাসি নাই। দেশের মানুষ আতঙ্কের মাঝে বসবাস করছে। এখন যারা যা খুশি করতে পারে তারা তো নির্বাচন চাইবে না। নির্বাচন যত পিছিয়ে যাবে, ততই তাদের লাভ। জনগণের কথা তাদের বিবেচনায় নেই। নির্বাচন চাই না, এটা বলার আপনি কে? সবাইকে বলতে দিন, এটাই তো গণতন্ত্র। স্বৈরাচার হবেন? থাকতে পারবেন না। এদেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্র মেনে নেয় না।’’
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘জাতীয় পার্টির পরিষ্কার কোন রাজনীতি ছিল না। জাতীয় পার্টি কী করতে চায় তা নিয়ে নেতাকর্মী ও জনমনে বিভ্রান্তি ছিল। এখন থেকে আমরা জনগণের পক্ষের রাজনীতি করব। এতদিন জনগণ ভোট দিতে পারে নাই, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আমি সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলাম। মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য যে আন্দোলন হয়েছে, আমরা সর্বাত্মকভাবে তার সঙ্গে ছিলাম। ছাত্ররা যখন কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে, আমি তাকে বলেছিলাম— বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন। ছাত্রদের ওপর যখন জুলুম-নির্যাতন শুরু হয়েছিল, তখন সকলস্তরের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেয়। এখন যদি বলে শুধু তারাই আন্দোলন করেছে, তা সঠিক নয়। ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করেছিল কিন্ত সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সেই আন্দোলন সফলতা পেয়েছে। যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্ররা জীবন দিয়েছে, এখন সারাদেশে সকল স্তরে বৈষম্য চলছে। দোসর অপবাদ দিয়ে মানুষের ঘর, বাড়ি ও কলকারখানায় আগুন দেয়া হয়েছে।’’
জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ইঞ্জিঃ ইকবাল হোসেন তাপস, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা খলিলুর রহমান খলিল, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাদুর ইসলাম ইমতিয়াজ, রমজান আলী ভূঁইয়া, ঢাকা জেলা নেতা আশরাফুজ্জামান আশু, মশিউর রহমান তাপস, লাইজুল ইসলাম, ইউসুফ, শাহজাদা। উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা একেএম নুরুজ্জামান জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের, দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম, এনজিও বিষয়ক সম্পাদক মোড়ল জিয়াউর রহমান, যুগ্ম সাংগঠনিক শেখ সরোয়ার, যুগ্ম দফতর সমরেশ মন্ডল মানিক।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS