দেশের ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। গত জুন মাসের শেষে এই খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, যা ছিল ওই সময়ের মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। সে হিসাবে ৬ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৬ মাসে খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা বাড়লেও ব্যাংক খাতে এই সময়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়ছে বেশি। এর কারণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তিন বছর ধরে কঠোর তদারকির মধ্যে ছিল। আর ব্যাংকগুলোতে তদারকি শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, তহবিল–সংকটের কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন সেভাবে ঋণ বাড়ছে না। গত জুনের শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৭৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৭৩ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। আর ২০২২ সালের শেষে ঋণের স্থিতি ছিল ৭০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। ওই সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল ১৬ হাজার ৮২১ কোটি টাকা, যা তখনকার মোট ঋণের ২৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এর মানে গত দেড় বছরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণের তুলনায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
যথাযথ তদারকির অভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত বেশ আগে থেকেই খারাপ অবস্থায় ছিল। তবে আমানতকারী ব্যক্তিদের অর্থ ফেরত দিতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে ২০১৯ সালে পিপলস লিজিং অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখনই পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়। এর মধ্যে প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) দখল করা বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফিন্যান্স ও আভিভা ফিন্যান্সের নানা জালিয়াতি সামনে চলে আসে। এসব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার কারণে পুরো খাতের প্রতি গ্রাহকের আস্থা কমে যায়। তাঁদের আস্থা বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্নভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনের শেষে আর্থিক খাতে আদায়ের অযোগ্য বা মন্দ ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ২৮ দশমিক ২২ শতাংশ। গত মার্চে আদায় অযোগ্য ঋণ ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট ঋণের ২৬ দশমিক ৯১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, পি কে হালদার–সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ঋণের হারই সর্বোচ্চ, ৯৯ শতাংশ বা ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোয় খেলাপি ঋণের হার ও পরিমাণ এ রকম: ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৯৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ বা ৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা; এফএএস ফিন্যান্স ৮৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা ১ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা এবং আভিভা ফিন্যান্স ৭১ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ১ হাজার ৯০২ কোটি টাকা।
এর বাইরে ফারইস্ট ফিন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৯৪ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা জিএসপি ফিন্যান্সের ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ফার্স্ট ফিন্যান্সের ৮৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, সিভিসি ফিন্যান্সের ৫৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, মেরিডিয়ান ফিন্যান্সের ৫৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, আইআইডিএফসির ৫৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ, হজ ফিন্যান্সের ৫৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ফিনিক্স ফিন্যান্সের ৫৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ন্যাশনাল ফিন্যান্সের ৫৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ, বে লিজিংয়ের ৫২ দশমিক ৮২ শতাংশ ও উত্তরা ফিন্যান্সের ৫০ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply