বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১০ অপরাহ্ন

আশ্রয়ণ-২: ৫৯ বেদে পরিবারের স্থায়ী ঘর নিয়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০২২

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ‘আমরা যদি স্থায়ী আশ্রয় পাই, আমরা আমাদের দুই ছেলেকে স্কুলে পাঠাব’- কথাটি বলছিলেন বেদে নারী রঙ্গিলা।

বেদে হলো যাযাবরের মতো একটি নৃ-তাত্ত্বিক সম্প্রদায়। দেশের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি এই বেদেরা।

রঙ্গিলা দুই ছেলের মা- আকাশ (৫) ও রবিউল(৩)। তার স্বামী আলাউদ্দিন বানর ও সাপের খেলা দেখায়।

চার সদস্যের এই বেদে পরিবারটি বর্তমানে অন্যান্য বেদে পরিবারের মতো ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বড়বাজার ইউনিয়নের বাদেদিহি গ্রামে একটি ‘ঝুপড়ি ঘরে’ (বেদেদের ছোট ও অস্থায়ী ঐতিহ্যবাহী ঘর) বাস করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে উপহার হিসেবে তার পরিবার দুই ডেসিমেল জমিসহ একটি স্থায়ী বাড়ি পেতে যাচ্ছে বলে জানান রঙ্গিলা।

তার পরিবারের মতো মোট ৫৯টি বেদে পরিবার কালীগঞ্জের বড়বাজার ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মাজদিয়া বাওড় সংলগ্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাড়ি পেতে যাচ্ছে।

এর মধ্যে ৩১টি পরিবার বাদেডিহি গ্রামের এবং ২৮টি পরিবার কালীগঞ্জ পৌরসভার অন্তর্গত কাশিপুর গ্রামের।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২ একর জমিতে বাড়ি নির্মাণের কাজ অব্যাহত থাকায় বেদে পরিবারগুলো এখন উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখছে।

রঙ্গিলা বলেন,‘আমাদের কোনো মর্যাদা বা জীবনের কোনো আশা নেই।’

তার ও তার স্বামীর নামমাত্র আয়ে তার পরিবার কোনোরকমে বেঁচে আছে বলে জানায় রঙ্গিলা। সে প্রতিদিন তাবিজ বিক্রি করে, দাঁতের পোকা বের করে, শিঙ্গা লাগিয়ে এবং অন্যান্য কাজ করে ৫-৬ কেজি চাল রোজগার করে। শিঙ্গা হলো মহিষের শিং, যা বেদে নারীরা অসুস্থ রোগীর রক্ত বের করতে ব্যবহার করেন।

তিনি আরও জানান, তার স্বামী বানর ও সাপের খেলা দেখিয়ে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ টাকা আয় করতে পারে।

বাদেডিহি গ্রামে স্বামী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে বসবাসকারী আরেক বেদে নারী জোবাইদা (৩২) বলেন, স্থায়ী বাড়ি থাকলে তাদের যাযাবর জীবনযাপন করতে হবে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা কখনই আমাদের নিজস্ব জমিতে পাকা বাড়ি করার স্বপ্ন দেখিনি। আমাদের স্থায়ী ঠিকানা থাকলে কেউ আর অবহেলা করতে পারবে না। এখন আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলব।’

জোবাইদা ও তার স্বামী আদল সরদারের সংসারে চার ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলের বয়স ১২ বছরের বেশি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই সনাতন পেশা বেদে থেকে বেরিয়ে এসেছেন। জোবাইদা এখন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। আর তার স্বামী ঝাল মুড়ি বিক্রেতা, যিনি সাধারণত দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় করেন।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া জেরিন জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের কবল থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ২ একর খাস জমি উদ্ধারের পর তারা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের বাড়ি দেয়ার জন্য আমরা যথাযথ যাচাই-বাছাই করে ৫৯টি বেদে পরিবারকে বেছে নিয়েছি। আশা করছি তাদের পরবর্তী প্রজন্ম একটি সুন্দর জায়গায় উন্নত জীবন পাবে।’

ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন,বেদে সম্প্রদায় যাতে সহজে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সেজন্য বাওড়ের (এক ধরনের জলাশয়) তীরে আবাসন স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এটি বেদে সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য একটি সুন্দর আবাস হবে। যদি চায়,তারা সেখানে সবজি চাষ করতে পারবে এবং গৃহপালিত পশু পালন করতে পারবে।’

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় ধাপে গৃহহীন পরিবারের জন্য এখন প্রায় ৬৫ হাজার ৪৭৪টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।

তিনি বলেন,বাড়িগুলোকে আরও টেকসই করতে প্রতিটি বাড়ির জন্য খরচ ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পকে শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মডেল হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন,‘একজন মানুষের জীবনযাত্রার মানে অভাবনীয় উন্নতি হয় স্থায়ী বাড়ি পাওয়ার পর। এটি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আটটি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।’

এর আগে ২০২১ সালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম দুই দফায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে দুই দশমিক ৩ শতাংশ জমিসহ মোট ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি পাকা ঘর দেয়া হয়েছিল।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS