নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের পূর্বে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সব ধরনের তামাকজাত পণ্যের কর ও মূল্য উচ্চহারে বাড়ানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ ২০২৪) উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন কালিগঞ্জের সর্বস্তরের জনগণ।
বাংলাদেশে তামাকের ব্যবহার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তামাকপণ্যের বিদ্যমান কর ব্যবস্থা সংস্কার করলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.১% থেকে হ্রাস পেয়ে ১৩.৮০% হবে। প্রায় ১৫ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত হবে এবং প্রায় ১০ লক্ষ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ৫ লক্ষ ৩৭ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক এবং ৫ লক্ষ ৪০ হাজার তরুণ জনগোষ্ঠির অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। অন্যান্য স্তরের তুলনায় নিম্ন স্তরে সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে স্বল্প আয়ের ধূমপায়ীকে ধূমপান ছাড়তে উৎসাহিত করবে এবং উচ্চ স্তরগুলোতে সিগারেটের দাম বাড়লে ধূমপায়ীদের সস্তা ব্রান্ড বেছে নেয়ার আগ্রহ কমবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশকৃত সুনির্দিষ্ট কর প্রবর্তনের মাধ্যমে কর পদ্ধতির সংস্কার (যা বিশ্বের অধিকাংশ দেশে প্রচলিত রয়েছে) সিগারেট করকাঠামোর কার্যকারিতাকে আরো শক্তিশালী করবে।
ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র (ডর্প) এর সহযোগিতায় ডর্প যুব ফোরাম, মা-সংসদ ও স্থানীয় সুশীল সমাজ আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাক-কর ও দাম বৃদ্ধির জন্য তিনটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এগুলো হল –

১। সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫%) মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা অর্থাৎ, নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৩৭.৪০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; মধ্যম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৮০ টাকা নির্ধারণ করে ৫২.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৮৪.৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে ১১০.৫০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
২। ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন করভারসহ (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫%) সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ (সম্পূরক) শুল্ক প্রচলন করা অর্থাৎ, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা নির্ধারণ করে ১১.২৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৯.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
৩। জর্দা এবং গুলের কর ও দাম বৃদ্ধিসহ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ শুল্ক (সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬০%) প্রচলন করা অর্থাৎ, প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা নির্ধারণ করে ৩৩.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ; এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ১৮.০০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা।
মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি আশরাফুল আলম আইয়ুব বলেন, “২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যে করারোপে উল্লিখিত প্রস্তাবসমূহ বাস্তবায়ন করা হলে কেবল এই খাত থেকেই প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি।”
কালিগঞ্জ পৌরসভা কমিশনার কান্তা ভূঁইয়া বলেন, “তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি একটি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত পদ্ধতি। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান তামাক কর কাঠামো তামাক ব্যবহার কমাতে কার্যকর প্রভাব রাখতে পারছে না। কার্যকরভাবে করারোপের অভাবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। তাই তামাক কর বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।”

কালিগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান আরমান মন্তব্য করেন সিগারেটের চারটি স্তর থাকার ফলে সিগারেট ব্যবহারকারী সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে তুলনামূলকভাবে কমদামি সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
ডর্প যুব ফোরাম সদস্য মোহাম্মদ রানা বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে তামাকজাত পণ্যে কার্যকরভাবে কর বৃদ্ধি করা”।
ডর্প মা-সংসদ স্পিকার জান্নাতুন নাহার মন্তব্য করেন তরুণদের ধূমপান থেকে বিরত রাখতে কম দামি বিড়ি ও সিগারেটের কর-মূল্য ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে যাতে এগুলো আর সুলভ না থাকে।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস এর প্রোগ্রামস ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়া বলেন, “যেহেতু বর্তমান কাঠামোতে কর বৃদ্ধি করেও নিম্ন স্তরের সিগারেট ও বিড়ির দাম সুলভ রয়ে যাচ্ছে তাই নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকরী কর আরোপ করার। সাধারণ জনগণ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়াতে হবে যাতে তা জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়।”
উল্লেখ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ৩.৪ এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনায় তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর। এই লক্ষ্য অর্জনে এবং একইসাথে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম কার্যকর উপায় তামাকপণ্যে কর উচ্চহারে বৃদ্ধি ।
ডর্প বিগত ১৯৮৭ সাল থেকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর সাথে জড়িত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রবর্তনকারী সংস্থা হিসাবে সমধিক পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় ডর্প বর্তমানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও তামাক কর বৃদ্ধি বিষয়ে কাজ করছে এবং সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply