মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩০ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
মাধবপুর থানার ওসি শহিদ উল্ল্যা জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ নির্বাচিত ইউনিয়ন ব্যাংকে রয়েছে আকর্ষণীয় বিশেষ আমানত প্রকল্প ভিভো ভি৬০ লাইট: ছবি এখন শিল্পের ক্যানভাস রবি এলিট সদস্যদের ফ্যাশন অভিজ্ঞতা উন্নত করতে এপেক্স ফুটওয়্যারের সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুয়াডাঙ্গায় বিএনপি-সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ ১০৫ জনের জামায়াতে যোগদান সেমস-গ্লোবালের আয়োজনে ১৩–১৫ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ৩০তম বিল্ড সিরিজ, ২৭তম পাওয়ার সিরিজ ও ওয়াটার এক্সপো ২০২৫ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব সংবিধানের চার মূলনীতি সুরক্ষা ও দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম কালিয়া ভিডব্লিউবি কার্ড বিতরণে ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ, ইউপি সদস্যের স্ত্রীও খাচ্ছেন দুস্থদের চাউল রাঙামাটিতে এসআইসিআইপি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সমাপ্তি

দেশি মুরগি পুষে অভাব ঘুচিয়েছেন জয়পুরহাটের দেড় শতাধিক নারী

আব্দুল্লাহ হেল বাকী
  • আপডেট : বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৩

জয়পুরহাট প্রতিনিধি: বছর কয়েক আগে স্বামীকে হারিয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে সংকটে পড়েন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার রুকিন্দিপুর ইউনিয়নের মুনইল গ্রামের সুফিয়া বেগম। অভাব অনটনের সংসারে নিজ বাড়িতে দু-একটি দেশি হাঁস-মুরগি পুষে আর স্বামীর রেখে যাওয়ার টং দোকানে পান-বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করে কোনো মতে সংসার চালাতেন তিনি। কিন্তু তারপরও সংসারে অভাব লেগেই থাকত। ঠিক সেই সময় বেসরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান জেআরডিএম তার পাশে দাঁড়ায়। তাদের সহায়তায় দেশি মুরগির খামার করেন তিনি। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।

জানা গেছে, অভাব দূর করতে জেআরডিএম-এর কাছ থেকে দেশি মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ নেন সুফিয়া বেগম। প্রশিক্ষণ শেষ হলে প্রতিষ্ঠানটি তাকে বিনামূল্যে এক হাজার দেশি মুরগির বাচ্চা দেয়। সেসব বাচ্চা লালন-পালন করে বাজারে বিক্রি করে অভাব দূর করেছেন। সেই টাকা দিয়ে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তার খামারের দেশি মুরগির ডিম ও মাংসের মুরগি বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। এছাড়া তিনি লাভের টাকা দিয়ে নেটে ঘেরা টিনশেড ঘর করে বড় পরিসরে দেশি মুরগি লালন-পালনের ব্যবস্থা করেছেন। এখন তার শেডে দুই হাজারের বেশি মুরগির বাচ্চা আছে।

সুফিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারে অভাব লেগেই থাকত। আর স্বামীর রেখে যাওয়া ছোট্ট একটি দোকান ছিল। সেখানে পান-বিড়ি ও সিগারেট বিক্রি করে যা আয় রোজগার করতাম, তা দিয়ে দুই বেলা ঠিকমতো খেতেও পারতাম না। ফলে বিভিন্ন ধার-দেনায় ডুবে থাকতাম। তার ওপর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ত। এমন অবস্থায় আমার সংসারের কষ্ট দেখে জেআরডিএম-এর স্যারেরা আমাকে
ডেকে নিয়ে যান। পরে তাদের অফিসে নিয়ে প্রশিক্ষণ ও বিনামূল্যে মুরগির বাচ্চা দেন। সেই বাচ্চা পুষে বাজারে বিক্রি করে সব ধার-দেনা পরিশোধ করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তারা সুখে আছে, আমিও সুখে আছি।

তিনি আরও বলেন, ব্রয়লার, সোনালি ও কক মুরগি পালনের চেয়ে দেশি মুরগি পোষায় খরচ অনেক কম। কারণ, দেশি মুরগির খাবারের জন্য চিন্তা করতে হয় না। এ মুরগি বাড়ির উঠানের আশপাশে ঘাস ও পোকামাকড় খেয়ে থাকে। তাছাড়া এ জাতের মুরগির খুব বেশি রোগ হয় না। ফলে আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা কম থাকে এবং লাভ বেশি হয়।

এদিকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার আউয়াল গাড়ি গ্রামের বাসিন্দা সাবিনা বেগমের সংসারে ছয় সদস্য। একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি স্বামী মোতালেব হোসেন। ফলে অধিকাংশ সময়ই তাদের অভাব অনটনের মধ্যে কাটাতে হতো। তবে বর্তমানে দেশি মুরগি পোষায় সংসারে এসেছে সচ্ছলতা, পাশাপাশি দুই মেয়েকে পড়াচ্ছেন স্কুল-কলেজে।

শুধু সাবিনা বেগমই নন, দেশি মুরগি পুষে এ গ্রামের মৌমিতা, মেরিনা, রতœা, আতাউর রহমানসহ ২০ জনেরও বেশি অসচ্ছল নারী-পুরুষ আজ সফল খামারির দলে। সোনালি মুরগির রাজধানী খ্যাত জয়পুরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় এখন দেশি মুরগি পোষার ওপর জোর দেওয়ার কারণ হিসেবে খামারিরা বলছেন, অন্যান্য জাতের মুরগির চেয়ে দেশি মুরগির রোগ বালাই কম হয়। এছাড়া খাদ্য ও ওষুধ লাগে না বললেই চলে। আবার খোলা জায়গায়
ছেড়ে দিয়ে পালা যায়। বিক্রিও হয় বেশি দামে।

সুফিয়ার সাফল্য দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে দেশি মুরগি পুষে সচ্ছল হয়েছেন। স্বল্প পুঁজি ও নামমাত্র শ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় জেলার বেকার নারী-পুরুষ দেশি মুরগি পালন করছেন। এতে করে বাড়ছে কর্মসংস্থান ও দেশি
পদ্ধতিতে উন্নত জাতের দেশি মুরগি পালন।

খামারি কামরুজ্জামান জুয়েল বলেন, সুফিয়ার এমন সাফল্য দেখে আমিও জেআরডিএম-এর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশি মুরগি পালন করছি। আগে বিদেশি মুরগি পুষতাম। বিদেশি মুরগি পুষতে বেশি খাবার লাগত, রোগবালাই লেগেই থাকত আবার বাজারে বিক্রি করেও লাভ হতো না। যার কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। এখন দেশি মুরগি পালন করে লাভ করতে পারছি।

এ বিষয়ে জেআরডিএম-এর নির্বাহী পরিচালক রাজিয়া সুলতানা বলেন, স্বাদে ও গুণগতমান বেশি হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে দেশি মুরগি ও ডিমের চাহিদা। তবে কমে গেছে দেশি মুরগি পালন। তাই পিকেএসএফের আর্থিক ও জেআরডিএম-এর সার্বিক সহযোগিতায় কৃষি সংগঠনের মাধ্যমে সমাজের অবহেলিত নারী-পুরুষদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশি মুরগি পালনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে। এছাড়া এ জেলায় আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দেড় শতাধিক খামারিকে মুরগির বাচ্চাসহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে জেলা পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা সাবিনা চৌধুরী বলেন, শহর কেন্দ্রিক নারীরা আজ সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে রয়েছে। সেই সঙ্গে জয়পুরহাটের গ্রামীণ নারীরাও পিছিয়ে নেই। এক সময় পাড়া মহল্লায় অনেক গরিব পরিবার দেখা গেলেও বর্তমানে দিন বদলের হাওয়ায় তারাও খুঁজে পেয়েছেন সচ্ছলতা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS