শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের লভ্যাংশ ঘোষণা ক্রাফটসম্যান ফুটওয়্যারের কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ‘আন্তর্জাতিক’ ঘোষণার প্রজ্ঞাপন স্থগিত তৃতীয় প্রান্তিক প্রকাশ ঢাকা ব্যাংকের মানবতন্ত্র চর্চা ও কবিদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন অধ্যাপক ড. মু. নজরুল ইসলাম তামিজী হবিগঞ্জের যুব সমাজকে মাদকের থাবা থেকে রক্ষায় কাজ করছে পুলিশ, পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৭ দিনে গ্রেপ্তার ১৫১ বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে ২ বিভাগে ক্যারিয়ার কার্নিভাল ২০২৫: কর্মসংস্থানের পথে কক্সবাজারের তরুণদের নতুন যাত্রা কালিয়ায় শ্রমিকের টাকা নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগ ব্রীজ নির্মাণ কোম্পানি ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে

আজ ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস

লিটন পাঠান
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৩

হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের মাধবপুরে আজ ৪ এপ্রিল ঐতিহাসিক তেলিয়াপাড়া দিবস ১৯৭১ সালের ওই দিনে তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় মুক্তিযুদ্ধের তখনকার সময়ের বিদ্যমান নানাদিক এবং সম্মিলিত কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রথম সামরিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ২৭ জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে এ বৈঠকেই দেশকে শত্রুমুক্ত করার শপথ ও রণকৌশল গ্রহণ করা হয়। সেদিনের এ সভায় উপস্থিত ছিলেন কর্নেল (অব:) এম এ জি ওসমানী, লে: কর্নেল সালাউদ্দিন মোঃ রেজা, লে: কর্নেল আব্দুর রব, মেজর কে এম শফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর (অব:) কাজী নুরুজ্জামান, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী, মেজর জিয়াউর রহমান, ক্যাপ্টেন এ এস এম নাসিম, লে: সৈয়দ মোঃ ইব্রাহীম, লে: হেলাল মোর্শেদ খান, লে: মাহবুব, লে: নাসির উদ্দিন, লে: আনিস, লে: মান্নান, লে: সেলিম প্রমুখ।

বেসামরিক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সেদিনের বৈঠকে কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী এমএনএ, মোস্তফা আলী এমএনএ,মৌলানা আসাদ আলী এমএনএ, এনামুল হক মোস্তাফা শহীদ এমপিএ, ডঃ আকবর আলী খান, মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী, দুলাল চৌধুরী, দেওয়ান আশরাফ আলী, শাহ মোঃ মুসলিম, কাজী কবির উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী পাঠান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) বিগ্রেডিয়ার পাণ্ডে, ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ সায়গল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) কাজী রকিব উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন

ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাব মেটাতে বৈঠকে অবিলম্বে ভারতের শরণাপন্ন হওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিদেশী সামরিক সাহায্যের জন্য রাজনীতিবিদদের সমন্বয়ে শীঘ্র একটি স্বাধীন সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা ও আবশ্যকতা অনুভব করেন বৈঠকে উপস্থিত সকলে। কিন্তু সরকার গঠনের অপেক্ষায় কালক্ষেপণ না করে বাস্তবতার নিরিখে সমস্ত বিদ্রোহী ইউনিট নিয়ে সম্মিলিত মুক্তিফৌজ গঠন করে কর্নেল ওসমানীকে এর পরিচালনা ভার অর্পণ করা হয়।

এর আগে ২৯ মার্চ মেজর খালেদ মোশাররফ ৪, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে তেলিয়াপাড়ায় আসেন এবং এখানে ম্যানেজার বাংলোর পাশে প্রথম সদর দপ্তর স্থাপন করেন। ১ এপ্রিল মেজর কে এম শফিউল্লাহ কিশোরগঞ্জ থেকে ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট নিয়ে তেলিয়াপাড়া এসে এখানে ২ ও ৪ নং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যৌথ সদর দপ্তর স্থাপন করেন ৪ এপ্রিলর বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনকে ৪ টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। মেজর শফিউল্লাহ তেলিয়াপাড়া চা বাগানে তার হেড কোয়ার্টার স্থাপন করেন। এখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা হতো এবং এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলা হয় যাতে করে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র চালনা ও যুদ্ধ কৌশল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণাটুকু অর্জন করতে পারতেন। 

কে এম শফিউল্লাহর নির্দেশনা ও নেতৃত্বে এতদঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অন্তত ২০টি সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ক্রমাগত অবনতিশীল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে কৌশলগত কারণে ১৯৭১ সালের ১৯ মে মেজর কেএম শফিউল্লাহ এখান থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এ সময় ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর ২, ৩ ও ৪ নং সেক্টরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোর পাশে বুলেট আকৃতির মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে এ স্মৃতিসৌধের উদ্বোধন করেন তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান কে এম শফিউল্লাহ। এই স্মৃতিসৌধের প্রবেশপথে রয়েছে দুটি ফলক। ফলকে প্রখ্যাত কবি শামসুর রাহমানের বিখ্যাত স্বাধীনতা তুমি কবিতার পঙক্তিমালা দক্ষিণ দিকের ফলকটি সগৌরবে জানান, দেয় এটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্মরণে নির্মিত। এই স্মৃতি ফলকে রাজনৈতিক নেতা, সাবেক সেনা ও সরকারী কর্মকর্তা এবং ৩৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা।

প্রতিবছর ৪ এপ্রিল মাধবপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নানা অনষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এই দিনটিকে জাতীয়ভাবে তেলিয়াপাড়া দিবস ঘোষণার দাবী বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত গৌরবোজ্জ্বল স্থান হওয়া স্বত্বেও এটি সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগও নেই। ২০১১ সালের ৭ মে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স তৈরির ঘোষণা দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত এর বাস্তবায়নের দৃশ্যমান কোনও আলামত নেই

সেদিনের সমাবেশে তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের এমপি এনামুল হক মোস্তফা শহীদ এই ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর মধ্যেই ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন তেলিয়াপাড়া চা বাগান কর্তৃপক্ষ স্মৃতিসৌধটিকে পৃথক করে ঐতিহাসিক স্মৃতিসমৃদ্ধ ম্যানেজার বাংলোটিকে আলাদা করে ফেলায় স্মৃতিসৌধে আসা দর্শনার্থীরা ইচ্ছা করলেও বাংলোটিকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ঐতিহাসিকভাবে অনেক বেশী তাৎপর্যপূর্ণ তেলিয়াপাড়া চা বাগানে দর্শনার্থীদের বসার জন্য কয়েকটি পাকা বেঞ্চ তৈরি করা ছাড়া তেমন কোনও সুযোগ সুবিধাও নিশ্চিত করা হয়নি আজ পর্যন্ত

২০১১ সালের ঘোষণা অনুযায়ী আজ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আহসান জানান, দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড তেলিয়াপাড়া স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাবে। সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা ও শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া মাহফিলের আয়োজনও থাকবে। তবে রমজান মাস হওয়ায় আয়োজনের পরিসর সীমিত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (ইতিহাস সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রকাশনা) শবনম মুস্তারী রিক্তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘তিনি মূলত পাবলিকেশনের বিষয়টা দেখভাল করেন

তেলিয়াপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ বিষয়ে তার কোনোকিছু জানা নেই। এ বিষয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে তথ্য সংগ্রহ করে দিতে পারবেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS