শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০০ অপরাহ্ন

“অপ্রত্যাশিত দুর্যোগে বেশি ঝুঁকিতে কিডনি রোগী”

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ৪ মার্চ, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগ একটি ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যা, কিডনি রোগের ব্যাপক প্রকোপ, এ রোগের মারাত্মক পরিণতি, অতিরিক্ত চিকিৎসার খরচ ও আকস্মিক দুর্যোগকালীন সময়ে জটিল কিডনি রোগীসহ সব ধরনের রোগীদের জরুরী চিকিৎসায় সমন্বিত উদ্যোগ সহ ‘‘ইমারজেন্সি রেসপন্ডস প্লান” থাকা খুবই জরুরী বলে এই গোলটেবিল বৈঠকে উল্লেখ করেন বক্তারা।

‘‘বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৩’’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে দেশের শীর্ষস্থানীয় কিডনি বিষয়ক বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং এন্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস), ০৪ মার্চ (শনিবার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পস এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম এ সামাদ। তিনি তার মূল প্রবন্ধে বলেন, কিডনি রোগী দুর্যোগের সময়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে। আমরা জানি কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। সারা বিশ্বে ৮৫ কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে ২ কোটিরও অধিক কিডনি রোগী। প্রতি বছর ৩৫ থেকে ৪০ হাজার লোক কিডনি সম্পূর্ণ বিকলের শিকার বাংলাদেশে। আরও ১৫ থেকে ২০ হাজার আকস্মিক কিডনি বিকল হয়। এদের বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন প্রয়োজন হয়। কিডনি বিকলের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুর বিধায় শতকরা ১০ জন এর ব্যয় সংকুলান করতে পারে। চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে নিংস্ব হয়ে যায়। সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন বীমার আওতায় আনতে হবে।

এবার আসি দুর্যোগের সময় কিডনি রোগীদের বিড়ম্বনার কথায়, আমরা জানি কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেলে বেচেঁ থাকার জন্য প্রয়োজন ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন। ডায়ালাইসিস সাধারনত সপ্তাহে ২-৩ দিন করতে হয়। দুর্যোগের কারণে ডায়ালাইসিস বন্ধ হলে মৃত্যু এগিয়ে আসবে। কিডনি সংযোজনের রোগীদের নিয়মিত ঔষধ খেতে হবে, ঔষধ নিয়মিত না খেলে সংযোজিত কিডনি বাতিল হয়ে যেতে পারে। আবার দুর্যোগের সময়ে আঘাত, রক্তক্ষরণ, দুর্যোগ পরবর্তি ডায়রিয়া ইনফেকশন এসব কারনে তীব্র মাত্রার আকস্মিক কিডনি বিকল হতে পারে। যার জন্য ডায়ালাইসিস প্রয়োজন। অল্প মাত্রার দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার অভাবে সম্পূর্ণ কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। তখন ডায়ালাইসিসসের প্রয়োজন হবে। তাই কিডনি রোগী দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে ।

তিনি আরো বলেন, দুর্যোগের মোকাবেলায় কিডনি রোগীদের নিজ পূর্ব প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরী যেমন: প্রয়োজনীয় ঔষধসহ জরুরী “কীটবক্স” প্রস্তুত রাখা, বিকল্প ডায়ালাইসিস সেন্টার স¤পর্কে আগে থেকে ধারণা নিয়ে রাখা, সাহায্যকারী নেটওয়ার্ক তৈরী করে রাখা, যেমন-বন্ধু, আত্মীয়, প্রতিবেশীদের সহায়তা। ডায়ালাইসিস পেতে বিলম্ব হলে সাময়িক খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, যেমনÑপানি কম, মাছ-মাংস কম, পটাশিয়াম যুক্ত খাবার যেমন-ফল ও সবজি পরিহার।

গোল টেবিল বৈঠকে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ মিজানুর রহমান, মহাপরিচালক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহাম্মেদ খান, সাবেক মহাপরিচালক, ফায়ারসার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। স্থপতি ইকবাল হাবিব, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা। ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী, অধ্যাপক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট)। অধ্যাপক ডাঃ হারুন-উর-রশিদ, সভাপতি, কিডনি ফাউন্ডেশন। অধ্যাপক ডাঃ নিজামউদ্দিন চৌধুরী, সভাপতি, বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন। অধ্যাপক ডাঃ মোঃ কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশের বিশিষ্ঠ কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিকেডি এন্ড ইউরোলজি হাসপাতাল। ড. আব্দুল লতিফ হেলালী, প্রকল্প পরিচালক, আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, কিংবদন্তী ক্রিকেটার ও সাবেক অধিনায়ক, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। অধ্যাপক ডাঃ হারিসুল হক, অধ্যাপক, হৃদরোগ বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় প্রমুখ।

দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা অধিদপ্তর এর মহা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সম্প্রতি তুরস্কের ভূমিকম্প একটি সতর্ক বাণী যা সচেতন হওয়ার জন্য যথেষ্ট, তিনি বলেন সরকার অবশ্যই সচেতন রয়েছে এবং প্রয়োজনের নিরীখে সম্ভাব্য সামর্থ্য অনুযায়ী সব ব্যাবস্থা গ্রহনের প্রস্তুতি গ্রহন করছে।


কিডনি রোগকে ‘নিরব দুর্যোগ’ বলে উল্লেখ করে কিডনি ফাউন্ডেশন এর সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ হারুন উর রশিদ বলেন, এ রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা ব্যায়ের আধিক্য বিবেচনায় প্রতিরোধ কেই একমাত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করতে হবে।


স্থপতি ইকবাল হাবিব পর্যায়ক্রমে সব নগরীর সব বড়বড় স্থাপনাকে ভূমিকম্প সহনীয় কিনা তা পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।


অধ্যাপক ডাঃ হারিসুল হক বলেন, অনাকাঙ্খিত স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে নীতি নির্ধারকদের নতুন করে ভাবতে হবে। অসংক্রামক ব্যাধিসমূহ প্রতিরোধ করার পাশাপাশি নতুন রোগ শনাক্তকরণ এবং কিডনি রোগসহ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত সকলকে নিয়ে সমন্বিত কর্মসূচী গ্রহন করতে হবে। সরকারের উচিৎ হবে আপৎকালীন সময়ে এসব রোগীকে চিকিৎসা পৌঁছে দেয়ার প্ল্যান প্রনয়ন এবং রোগীদের উচিৎ হবে তাদের হাতের কাছে সর্বদা একটা কিট সংরক্ষন করা যাতে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্রের পাশাপাশি খাবারও রাখা যায়।


ক্যাম্পস এর নির্বাহী পরিচালক রেজওয়ান সালেহীন বলেন, ক্যাম্পস কিডনি রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত সচেতনতার বাণী প্রচার করে যাচ্ছে। আমরা যদি কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলি তা হলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই সরকারী ও বেসরকারী পর্যায় থেকে যদি সকলে এগিয়ে আসেন তা হলে এই রোগ নিরাময় করা অনেকটাই সহজ হবে। গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত সকল আলোচকদের তাদের মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ক্যাম্পস এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।


এ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা অভিমত ব্যাক্ত করেন যে, চিকিৎসা করে নয় বরং প্রতিরোধ করেই এ রোগের প্রাদূর্ভাব প্রশমন করতে হবে আর এ জন্য সচেতনতাই একমাত্র উপায়। কিডনি রোগ প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে ক্যাম্পস এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং বিত্তবানদের এমন মহৎ কাজে সহযোগীতার আহবান জানান।


এ ছাড়াও গোলটেবিল বৈঠকে দেশের সরকারী পর্যায়ের নীতি নির্ধারক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, ক্রীড়াবিদসহ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS