শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১১ অপরাহ্ন

বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে জাতীয় নূন্যতম মজুরি ঘোষণার দাবিতে শ্রম মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি

এম এস আই
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতি দেশের পূর্ববর্তি সকল সময়ের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দুর্ভিক্ষ নিয়ে আশংকা প্রকাশ করছেন। এমতঅবস্থায়ও শ্রমিক কোন রেশন পেনশনের মত সামাজিক সুরক্ষা আজো পায় না। মজুরীর টাকায় কোন অবস্থায়ই দেশের কোন শ্রমিকের শুধুমাত্র খাদ্য সংস্থানের টাকাই হয় না। আমাদের গার্মেন্টস সংগঠনগুলি টিসিবির তথ্যের উপর এক হিসাব করে দেখিয়েছেন চাল ১৭%, ডান ৯৬%, আটা ৭২%, খোলা সয়াবিন তেল ৯৭%, ডিম ৫০%, লবন ৪০% দাম বেড়েছে। এমতঅবস্থায় কোথাও বাচ্চার লেখাপড়া বন্ধ করে, কোথাও বাড়িতে টাকা না পাঠিয়ে মা বাবাকে অনিশ্চয়তায় রেখে, কোথাও আরও দূরে ঘর ভাড়া নিয়ে, কোথাও তেল লাগে ৪ লিটার সেখানে ২ লিটার কিনে, কোথাও অপর্যাপ্ত বাজার করে পরিবারকে অপুষ্টির দিকে ঠেলে দিয়ে জীবনতরী তীরে ভিড়াবার চেষ্টা করছে এই শ্রমিকরা। এই মজুরীতে শ্রমিক বাঁচবে কেমন করে?

বাজারের এই অগ্নিমূল্য যা শ্রমিককে শ্রমের প্রতি আগ্রহ হারানোর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে তার কারন দুটি। প্রথমতঃ দেশে সঠিক জ্বালানী নীতি না থাকার কারনে জ্বালানী খাতে সরকার কয়েকজন ধনকুবেরের ইচ্ছার কাছে নিজেকে বন্দি করে ফেলেছে। তারা সরকারকে দিয়ে ইনডেমনিটি এ্যাক্ট তৈরী করে, যাতে তাদের বিরুদ্ধে কেউ আদালতে যেতে না পারে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করে দফায় দফায় গ্যাস বিদ্যুতের দাম বড়িয়েছে। গ্যাসের দাম আগের ৬বার বাড়ার পরও এবারই ১৭৯ শতাংশ এবারই বেড়েছে। বিদ্যুতের দাম ১৪ বছরে বার বার বাড়িয়েও সরকার ওদের তৃপ্তি দিতে না পেরে সরকার যাতে নিজেই যখন খুশি দাম বাড়াতে পারে তার জন্য এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে অকার্যকর করে এক মাসে দুই বার দাম বাড়িয়েছেন। অথচ গত বছরও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন ৪৬ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছেন (তথ্য-সিডিপি)। আমরা সবাই জানি, জ্বালানির দাম বাড়লে এবং সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে, সকল পণ্যের দামের উপর তার প্রভাব পড়বে। সবকিছুর দাম তাই হু হু করে বাড়ছে। দ্বিতীয়ত: আমরা বলে ছিলাম গত মজুরী বোর্ডের সামনেই শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি নিয়ে যে, টাকা শ্রমিকের কাছে থাকলে সে টাকা দেশের বাজারে নামবে। শ্রমিক এক জোড়া সেন্ডেল কিনলে চল্লিশ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক চল্লিশ লাখ জোড়া সেন্ডেল কিনতে চাইলে দুইটা সেন্ডেল ফ্যাক্টরী হবে। দুই হাজার লোক চাকরী পাবে। আর টাকা মালিকের কাছে মুনাফা আকারে থাকলে সে মুদ্রা পাচার করবে। কানাডায় বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করবে। দেশে ডলারের সংকট ও মুদ্রাক্ষীতি হবে। দ্রব্যমূল্য বেড়ে মানুষের ক্রমা ক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে। তাই হয়েছে আজ। গেল দুইদিন পুর্বে বাংলাদেশের শিল্প বনিকদের গঠিত সংগঠন এফবিসিসিআই এর মিটিংএ প্রকাশ্যেই এই আলোচনা এসেছে যে, গ্যাস বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি আবার সরবরাহ অনিশ্চয়তার জন্যই ভোগ্যপন্যের দ্রব্যমুল্য বাড়ছে আবার ডলার সংকটের জন্য এল সি খোলা গেলেও নিস্পত্তি করা যাচ্ছে না ফলে অপেক্ষারত জাহাজকে পোর্ট ডেমারেজ দিতে হচ্ছে বলে জিনিষের দাম বাড়ছে।

মঞ্জুরী কমিশন গঠন না করলে এবং অর্থবহ মঞ্জুরী নিশ্চিত না করলে আমরা কেমন করে এই দাম বৃদ্ধি পরিস্থিতি মোকাবেলা করবো শ্রম মন্ত্রনালয় আমাদের সে পথ বাতলে দিক। গত মজুরী কমিশনের পর থেকেই আমরা অস্বাভাবিক দুঃসহ পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি। করোনা কানে শ্রমিক কোন প্রণোদনা পায় নি আবার সব পাটকল এবং কতক চিনিকল এই করোনার মুখেও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১৯সালে মঞ্জুরী কার্যকর হবার পরই ২০-২১ সালে করোনা ২২ সালে বন্যার পর থেকেই দ্রব্যমুল্যের পাগলা ঘোড়া ছুটছে। এম মন্ত্রণালয় আমাদের নভেম্বর ডিসেম্বরের কথা বলছে, ততদিনে শ্রমিক মরে শুকিয়ে যাবে। মন্ত্রণালয় ভাল করেই জানে, কোন কারখানা স্বতঃপ্রনোদিত হয়ে আরো কোন অন্তর্বর্তীকালিন মহার্ঘ ভাতা, বা কোন ইনক্রিমেন্ট দেয় নি, দেবেও না। শ্রম মন্ত্রনালয় তদারক করে বাধ্য করলে অন্য কথা, কিন্তু সাধারন ভাবে স্বাভাবিকভাবে আইন অনুযায়ী তা না মালিকরা।

আমাদের দেশটা স্বাধীন করার জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে শ্রমিক কোন মালিক এই যুদ্ধ করেনি অথচ পাকিস্থানী আমলে আমাদের শ্রমিকদের জাতীয় ন্যূনতম মজুরী ছিল। আজ বাংলাদেশ হবার পর পঞ্চাশ বছরেও যে শ্রমিক জাতীয় ন্যূনতম মজুরীর নিম্নসীমা পেল না তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি বার্তা নিয়ে যায়, আশা করি সরকার ভেবে দেখেতে পারবেন। প্রথমত:আমরা ন্যায্য মজুরি দাবী করছি না বা মালিকের মুনাফাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছি না। দ্বিতীয়তঃ আমরা আন্তর্জাতিক বিবেচনার শোভন মজুরী, বা মনুষ্যোচিত মজুরীও দাবী করছি না। আমাদের দেশের ছোট উদ্যোক্তাদের স্বার্থচিন্তা করেই। কিন্তু শ্রমিককেও তো বাঁচতে হবে ।তাই জীবন ধারন করে আগামীকাল যাতে সে মেশিনের সামনে এসে দাড়াতে পারে সেই শক্তিটা অর্জনের জন্য ন্যূনতম বা নিম্নতম মজুরীটাই আমাদের দাবী। শ্রমিক মরে গেলে কি ক্ষুদ্র কোন লাভ হবে। তা হবে না ।

আমাদের মত অস্থিতিশীলতার দেশে আমরা তিন বছর অন্তরই মজুরী বোর্ড করা উচিৎ মনে করি। তবুও শ্রম আইনে যে পাঁচ বছর অন্তর মজুরীর কথা বলা আছে তারও চার বছর ইতিমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে। সে দিক থেকেও মজুরী বোর্ড গঠন করা যায়। আবার জাতীয় ন্যূনতম মজুরীর জন্য পঞ্চাশ বছরেও কোন বোর্ড গঠন করা হয় নি এটাই মূল বিবেচ্য বিষয় হওয়া দরকার। আবার, শ্রম আইনের ১৪০, ক-ধারা অনুযায়ী সরকার যে কোন সময় চাইলেই মজুরী বোর্ড গঠন করতে পারে। অন্যদিকে নবম পে-ভেল ঘোষণার জন্য কমিশন গঠন করা হোক এটাও আজ সময়ের দাবী। এই মজুরী বোর্ড ঐতিহাসিকভাবেই তার ভারসাম্যর জন্য পরস্পরের যুক্তি বোঝার জন্য ত্রিপক্ষীয় হয়। এর বাইরে ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষজ্ঞ থাকতে পারেন। কিন্তু হানে দেখা যায় তিন পক্ষকে একপক্ষ করে ফেলার প্রবনতা এবং দরকষাকষির যুক্তিতর্ক এড়ানোর প্রবনতা কাজ করে। ফলে অলে অনে তলে তলে টেলিফোনের আলোচনায় মজুরী সাব্যস্ত সরকার প্রধান করে ফেলেন। এতে ব্যাখা বিশ্লেষণের অভাবে গুরুতর ভুল হয়ে যায়। গত গার্মেন্টস মঞ্জুরীতে মঞ্জুরী কত কম হয়েছে তার চেয়েও বড় কথা সাভারে দুইজনকে প্রান দিয়ে শুধু হেলপার নয়, অপরাপর গ্রেডের মজুরী গেজেটে অর্ন্তভুক্ত করা ঠিক করতে হয়েছে । চা শ্রমিকদের মজুরী পাঁচ টাকা বৃদ্ধি সাব্যস্ত করে নেতৃত্ব মানা সত্যেও শ্রমিকরা দুই সপ্তাহ মজুরী না পেয়ে না খেয়ে থেকে ৫০ টাকা বৃদ্ধি করতে পেরেছে। আজো তাদের এরিয়ারের টাকা অনিশ্চয়তার মুখে কতক বাগানে আছে । তাই আমাদের কথা হলো মজুরী বোর্ডে যথার্থ শ্রমিক আন্দোলনের শ্রমিক প্রতিনিধি অন্তভুক্ত করতে হবে। মজুরী বোর্ডকে দলীয়করণ করা চলবে না। মালিক পক্ষ, শ্রমিক পক্ষ, রাষ্ট্রপক্ষ কোন পক্ষই দলীয় বিবেচনায় তৈরী করা যাবে না। আমরা দলবাজি মুক্ত মজুরী বোর্ড চাই।

আমাদের দাবীসমুহঃ

১. জাতীয় ন্যূনতম মজুরী বোর্ড অবিলম্বে গঠন করে মজুরী নির্দিষ্ট করে আইন করে কার্যকর করতে হবে।

২. সকল অ-প্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিককে অধ্যাদেশ দিয়ে শ্রম আইনও মজুরির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৩. অবিলম্বে মজুরী কমিশন ও নবম পে কমিশন একযোগে ঘোষনা করতে হবে। মঞ্জুরী কমিশন দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে।

৪. বিলম্ব হলে শ্রমিক কর্মচারীদের দ্রুত ইনক্রিমেন্ট ও মহার্ঘ ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. দ্রব্যমূল্য ও ডলারের দামের পরিপুরক ন্যায্য নিম্নতম মজুরীর নিশ্চয়তা চাই।

ধন্যবাদান্তে,

শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে-

১. বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন- জহিরুল ইসলাম;
২.জাতীয় গণতান্ত্রিক শ্রমিক ফেডারেশন- শামীম ইমাম;
৩. বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন- এ.এ.এম ফয়েজ হোসেন;
৪. বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন (টাফ)- আলিফ দেওয়ান;
৫. বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি- মীর মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাক;
৬. শ্রমজীবী আন্দোলন- হারুন অর রশিদ ভুইয়া;
৭. শ্রমজীবী সংঘ- আব্দুল আলী।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS