বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৭ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
সুন্দরবন, সুন্দরী এবং শঙ্কা ফুলপুরে নারী ও শিশুর প্রতি ডিজিটাল সহিংসতা প্রতিরোধ করি বিষয়ক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত আগামীকাল বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় ঢাকাসহ দেশব্যাপী দোয়ার কর্মসূচি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক গুলি করে বাংলাদেশের দুই সাধারণ নাগরিককে হত্যার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টি গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা প্রকাশ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ অভিযানে সিগারেট কোম্পানির প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ উদঘাটন ময়মনসিংহে মামলা পরিচালনায় সহায়ক আইনকানুন বিষয়ে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত এমন একটি বিল্ডিং কোড তৈরি করতে হবে, যা যত বড় ঝাঁকুনিই আসুক, নড়বে না: প্রধান উপদেষ্টা অগ্রিম কর ও উৎসে কর হচ্ছে কর–সন্ত্রাস (ট্যাক্স টেররিজম): সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর টানা চতুর্থ মাস কমলো রপ্তানি আয় নড়াইলের- ১ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকের মনোনয়ন প্রত্যাশী মিল্টন মোল্যার গণসংযোগ

সুন্দরবন, সুন্দরী এবং শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৪০ Time View

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্বর্গভূমি সুন্দরবন, যাকে বলা হয় বাংলার ফুসফুস। সুন্দরীর এই সমারোহে মাঠ পর্যায়ে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাওয়া যায় বেশ কিছু দিন আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত ফিল্ডওয়ার্কের মাধ্যমে। আন্দারমানিক, কচিখালী, কটকা জামতলা সী-বিচ, দুবলার চর ও ডিমেরচরসহ ১০টি জায়গায় পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাওয়া যা ছিলো রোমাঞ্চকর এবং একইসাথে বিস্ময়করও বটে।

ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম, রূপসা নদীর প্রবাহে বয়ে চলতে লাগল আমাদের জাহাজ পেলিকান। দুপুর গড়িয়ে যখন সবে বিকেল পড়বে এমন সময় আমরা প্রবেশ করলাম সুন্দরী গাছের অঘোষিত রাজ্য আন্দারমানিক। আন্দারমানিক ইকো ট্যুরিজম সেন্টারের সেই সুদীর্ঘ ফুট ট্রেইল জুড়ে চারপাশে সুন্দরীর সমারোহ ছিল বেশ উপভোগ্য। সুন্দরবনের মূল আকর্ষণ সুন্দরী গাছ যা ছড়িয়ে আছে ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রায় ৭০% এলাকাজুড়ে। তুলনামূলক কম লবনাক্ত স্থানে জন্মায় বলে পূর্ব-মধ্য সুন্দরবনে এর আধিপত্য বেশি। আমাদের টুরগাইড আলামিন সুন্দরী গাছে ছত্রাক সংক্রমণ এবং পরগাছা সম্পর্কে বিস্তর বর্ণনা দিলেন। বাস্তবিক অর্থে যেন আমরা উপলদ্ধি করলাম কেন এই বনের নাম দেয়া হয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরী যেন এই মায়াবী সুন্দরবনের প্রাণ। জোয়ার বাটার ভূমিক্ষয় রোধ, কার্বন সঞ্চয়, ম্যানগ্রোভের পুষ্টিচক্র বজায় রাখাসহ সামগ্রিক পরিবেশগত স্থিতিশীলতায় সুন্দরী গাছের ভূমিকা অপরিহার্য। টপ ডাইং বা আগা মরা রোগ, ছত্রাক সংক্রামণ, নদীতে মিঠাপানির পরিমান কমে যাওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে বর্তমানে সুন্দরী গাছ রয়েছে হুমকির মুখে।

নির্জন নিস্তব্ধ অন্ধকার রাত্রি শেষে নদীর মোহনায় সূর্যোদয় ছিল এক মোহনীয় দৃশ্য। চারদিকে থৈ থৈ পানির প্রবাহ দূরে বিশাল আকাশ, পূর্ব দিগন্তে ধীরে ধীরে চোখ মেলতে লাগলো সূর্য আর আমরাও নেমে গেলাম পলি জমে গড়ে উঠা দ্বীপ পক্ষীর চর। আকাশ ক্রমাগত আলোকিত হতে লাগলো আমরা অগ্রসর হতে লাগলাম ডিমের চরের দিকে পায়ে পায়ে হেঁটে। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে থাকা এই অস্থায়ী চরে কাটানো সেই সকাল ছিল অভূতপূর্ব সুন্দর। সকালের আলো গাঢ় থেকে গাঢ় হতে থাকলে আমরা পর্যবেক্ষণ করলাম ডিমের চরের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি, সদ্য গড়ে উঠা একটা বালুর চর এবং প্রথম শ্রেণির প্লান্ট সাক্সেশন। চোখ এড়ায়নি জোয়ারে ভেসে নানা জৈব অজৈব পদার্থ, প্লাস্টিক দূষণ এর মাত্রা দেখে অবাক হলাম আমরা। প্লাস্টিক দূষণ বর্তমান সময়ের সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়গুলোর একটি। ম্যাক্রোপ্লাস্টিক এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক উপাদানগুলো মূলত খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা জেলার উপকূলীয় এলাকা হতে উজানে পসুর, বলেশ্বর নদীর মাধ্যমে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার গঠিত হওয়ায় পর্যটকরাও প্লাস্টিক দূষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

ঐদিন দুপুরের কড়া রোদে আমরা ছিলাম কচিখালী টাইগার পয়েন্ট-এ। গানম্যান নজরুল সর্তক করলেন সবাইকে, বেশ কয়েকদিন আগেও নাকি দেখা মেলেছে বাঘের। টুরগাইড আলামিন বললেন আমরা সবাই চুপ থাকি এবং চার পাঁচ জন একসাথে থাকি। এতকিছুর পরও বাঘ দেখতে না পাওয়ায় হতাশ হয়ে ফিরে এলাম আমরা। সূর্য যখন পশ্চিম দিগন্তে আমরা তখন জামতলা সী-বীচের পথে।

হাঁটতে হাঁটতে দূরে দেখা মিলল এক পাল হরিণের, বনের মধ্যে গাছের আড়ালে যাদের সোনালী হলুদ চামড়া চকচক করছিল। শব্দ পেয়ে আরো গভীরে চলে গেল হরিণের পাল, এগোবার পথে আমাদের চোখে পড়ে বিষাক্ত কালকেউটে সাপ। এখানেও প্লাস্টিক দূষণ ছিল লক্ষণীয়। বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন যা ঢাল হয়ে রক্ষা করছে উপকূলীয় এলাকাগুলোকে। তবে বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবন অঞ্চল হওয়ায় ঘন ঘন সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস আঘাত হানতে থাকে, যার দরুন ঢাল হয়ে সুরক্ষা প্রদানকারী সুন্দরবন বহুলাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বঙ্গোপসাগরের দ্বারপ্রান্তে অবস্থানকারী সুন্দরবনে সিডর (২০০৭), আইলা (২০০৯) বুলবুল (২০১৯) এর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের চিহ্ন রয়ে গেছে এখনো। জামতলা সী-বীচে এখনো আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত গাছপালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাক্ষী হিসেবে। উপকূলীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে এভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে এই বনভূমি।

পরেরদিন ভোরে আমরা গিয়েছিলাম অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য নীলকমল হিরণ পয়েন্ট-এ। সুন্দরবন বাংলার রত্ন, পর্যবেক্ষণ করে আমাদের চোখে সুন্দরবনের গুরুত্ব আরো বিশালভাবে ধরা দেয়। প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের ক্ষেত্রে ম্যানগ্রোভ এলাকায় বৃক্ষরোপণ, বনভূমি সংরক্ষণসহ বেশ কিছু পরিবেশবান্ধব সমাধান নেয়া যেতে পারে বলে আমাদের ধারনা হয়।

ঐদিন বিকেলের রোদ গায়ে মেখে আমরা নেমে পড়ি দুবলার চর। এত এত শুটকি থাকার পরেও শুঁটকির চর না হয়ে এর নাম দুবলার চর কেন হলো তা এখনো বোধগম্য হলো না। অবশেষে মানুষের দেখা মিলল এই চরে, দেখা হলো তাদের বিচিত্র জীবন ও অভিজ্ঞতা স্বচক্ষে। সৌন্দর্যের লীলাভূমি যেন এই দুবলার চর। ভেঙ্গে ভেঙ্গে আসা টেউয়ের ধ্বনি, সোনালী আলোয় ঝলমল অনন্ত প্রবাহিত পানি, নীল আকাশের গাংচিল সবমিলিয়ে যেন এক ঐশ্বর্ষিক সৌন্দর্য। টকটকে লাল রঙ্গের সূর্য যখন অন্তমিত আমরা ফেরার জন্য ট্রলারে উঠে গেলাম কিন্তু তখন আমাদের চোখও রঙ্গিন হয়ে উঠে দুবলার চর নামক অপরূপ সৌন্দর্যে।

শিক্ষার্থী হিসেবে সুন্দরবনের বিচিত্র পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য আমাদের যেমন মুগ্ধ করে তেমনি আশঙ্কিত করে আমাদের দোষেই না এই সুন্দরবন একটি সাধারণ বন হয়ে যায়।

টিম নৈসর্গ- তাসনিম জাহান, মেহেদী হাসান, মনি রানী সরকার, রবিউল হাসান খোকা।
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS