শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৩ অপরাহ্ন

সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫

এস আলম গ্রুপ কর্তৃক পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনয়ন এবং ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ৯ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার সচেতন ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যবসায়ী মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন হকস বে এর চেয়ারম্যান ও বারভিডা-এর সভাপতি আব্দুল হক ও বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামী ব্যাংক। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যাংক ২০১৭ সাল পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে দেশের সেরা ব্যাংকের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়। এ ব্যাংক দেশে গার্মেন্টস, বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পসহ প্রায় ৬ হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মাধ্যমে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। এর পাশাপাশি বৈদেশিক রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে আনয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এ ব্যাংকের সেবা দেশের সকল ব্যাংকের মধ্যে উন্নত ছিল। উদ্যোক্তা উন্নয়নে এ ব্যাংকের অনবদ্য ভূমিকা ছিল। আমদানী রফাতানী কার্যক্রমে ব্যবসায়ীদের কাছে এ ব্যাংক প্রথম পছন্দের ব্যাংক হিসেবে সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। এ ব্যাংক গণমানুষের ব্যাংক হিসেবে গড়ে উঠেছে। ব্যবসায়িক সকল প্যারামিটারে সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ এ ব্যাংক বিশ্বের সেরা ১০০০ ব্যাংকের তালিকায় অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়।

তাঁরা বলেন, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলম স্বৈরাচার সরকারের সাথে আতাত করে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে এ ব্যাংকের চেয়াম্যান ও এমডিকে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। তারা বোর্ডের সকল সদস্যকে বিতাড়ণ করে নিজেদের পছন্দমত লোকদের এ ব্যাংকের বোর্ডের সদস্য করেন। তাদের পছন্দমত এমডি সহ উর্ধ্বতন সকল পদে নিয়োগ দেন। এমনকি নিজের পিএসকেও এ ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের মত পদে অধিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীতে তারা এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা থেকে ব্যাংকের প্রতি দায়িত্বশীল কিছু উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিতাড়ন করে বাইরে থেকে অযোগ্য ও তাদের অনুগত ব্যাংকারদের এ ব্যাংকে নিয়োগ দেন।

তাঁরা বলেন, এস আলম ব্যাংক দখলে নিয়ে এ ব্যাংকের সকল আমদানী রফতানির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তার নিজের গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর এলসি ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের এলসি খুলতে বাধা দিত। তিনি টাকা পাচার করে শক্তিশালী ভিত্তির এ ব্যাংকে কৃত্তিম ডলার সংকট তৈরি করেন। দেশের বড়বড় ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের আর্থিক যোগান বন্ধ করে দেন। ব্যাংকের বিনিয়োগের লিমিট থাকা স্বত্ত্বেও আমরা আমাদের লিমিট অ্যাভেইল করতে পারি নাই। ব্যাংকের সকল টাকা তিনি নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামে নিয়েছেন। কোন রকম চেক বা ভাউচার ছাড়া সাদা স্লিপে বস্তা বস্তা টাকা তিনি ব্যাংকের ভল্ট থেকে নিয়ে এ ব্যাংকের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছেন। তিনি কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এই ব্যাংক থেকে নামে বেনামে এক লক্ষ কোটি টাকারও বেশি নিয়েছেন। এভাবে তিনি ইসলামী ব্যাংকের মত বড় ব্যাংককে তারল্য সংকটে ফেলে দিয়েছেন। তার কারণে ব্যাংক থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার ফলে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকের ভাল গ্রাহকরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যার কারণে অনেক ভাল গ্রাহক ইসলামী ব্যাংক ছেড়ে দিয়ে অন্য ব্যাংকের সাথে ব্যাংকিং করছেন। কার্যত ব্যাংক ভাল গ্রাহকদের হারিয়েছে। এতসব অনিয়মের ফলে বর্তমানে এই বৃহৎ ব্যাংকটির সামনে এগিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

তাঁরা বলেন, এস আলম শুধু টাকাই লুট করেননি, তিনি ব্যাংকের মূল শক্তি মানবসম্পদকে দূর্বল করে দিয়েছেন। পটিয়ার পানের দোকানদার, বাড়ির কাজের বুয়া ও তার স্বামী, অটো চালক, রাজমিস্ত্রির সহকারী ও সাম্পানের রং মিস্ত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণির অশিক্ষিত ও অর্ধ্বশিক্ষিত লোক নিয়োগ দেয়। কোন বিজ্ঞাপন ও চাকরির পরীক্ষা ছাড়াই মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেয় ৮৩৪০ জনকে। এর মধ্যে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি শুধুমাত্র পটিয়ার এবং প্রায় সাড়ে সাত হাজার শুধুমাত্র চট্টগ্রামের প্রার্থী। নিয়োগকৃত এসব কর্মকর্তা কর্মচারির ম্যধ্যে অনেকেই ভুয়া সার্টিফিকেট নিয়ে ব্যাংকে যোগদান করে। ইতোমধ্যে অনেক ভুয়া সার্টিফিকেটধারিকে বহিস্কার করেছে ইসলামী ব্যাংক।

বক্তারা  আরও বলেন, ইসলামী ব্যাংকের ৮২ শতাংশ শেয়ার এখনো এস আলমের মালিকানায় রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যংক তা জব্দ করে রাখলেও কেন এ শেয়ার লিকুইডেশন করে ব্যাংকের দায় পরিশোধ করছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়। ব্যাংকের সকল স্তরের গ্রাহক আশংকা করছে যে, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক শক্তির সহায়তায় এসব শেয়ার কব্জা করে এস আলমের মত দুর্বৃত্তরা আবারও ব্যাংক দখল ও লুটপাট করবে।
তাঁরা বলেন, এস আলমের অবৈধ নিয়োগ দেয়া কর্মকর্তাদের পিছনে বছরে ব্যাংকের ক্ষতি প্রায় ১৫০০ কোটি টাকারও বেশি। সেই হিসেবে ৭ বছরে প্রায় ১০ হজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংকটি। একদিকে ব্যাংকের একলক্ষ কোটি টাকার উপরে লোপাট অন্যদিকে ব্যাংকের ঘাড়ে অবৈধ নিয়োগকৃত এতবড় খরচের বোঁঝা টেনে সামনে এগিয়ে যাওয়া ইসলামী ব্যাংকের জন্য প্রায় অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে।

তাঁরা আরও বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার দোসর এস আলম পালানোর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও মানবিক কারণে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে ছাটাই করেনি। বরং তাদের যোগ্যতা পূনর্মূল্যায়নের জন্য সম্প্রতি ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিশেষ দক্ষতা যাচাই পরীক্ষা নেয়া হয়। নিজেদের অযোগ্যতা ধরা পড়ার ভয়ে অধিকাংশ কর্মকর্তা সেই নিয়োগ পরীক্ষা বয়কট করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অবাধ্যতা প্রকাশ করে, যা বিদ্রোহের শামিল। ব্যাংকের অবাধ্য এসব কর্মকর্তা ব্যাংকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এবং এ ধরণের অবাধ্য কর্মকর্তা কর্মচারি দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠান চলতে পারেনা। তাদের নিকট দেশের আড়াই কোটি গ্রাহকের আমানত নিরাপদ নয়। তারাও এস আলমের মত আমাদের জমাকৃত টাকা লুটে নিতে পারে।

বক্তারা আজকের মধ্যেই ইসলামী ব্যাংক থেকে সকল অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বহিস্কার করার দাবি জানান। ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি তাদেরকে আজকের মধ্যে বহিস্কার না করে তাহলে ব্যবসায়ী সমাজ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাওসহ অতিসত্তর কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে। একই সাথে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে সারাদেশের মেধাবী প্রার্থীদেরকে এ ব্যাংকে নিয়োগ দেয়ার আহবান জানান।

বক্তারা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে, ব্যবসাবান্ধব ব্যাংকখাত গড়তে এবং ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করে ঝুঁকিমুক্ত ব্যাংকখাত গড়তে কিছু দাবি উপস্থাপন করেন। এগুলো  হলো: অতিসত্ত্বর ইসলামী ব্যংক থেকে এস আলমের অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তাকে বহিস্কার করতে হবে এবং ব্যাংকের সেবার মান উন্নয়নে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সারা দেশ থেকে মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। ইসলামী ব্যংকসহ ব্যাংকিং সেক্টরের লুটকৃত ও পাচারকৃত সকল অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জব্দকৃত এস আলমের সকল শেয়ার লিকুইডেশন করে ব্যাংকের দায় শোধ করতে হবে এবং পূর্বের পরিচালনা পরিষদের হাতে ব্যাংকের মালিকানা ফেরত দিতে হবে। এস আলমের ঋণের বিপরীতে প্রদত্ত সিকিউরিটি এবং যেসব সম্পদ আদালতের মাধ্যমে অ্যাটাচমেন্ট করা হয়েছে তা একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে বিক্রি করে ব্যাংকের দায় শোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS