শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩২ অপরাহ্ন

এস আলমের অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫
ব্যাংক খাতের অর্থ লুটকারী এস আলম কর্তৃক অবৈধভাবে নিয়োগকৃত অদক্ষ কর্মকর্তা কর্মচারিদের ইসলামী ব্যাংক থেকে অপসারনের দাবীতে ইসলামী ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারস ফোরাম আজ ৬ অক্টোবর ২০২৫ সোমবার রাজধানীর দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে। একই সাথে সারাদেশে ইসলামী ব্যংকের প্রতিটি শাখার সামনে ইসলামী ব্যাংক গ্রাহক ফোরাম অবিলম্বে ইসলামী ব্যংক থেকে এস আলমের মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারিদের বরখাস্ত করার দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণের আহ্বান জানান। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে অবৈধ এসব কর্মকর্তাদের অপসারণ করা না হলে শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকরা বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন।
প্রধান কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন মোঃ মোহতাছিম বিল্লাহ, হাফিজুর রহমান, ইমাম হোসাইন, মাহমুদুল হাসান, এটিএম সিরাজুল হক, ড.হারুনুর রশিদ, মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও মো. রতন সহ আরো অনেকে।
এসময় ইসলামী ব্যংক গ্রাহক ফোরাম, সচেতন ব্যবসায়ী ফোরাম, ইসলামী ব্যাংক প্রাক্তন ব্যাংকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী চাকুরী প্রত্যাশী পরিষদ, সচেতন পেশাজীবী গ্রুপ, ইসলামী ব্যাংক সিবিএ এবং সচেতন ব্যাংকার সমাজ একই দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এস আলম রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যংক জবরদখল করে নেয়। এ ব্যাংক থেকে বৈধ মালিকদের ভয় দেখিয়ে বিদায় করে। পাশাপাশি বিদেশী শেয়ারহোল্ডারদেরও নানাবিধ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিতাড়ন করে। এ ব্যাংককে নিজের কব্জায় নিয়ে তিনি ইচ্ছামত নিয়োগ দিয়ে মোটা অংকের টাকা আয় করেছেন। তিনি কোন রকম বিজ্ঞাপন ছাড়াই পটিয়া চট্টগ্রামের লোক নিয়োগ দিয়ে এ ব্যাংকের চমৎকার কর্মপরিবেশ এবং উন্নত গ্রাহক সেবা ধ্বংস করে দিয়েছেন।
বক্তারা বলেন, ইসলামী ব্যাংক মানবতা দেখিয়ে এতদিন এসব কর্মকর্তাদের চাকরিতে রেখেছে। এতে ব্যাংকই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবছর এসব অবৈধ কর্মকর্তার পিছনে ১৫০০ কোটি টাকার উপরে ব্যায় হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক তাদের বৈধ করার জন্য যোগ্যতা মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করেছিল। ব্যাংকের সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করে তারা এ বাংকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় ধরণের বিদ্রোহ। এ ধরণে বিদ্রোহীদের ব্যাংকে বহাল রাকার আর কোন বৈধ পথ খোলা নাই। তাদেরকে দ্রুত অপসারণ করার জন্য বক্তারা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তারা সারা দেশ থেকে মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নিয়োগ দেয়ার দাবী জানান।
তারা আরো বলেন, অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্তদের অপসারণকে কোন ভাবেই মানবাধিকার লঙ্ঘন বলা যাবে না। ৬৩ টি জেলার মানুষকে বঞ্চিত করে শুধুমাত্র পটিয়া এবং চট্টগ্রামের লোকদের রাতের আঁধারে বাক্স বসিয়ে চাকরি দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মানবাধিকার লংঘন করা হয়েছিল। অবৈধ কর্মকর্তাদের অপসারনের মাধ্যমে এ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকরা যেকোন মূল্যে ইসলামী ব্যাংককে মাফিয়ার হাত থেকে রক্ষা করবে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, এস আলম ইসলামী ব্যাংক দখলের পর ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন পদমর্যাদায় শুধুমাত্র চট্টগ্রামের ৭২২৪ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্যে ৪৫০০ জনের বেশি শুধুমাত্র পটিয়া উপজেলার। সারা দেশের চাকরিপ্রার্থীদের বঞ্চিত করে একটি জেলার প্রার্থীদের গোপনে নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকের শৃংখলা চরমভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।
তারা বলেন, ব্যাংকের পুরোনো কর্মীদের ব্যাংক থেকে বিতাড়ন করে নিজ উপজেলার লোক নিয়োগ দেয়ার কর্মসূচী হাতে নেয় এস আলম। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে জুলাই বিপ্লব পর্যন্ত ব্যাংকের দেড় শতাধিক কর্মকর্তা কর্মচারিকে নানাবিধ ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় এবং বরখাস্ত করে।
নূরুল হক নামক একজন ড্রাইভার বলেন, আমাকে তৎকালীন এইচআরের একজন প্রতিনিধি ডেকে নিয়ে বলেন “আপনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। তা না হলে আপনি সার্ভিস বেনিফিট থেকে বঞ্চিত হবেন।” বাধ্য হয়ে আমি পদত্যাগপত্র জমা দেই। এভাবে বারবার চাপ দেয়া হয়। আমার মত খলিল, আব্দুর রহমান, আব্দুল মোমিন ও দেলোয়ারও পদত্যাগপত্র জমা দিতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, এভাবে ড্রাইভার, মেসেঞ্জার ও ক্লিনারসহ কয়েকশ নিম্নপদস্থ এবং  আরো বেশ কিছু কর্মকর্তা ও নির্বাহীদের জোরপূর্বক অবসরে পাঠানো হয়। আমাদের সবারই চাকরির বয়স আরও পাঁচ বছর অবশিষ্ট ছিল। এস আলমের পিএস আকিজ উদ্দিন পটিয়া উপজেলা থেকে লোক নিয়োগ দেয়ার জন্য এমন করেছিল বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাহী বলেন, এস আলমের কথামত ভুয়া বিনিয়োগের ফাইলে সাক্ষর না করায় ব্যাংকের বেশ কজন ঊর্ধ্বতন নির্বাহীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে অপরাধী হিসেবে মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
উল্লেখ্য, অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তার যোগ্যতা ও দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য ব্যাংক ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ’র মাধ্যমে মূল্যায়ন পরীক্ষার আয়োজন করে। এসব কর্মকর্তারা মূল্যায়ন পরীক্ষা দিতে অস্বীকার করে। ২৭ সেপ্টেম্বর এসব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ৫৩৮৫ জনের মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বলা হয়। ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে এদের একটি বড় অংশ অর্থাৎ ৪৯৭১ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে। এর মধ্যে ৪১৪ জন কর্মকর্তা মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশ নেন।
যারা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ব্যাংক তাদের ওএসডি করেছে এবং বিদ্রোহী ৪০০ জনকে চাকুরিচ্যুত করেছে। পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত তাদেরকে অপারেশনাল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS