নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় সার ডিলারদের নিয়ম না মানার কারণে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। ডিলারদের গুদাম ও বিক্রয়কেন্দ্র ইউনিয়নে থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ডিলার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন পৌর এলাকায়, যা কৃষকদের জন্য সৃষ্টি করছে চরম ভোগান্তি।
১৯৯৫ সালে বিসিআইসি ও বিএডিসি’র পক্ষ থেকে আলমডাঙ্গার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় সার বিক্রির জন্য ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু সময়ের সাথে দেখা যায়, ইউনিয়নভিত্তিক এসব ডিলার পৌর এলাকায় কার্যক্রম চালাচ্ছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইউনিয়নে কেবল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে, সামনে কয়েক বস্তা সার রেখে বৈধতার ভান তৈরি করা হয়।
ফলে কৃষকদের তাদের ইউনিয়নে সুলভ মূল্যে সার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফসল চাষের মৌসুমে ইউরিয়া, ডিএপি, টিএসপি ও এমওপি সারের চাহিদা থাকে ব্যাপক। সরকার নির্ধারিত দামে যথাক্রমে ইউরিয়া ১৩৫০ টাকা, ডিএপি ১০৫০ টাকা, টিএসপি ১৩৫০ টাকা ও এমওপি ১০০০ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বাস্তবে ডিলাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে সারের বেচাকেনা করছেন বলে অভিযোগ।
হারদি ইউনিয়নের কৃষকরা জানান, সার কিনতে পৌর এলাকায় যেতে হয়, যেখানে প্রতিটি বস্তার জন্য আলাদা করে ৫০ টাকা পরিবহন খরচ গুণতে হয়। ১০ বস্তা সার কিনলে অতিরিক্ত ৫০০ টাকা খরচ হয়। অনেক সময় সার মজুদ না থাকায় খালি হাতে ফিরতে হয় কৃষকদের।
উপজেলায় প্রায় ৯৬ হাজার তালিকাভুক্ত কৃষক রয়েছেন। তাদের জন্য ৪৬টি ব্লকের আওতায় ২৯ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। চাহিদার তুলনায় প্রতিবছর বেশি ফসল উৎপাদন হলেও সঠিক সময়ে সার না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। কৃষকরা বলছেন, কালোবাজারে বেশি দামে সার বিক্রি ও কৃত্রিম সংকট তৈরির কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের দাবি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিলাররা কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংকটের অবসান হবে।
এ বিষয়ে এক ডিলার বলেন, “আমরা ইউনিয়নে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। গোডাউন পেলে সম্ভব হবে। কেউ বেশি দামে সার বিক্রি করলে তার দায় সে-ই নেবে।”
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন জানান, “ডিলারদের নিজ নিজ ইউনিয়নে ফিরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে তারা ফিরে যাচ্ছে। কেউ নিয়ম লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, “ডিলারদের সময় দেয়া হয়েছে। সময় শেষ হলে যারা নির্দেশনা মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। কৃষকদের অধিকার নিশ্চিত করতে প্রশাসন কঠোর থাকবে।”
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply