শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত হয়েছে “নাগরিক নিরাপত্তা ও আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব” শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত আজ ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল টিউবস লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আল-আমিন কেমিক্যাল প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ করেছে ফাইন ফুডস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট আলমডাঙ্গার খাসকররা ইউনিয়নের পার লক্ষ্মীপুর বাজারে জামায়াতের পথ সভা অনুষ্ঠিত হয় নীলমণিগঞ্জ পিটিআই মাঠে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সভা: যুবকদের প্রতি আলোর পথে আসার আহ্বান ফাস ফাইন্যান্স দরপতনের শীর্ষে

রোজা – ঈদ কে লক্ষ্য করে চাঙ্গা মুরগির বাচ্চার কর্পোরেট সিন্ডিকেট মুরগির বাচ্চায় প্রতিদিন ৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেঃবিপিএ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ডিম মুরগির দাম বাড়লে সরকারের নজরে আসে এবং সরকার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয় কিন্তু ফিড ও মুরগির বাচ্চার অযৌক্তিক দাম বানিয়ে কোম্পানিগুলো শতশত কোটি টাকা সিন্ডিকেট করে প্রান্তিক খামারীদেরকে নিঃস্ব করে দিচ্ছে ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে সেদিকে সরকারের নজর না থাকায় নিরবে সিন্ডিকেট দিন দিন বড় আকার ধারণ করছে ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের যৌথ আয়োজনে ফিড, মুরগির বাচ্চা্‌ ,ডিম , মুরগির দাম নির্ধারণ কমিটি করা হয়েছে সেই কমিটিতে রাখা হয়নি কোনো প্রান্তিক খামারিকে আজ ২৬ শে ফেব্রুয়ারি কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে মূল্য নির্ধারণ কমিটির মিটিং হতে যাচ্ছে সেই মিটিংয়ে কর্পোরেটগ্রুপের অযৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাখা হয়নি প্রান্তিক খামারিদের কোন প্রতিনিধি বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প দেশের অন্যতম প্রধান খাদ্য সরবরাহকারী খাত হলেও, বর্তমানে এটি এক কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে, যা দেশের খামারিদের জন্য এক ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করেছে। এই সিন্ডিকেটের মূল লক্ষ্য হলো পোল্ট্রি বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ
প্রতিষ্ঠা করা, যার ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের ব্যবসা ও মুনাফা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের অস্তিত্ব সংকটে ফেলছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এসব খামারি সরকারি মিটিংগুলো থেকে বাদ পড়ে যায়, যেখানে শুধুমাত্র বড় কর্পোরেট কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের কৃষি খাতের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব খামারিদের জীবনযাত্রা ও দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় মারাত্মক হবে।

ব্রিডার কোম্পানি ও ফিড ইন্ডাস্ট্রির সিন্ডিকেট: বাজারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ এই কর্পোরেট সিন্ডিকেটের প্রধান হাতিয়ার হলো লিডার অ্যাসোসিয়েশন ও ফ্রিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের পোল্ট্রি ব্রিডার কোম্পানি এবং ফিড ইন্ডাস্ট্রির নিয়ন্ত্রণ। ব্রিডার কোম্পানিগুলো কৃত্রিমভাবে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ফেলছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (DLS) ব্রয়লার বাচ্চার জন্য ৪৯ টাকা নির্ধারণ করলেও, কোম্পানিগুলো তা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করছে। লেয়ার মুরগির বাচ্চা ৫৭ টাকা নির্ধারিত হলেও তা ৮০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা খামারিদের জন্য অত্যধিক ব্যয়বহুল। এর ফলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং খামারিরা লাভ করতে পারছেন না। চাহিদা বাড়ানোর অজুহাতে সিন্ডিকেট ইচ্ছাকৃতভাবে সরবরাহ কমিয়ে দেয়, যাতে দাম আরও বাড়ানো যায়। এই কৌশলের মাধ্যমে প্রতিদিন তারা মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে প্রায় ৯ কোটি টাকা আয় করছে। সামনে ঈদ এবং অন্যান্য বড় উৎসবগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে, এই সিন্ডিকেট মুরগির বাচ্চার দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। পোল্ট্রি খামারিদের জন্য এটি একটি বড় চাপ হয়ে দাঁড়ায়। বড় উৎসবের সময়, যখন খামারিরা সবচেয়ে বেশি লাভের আশা করেন, তখন এই সিন্ডিকেট নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য দাম বাড়িয়ে দিয়ে খামারিদের পকেটে হাত দেয়। এ কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে খামারীরা লস করে লসের সম্মুখীন হয়ে উৎপাদন থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছে ।

ফিড ইন্ডাস্ট্রির সিন্ডিকেটও একইভাবে খামারিদের উপর চাপ তৈরি করছে। বিশ্ববাজারে ফিডের দাম কমলেও বাংলাদেশে তা কমছে না। ২০২২ সালে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের অজুহাতে, ফিডের দাম অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়, যার ফলে খামারিরা অতিরিক্ত খরচ বহন করতে বাধ্য হচ্ছেন। ২০২২ সালের শেষের দিকে, প্রতি বস্তা ফিডের দাম ২৫০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬০০ টাকায় পৌঁছে যায়। ফিডের দাম বৃদ্ধির ফলে খামারি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, যেহেতু ডিম বা মুরগি উৎপাদনে ৭০-৭৫% খরচ ফিডে চলে যায়। এসব ফিড কোম্পানিগুলোর ক্ষুদ্র প্রতিযোগীদের বাজারে টিকে থাকতে দেওয়া হয় না, এবং তারা এসব বড় কোম্পানির মাধ্যমে আরো মুনাফা অর্জন করছে।
ফিড ও মুরগির বাচ্চার গুণগত মানও দিন দিন নিম্নমুখী হয়ে পড়েছে এবং খামারিদের বাধ্য করা হচ্ছে কোম্পানির নির্দিষ্ট ফিড কিনতে। এর ফলে, তারা স্বাধীনভাবে কম দামি এবং মানসম্পন্ন ফিড কিনতে পারছেন না, যা তাদের লাভের সুযোগ সীমিত করে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি খামারিদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ এর ফলে তাদের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে প্রতিযোগিতা হারিয়ে যাচ্ছে।

ফিড কোম্পানিগুলোর অন্য একটি ভয়ঙ্কর কৌশল হলো, তারা খামারিদের উপর চাপ সৃষ্টি করে খামারিদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে এবং তাদের বাধ্য করে মুরগির বাচ্চা কিনতে হলে বাধ্যতামূলক কোম্পানির ফিড কিনতে হবে । খামারিদের স্বাধীনভাবে কম দামি এবং মানসম্পন্ন ফিড কিনতে দেওয়া হয় না, যাতে তাদের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের স্বাধীনতা কমে যায়। এ কারণে খামারিরা নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না এবং বড় কোম্পানির পকেটে চলে যাচ্ছে তাদের লাভ। খামারি সঠিকভাবে ব্যবসা চালাতে না পারলে, এর ফলস্বরূপ খামারি তাদের পণ্য উৎপাদনে প্রতিযোগিতা হারায় এবং বাজারে নির্দিষ্ট কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া অবস্থান তৈরি হয়।

সিন্ডিকেটের আরও একটি ভয়ঙ্কর কৌশল হলো “কন্ট্রাক্ট ফার্মিং। নীল চাষের মত খামারির স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে যেমন : বড় কোম্পানিগুলো এখন ক্ষুদ্র খামারিদের সাথে চুক্তি করে উৎপাদন করিয়ে নিচ্ছে। এই চুক্তির শর্তগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যে, খামারিরা শুধু উৎপাদন করলেও, প্রকৃত মুনাফা চলে যাচ্ছে বড় কোম্পানির পকেটে। কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব খামারে উৎপাদন করে এবং আরও বেশি মুনাফা অর্জন করতে, একই সময় খামারিদের কাছে মুরগির বাচ্চা দ্বিগুণ দামে বিক্রি করে। এর ফলে, খামারিরা তাদের স্বাধীনতা হারাচ্ছে এবং ব্যবসায়িক চাপের কারণে অনেকেই তাদের খামার বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে, খামারিদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি, হামলা এবং মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়। সরকার বা প্রশাসন থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে, সিন্ডিকেটের শক্তি আরও বাড়ছে এবং খামারিদের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এছাড়া, সরকারি মিটিংগুলোতে প্রান্তিক খামারিদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। সরকারি সিদ্ধান্তগুলো সাধারণত বড় কর্পোরেট কোম্পানির প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নেওয়া হয়, যাদের স্বার্থ নিজেদের পক্ষে থাকে। এই ধরনের সিদ্ধান্ত প্রান্তিক খামারিদের স্বার্থকে উপেক্ষা করে, এবং তাদের কথা শোনা না হলে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে। সরকারের উচিত ছিল, পোল্ট্রি শিল্পের সকল স্তরের প্রতিনিধিদের মিটিংয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করা, যাতে খামারিদের সমস্যা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায় এবং তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে।

ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন, ফিড ইন্ডাস্ট্রি এবং মুরগির বাচ্চার উৎপাদকরা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করেছে, যারা একসাথে মিলিত হয়ে প্রান্তিক খামারিদের পকেট থেকে অতিরিক্ত মুনাফা হাসিল করে চলেছে। মুরগির বাচ্চার দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো, ফিডের দাম বাড়ানো, এবং চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কমিয়ে দৃষ্টিকটু মুনাফা অর্জন করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঈদ এবং অন্যান্য বড় উৎসবের সময়ে এই কৌশলগুলো আরও তীব্র করে তোলে, যাতে খামারিরা চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েন এবং বাজারে স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পোল্ট্রি শিল্পে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হলে, ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন এবং ফিড ইন্ডাস্ট্রির কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সঠিক বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা, খামারিদের জন্য খাদ্য এবং বাচ্চার সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের পদ্ধতি বন্ধ করা, এই সকল পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণ করতে হবে।

বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে বড় কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক মুরগি ও ডিম উৎপাদন খামারিদের জন্য বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোম্পানিগুলো নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য বাণিজ্যিক মুরগি উৎপাদন করছে, যার ফলে বাজারে মুরগির ও ডিমের অতিরিক্ত সরবরাহ হয়, এবং এই অতিরিক্ত সরবরাহ খামারিদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এদিকে, প্রান্তিক খামারিরা মূলত রেডি মুরগি উৎপাদন করে থাকে, কিন্তু বাজারে কোম্পানির বাণিজ্যিক মুরগির প্রভাব থাকার কারণে তাদের উৎপাদন ন্যায্য মূল্য পায় না।

এই সমস্যার সমাধান হিসেবে, সরকারের উচিত হবে কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক মুরগি এবং ডিম উৎপাদন বন্ধ করা, যাতে প্রান্তিক খামারিদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও লাভজনক বাজার তৈরি হয়। কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করবে এবং প্রান্তিক খামারিরা রেডি মুরগি উৎপাদন করবে। এর ফলে, বাজারে ভারসাম্য ফিরে আসবে, এবং খামারিরা তাদের উৎপাদন খরচ পূরণ করতে পারবেন। এই পরিবর্তন বাস্তবায়িত হলে, বাজারের নিয়ন্ত্রণ বড় কোম্পানির একচেটিয়া ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে খামারিদের হাতে ফিরে আসবে, যা শুধু খামারিদের জন্য নয়, বরং পুরো পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও সুফল বয়ে আনবে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রান্তিক খামারিরা তাঁদের উৎপাদন সহজভাবে বিক্রি করতে পারবেন এবং কোম্পানির সিন্ডিকেটের শোষণের হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
এছাড়া, এটি খামারিদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে টেকসই করার জন্য একটি কার্যকর পদক্ষেপ হবে।

সরকারকে দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন দেশের পোল্ট্রি শিল্পের সংকট সমাধান হয় এবং প্রান্তিক খামারিরা সিন্ডিকেটের শোষণ থেকে মুক্তি পায়। ডিম মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে ভোক্তারাও সস্তায় প্রোটিনের স্বাদ নিতে পারবে

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS