দিনাজপুর প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে ঘুষ দুর্নীতির ব্যপক অভিযোগে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চার ঘণ্টা ব্যপী তদন্ত করেছে, এলাকাবাসীর আন্দোলনের মুখে রাত ৮টার দিকে অফিস হতে পালিয়ে যায়।
ঠাকুরগাঁও জেলার উত্তর গড়েয়া এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে মো:মিজানুর রহমান ১০৬ জরুরী হেল্প নাম্বারে অভিযোগ দায়ের করলে ৩০ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে দিনাজপুর জেলা দুনীতি দমন কমিশন (দুদক) এর সহকারী পরিচালক মো: ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে উপ-সহকারী পরিচালক মোঃ কামরুন নাহার সরকার, সহকারী পরিদর্শক মোঃ মিজানুর রহমান ও উচ্চমান সহকারী মোঃ শাহজাহান আলী সম্বনয়ে একটি তদন্ত দল অভিযোগের ভিত্তিতে সাব রেজিস্ট্রি অফিসে এলে ও তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্নীতির সাথে জড়িত সাব-রেজিস্ট্রারের তল্লী বাহক নকল নবিশ সুমন চন্দ্র রায়, রশিদ সহ আরও কয়েকজন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য প্রমাণ সরিয়ে নিয়ে ঘুষখোর অফিসারের ঘাস কামরায় তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপন করে। ফলে দুদকের তদন্ত টিম উক্ত রুমের তালা ভেঙে প্রবেশ করে ঘুষ দুর্নীতির সাথে জরিত সাব রেজিস্টার রিপন মণ্ডল কে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসা করেন দুদক টিম। অফিসারদ্ব স্থানীয় অভিযোগকারীসহ সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে দীর্ঘক্ষন ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত সাব-রেজিস্ট্রারকে ব্যপক জিজ্ঞাসা ও শুনানী করেছেন। এসময় অভিযোগকারীরা মুখোমুখি ঘুষ দূর্নীতির অভিযোগ করেছেন।
জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর সহকারী পরিচালক মো: ইসমাইল হোসেন জানায়, প্রাথমিক তদন্তে সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনিত ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে স্বীকার করে তিনি বলেন, ভুয়া দলিল করতে মাঠ পর্চা ও নামজারী থাকার পরেও বাটোয়ারা দলিলের অজুহাতে ৭ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করার তথ্য পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে আরও অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেছেন এবং সেগুলো আমলে নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তের স্বার্থে তারা সিসি ক্যামেরার মেসিনটি জব্দ করেন।
তদন্ত শেষে দুদক টিম স্থান ত্যাগ করতে চাইলে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা রিপন মণ্ডলের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করলে একপর্যায়ে বীরগঞ্জ থানার পুলিশের ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে।
অভিযোগকারী মিজানুর রহমান জানান, সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে সীমাহীন ঘুষ দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হয়ে দুদকের জরুরী হেল্প নাম্বার ১০৬ এ অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছি।
অপর দিকে মরিচা ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের নুর ইসলামের পুত্র মিজানুর রহমান জানায়, প্রায় ১মাস পূর্বে আমার একটি জমির সকল কাগজ পত্র ঠিক থাকার পরেও বেশ কয়েকদিন ঘুরিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে জমিটি রেজিস্ট্রি দেয়।
বীরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম মুরর্শিদ জানায়, তিনি যোগদানের পর হতে ঘুষ দুর্নীতির ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য তাকে ডেকে সাবধান করে দেন। তারপর তিনি অফিসের সামনে ঘুষ দুর্নীতি মুক্ত সাইনবোর্ড লাগিয়ে অন্য উপজেলায় কর্মরত তার ব্যক্তিগত তল্লী বাহক নকল নবিশ সুমন চন্দ্র রায়কে দিয়ে জমজমাট ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যান। তার গ্রেফতার ও বদলির দাবিতে জনগণের এ আন্দোলনের সাথে বীরগঞ্জবাসী হিসেবে আমরাও একাত্মতা ঘোষণা করেছি।
অভিযুক্ত বীরগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার রিমন মণ্ডল তার বিরুদ্ধে আনিত ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে জিজ্ঞেসাবাদে সন্তোষজনক কোন জবাব দিতে পারেন নাই এবং তিনি জানান আমি একা দূর্নীতি করি এটি সত্য নয়, এ দূর্নীতির সাথে দলিল লেখকদের রয়েছে একটি বিশাল নেটওয়ার্ক।
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: ফজলে এলাহী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজ কুমার বিশ্বাস বিকাল ৫ টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, হঠাৎ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বীরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে আমার জানা নেই। সাংবাদিক ও স্থানীয় ছাত্রনেতাদের মাধ্যমে জানতে পেরে ছুটে এসেছি।
সন্ধ্যা ৭ টায় জেলা রেজিস্ট্রারের মোঃ হেলাল উদ্দিন পরিদর্শন করলে তার সামনে সাব-রেজিস্ট্রার তার খাস কামরায় স্থাপন করা সিসি ক্যামেরার পাস ওয়ার্ড তিনি জানেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলে জেলা রেজিস্ট্রার এটিকে দায়িত্বের চরম অবহেলা ও উদাসিন বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঘটনাটি আমি উদ্ধতন কর্তিপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানায়। বিধিমতে অভিযোগ প্রমানিত হওয়া পযর্ন্ত সকলের প্রতি আবেদন করেন যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না ঘটে।
তিনি চলে যাওয়ার পর পর ঘুষ দুর্নীতির অভিযুক্ত বীরগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার রিমন মণ্ডল রাত্রি ৮টার দিকে কাউকে না জানিয়ে অফিস হতে চলে যায়।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply