শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

রমজান সব মাস থেকে অধিক মর্যাদাশীল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪
  • ১০৩ Time View

আরবি বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজান। রমজান মুসলমানদের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। মহান আল্লাহ তাআলা এই রমজান মাসকে করেছেন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বছরের বাকি এগারোটি মাসের থেকে এই মাসটি সমহিমায় উদ্ভাসিত।

ফারসি শব্দ রোজার আরবি অর্থ হচ্ছে সওম, বহুবচনে সিয়াম। সওম বা সিয়ামের বাংলা অর্থ বিরত থাকা। ইসলামি শরিয়তে সওম হল আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশে নিয়তসহ সুবহে সাদিকের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা।

মাহে রমজান বছরের বাকি এগার মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের বিশেষত্ব অনেক।

১. এ মাসেই মানুষ ও জিন জাতির মুক্তির সনদ পুরো কুরআন মাজিদ একত্রে লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে বাইতুল ইযযতে অবতীর্ণ হয় এবং রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সর্বপ্রথম এ মাসেই ওহী অবতীর্ণ হয়। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে-

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ فِیْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰی وَ الْفُرْقَانِ…

রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল  করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়াত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ।  (সুরা বাকারা  ১৮৫)

২. এ মাসে রহমতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া  হয়। হাদিস শরিফে এসেছে- إِذَا كَانَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الرّحْمَةِ. রমজান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। (মুসলিম, হাদিস ১০৭৯/২)

৩. অন্য এক হাদিসে এ মাসের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে- إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الجَنّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنّمَ، وَسُلْسِلَتِ الشّيَاطِينُ. যখন রমজান মাসের শুভাগমন হয়, জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা  হয়। (বুখারি, হাদিস ৩২৭৭, মুসলিম ১০৭৯/১)

৪. এ মাস জাহান্নাম থেকে নাজাত লাভের মাস। সুতরাং বেশি বেশি ইবাদত ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে মুক্তির পরওয়ানা লাভ করার এটিই সুবর্ণ সুযোগ। হাদিস শরিফে এসেছে-

إِنّ لِلهِ عِنْدَ كُلِّ فِطْرٍ عُتَقَاءَ. আল্লাহ তাআলা প্রত্যহ ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ ২২২০২)

৫. ব্যবসায়ী মহলের একটি বিশেষ মৌসুম থাকে, যখন তাদের ব্যবসা হয় খুব জমজমাট ও লাভজনক। সে মৌসুমে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি আয় হয়। আখেরাতের ব্যবসায়ীদের জন্য আখেরাতের সওদা করার উত্তম মৌসুম হল এই রমজান মাস। কেননা এ মাসে প্রতিটি আমলের ছওয়াব অনেক গুণ বেশি লাভ হয়। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- عُمْرَةٌ فِي رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجّةً. রমজানের ওমরা হজ্ব সমতুল্য। (জামে তিরমিজি ৯৩৯; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ১৯৮৬)

অন্য এক বর্ণনায় (যা সনদের দিক থেকে দুর্বল) এসেছে- مَنْ تَقَرّبَ فِيهِ بِخَصْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ كَانَ كَمَنْ أَدّى فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ، وَمَنْ أَدّى فَرِيضَةً فِيهِ كَانَ كَمَنْ أَدّى سَبْعِينَ فَرِيضَةً فِيمَا سِوَاهُ. রমজান মাসে যে ব্যক্তি একটি নফল আদায় করল সে যেন অন্য মাসে একটি ফরয আদায় করল। আর যে এ মাসে একটি ফরয আদায় করল সে যেন অন্য মাসে সত্তরটি ফরয আদায় করল। -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩০৫-৩০৬

অর্থাৎ এ মাসে নফল আদায় করলে অন্য মাসের ফরযের ন্যায় ছওয়াব হয়। আর এ মাসের এক ফরযে অন্য মাসের ৭০ ফরজের সমান সওয়াব হয়।

এ তো হল রোজা ছাড়া এ মাসের অন্যান্য আমলের ছওয়াব। আর রোজার ছওয়াব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা নিজেই ইরশাদ করেন-

إِنّ الصّوْمَ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ. নিশ্চয় রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিব। (মুসলিম ১১৫১/১৬৫) 

এ সওয়াবের পরিমাণ যে কত তা একমাত্র তিনিই জানেন।  এ প্রসঙ্গে ‘রোজার ফজিলত’ শিরোনামে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

রমজান মাস রহমত, বরকত, মাগফিরাত, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত লাভের মাস। তাই এ মাস পেয়েও যে ব্যক্তি স্বীয় গুনাহ মাফ করাতে পারল না তার জন্য স্বয়ং জিবরাঈল আ. বদদুআ করেছেন এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাহমাতুল্লিল আলামীন হয়েও আমীন বলে সমর্থন জানিয়েছেন।  হাদিস শরিফে এসেছে-

أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ رَقَى الْمِنْبَرَ فَقَالَ: آمِينَ، آمِينَ، آمِينَ، قِيلَ لَهُ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا كُنْتَ تَصْنَعُ هَذَا؟ فَقَالَ: قَالَ لِي جِبْرِيلُ: رَغِمَ أَنْفُ عَبْدٍ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا لَمْ يُدْخِلْهُ الْجَنّةَ، قُلْتُ: آمِينَ. ثُمّ قَالَ: رَغِمَ أَنْفُ عَبْدٍ دَخَلَ عَلَيْهِ رَمَضَانُ لَمْ يُغْفَرْ لَهُ، فَقُلْتُ: آمِينَ. ثُمّ قَالَ: رَغِمَ أَنْفُ امْرِئٍ ذُكِرْتَ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيْكَ، فَقُلْتُ: آمِينَ.

নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উঠে আমীন, আমীন, আমীন বললেন। তাঁকে বলা হল, হে রাসূল! আপনি তো এরূপ করতেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জিবরাঈল আমাকে বললেন, ঐ ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেয়েও (তাদের খেদমত করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না। 

তখন আমি বললাম, আমিন। অতপর তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। আমি বললাম, আমিন। জিবরাঈল আবার বললেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, যার নিকট আমার নাম আলোচিত হল অথচ সে আমার উপর দরূদ পড়ল না। আমি বললাম, আমিন। (আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৬৪৬; সহীহ ইবনে হিব্বান ৯০৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রমজানের হক আদায় করার তওফিক দান করুন এবং নবীজির অভিসম্পাৎ থেকে রক্ষা করুন। আমিন!

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS