বাংলাদেশে প্রতি চারজনে একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। এ জন্য বছরে ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় দেশে। তবে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের জন্য দায়ী এই উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধযোগ্য বলে জানান চিকিৎসকরা।
শনিবার (২ মার্চ) রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ‘ইমপ্রুভিং কার্ডিওভাসকুলার হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরেন চিকিৎসকরা। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান), গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এবং রিজলভ টু সেভ লাইভস (আরটিএসএল)।
রিজলভ টু সেভ লাইভসের প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর সাবেক পরিচালক ডা. টম ফ্রিইডেন বলেন, বাংলাদেশে প্রতি চারজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। তবে সংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু প্রতিরোধে বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রগতি সাধন করেছে। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধেও বিশ্বে অনুকরণীয় হতে পারে দেশটি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা গ্রহণকারীর সংখ্যা ২০ গুণ এবং চিকিৎসাসেবার মান দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা প্রদানে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করা হলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে এবং অসংখ্য জীবন বাঁচানো যাবে বলে তিনি মনে করেন।
বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত নগরায়ন, কায়িক পরিশ্রমের অভাব, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ এবং অন্যান্য আর্থসামাজিক ও জীবনযাত্রা সম্পর্কিত বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ এবং উচ্চ রক্তচাপজনিত অন্যান্য অসংক্রামক রোগের প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। এই রোগের প্রকোপ কমাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।
সোডিয়াম অর্থাৎ খাবার লবণকে উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করে ডা. ফ্রিইডেন বলেন, উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সোডিয়াম লবণের ব্যবহার কমাতে সরকারের নীতি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত খাবার লবণের জন্য পুরো বিশ্বে বছরে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং প্রতি পাঁচটি মৃত্যুর চারটিই ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ সনাক্ত করা, চিকিৎসা প্রদান এবং পরবর্তী কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা রিজলভ টু সেভ লাইভস-এর সহযোগিতায় ২০১৮ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনসিডিসি) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ (এনএইচএফবি) যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণের ফলে বিগত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এখন ১৭১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু রয়েছে এই কার্যক্রম এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের হার বেড়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ২৬ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর সম্প্রসারণের ফলে দেশব্যাপী আরও অধিকসংখ্যক জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে হৃদরোগ পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করছে জিএইচএআই এবং তার সহযোগী সংস্থাসমূহ। জিএইচএআই এর বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, স্বাস্থ্য কর্মসূচি হতে হবে সমন্বিত। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ওষুধ প্রাপ্তি বৃদ্ধি এবং লবণ ব্যবহার হ্রাসে বাংলাদেশের চলমান অগ্রগতিতে অব্যাহতভাবে সহায়তা প্রদানে আগ্রহী তারা।
উচ্চ রক্তচাপজনিত অসংক্রামক রোগের চাপ কমাতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিরাও।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply