ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভুল চিকিৎসায় সেলিনা বেগম (৪৫) নামে এক গৃহিনীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল ভাঙচুর করেছে রোগীর স্বজনরা।
শনিবার (৮ জুলাই) সকাল ৭টায় ভৈরব পৌর শহরের কমলপুর নিউ টাউন এলাকার গ্রামীণ হাসপাতালে এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সেলিনা বেগম পৌর শহরের জগন্নাথপুর দক্ষিণ পাড়া আওয়ালকান্দা এলাকার আক্তার মিয়ার স্ত্রী।
স্বজনরা জানান, ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌর শহরের নিউ টাউন এলাকায় গ্রামীণ হাসপাতালে জরায়ু অপারেশনের জন্য ভর্তি করা হয় সেলিনা বেগমকে। ডাঃ ফাহিমা শারমিন হানীর চিকিৎসাধীন দিনব্যাপি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে শুক্রবার (৭ জুলাই) বিকাল ৪টায় জরায়ু অপারেশন করেন। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মোটামুটি ভাল থাকার পর থেকে রাত ১১টায় সেলিনা বেগমের অবস্থা অবনতি হতে থাকে। রাত ৪টায় বেশি খারাপ হলে চিকিৎসক সেলিনা বেগমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন।
এ বিষয়ে রোগীর মেয়ের জামাই শাহ আলম জানান, আমার শ্বাশুরীকে বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে পরদিন শুক্রবার ১১টায় অপারেশনের জন্য ভর্তি করা হয়। এ সময় আমার স্ত্রী ও শ্যালক উনার সাথে ছিলেন। বিকাল ৪টায় অপারেশন করার পর রাত ২টায় আমার শ্বাশুরীর অবস্থা খারাপ হয়। চিকিৎসকদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা কোন পাত্তাই দেয়নি। রাত ৪টায় অজ্ঞান অবস্থায় আমার শ্বাশুরীকে ঢাকা নিয়ে যেতে বলে। আমরাও বুঝতে পারছিলাম না কি করবো। আমার শ্বাশুরীর কোন সাড়া শব্দ ছিল না। পথিমধ্যে একটি হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে তারা বলে আমার শ্বাশুরী মারা গেছে। আমরা তা জেনেও ভোরে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্ব্যরত চিকিৎসক আমার শ্বাশুরীর মৃত্যু নিশ্চিত করেন। সকাল ৭টায় আমরা আবারও হাসপাতালে ফিরে আসলে স্টাফরা গেইট খুলতে চায়নি। পরে আমাদের স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে যায়।
রোগীর স্বামী আক্তার মিয়া জানান, তারা আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলেছে। সামান্য জরায়ু অপারেশনে একজন নারী কিভাবে মরতে পারে। এর আগেও তাঁরা আরো দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে অপচিকিৎসার মাধ্যমে। আমরা আগে জানলে এ হাসপাতালে আসতাম না।
হাসপাতালের এমডি বদিউজ্জামান বদি জনান, ডা. ফাহিমা শারমিন হানী ও ডাঃ দীপঙ্কর রায় এর তত্ত্বাবধানে সেলিনা বেগমের চিকিৎসা হয়েছিল। শুক্রবার বিকালে অপারেশন হয়। সেলিনা বেগমের অবস্থা অবনতি হলে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়। পথিমধ্যে তিনি মারা যায়। সকাল ৭টায় পৌর ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলু মিয়ার নেতৃত্বে হাসপাতাল ভাঙচুর করেছে। থানা পুলিশকে খরব দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলু মিয়া বলেন, এলাকাবাসী খবর দিলে আমি এসে দেখি উত্তেজিত জনতা হাসপাতাল ভাঙচুর করছে। আমি তাদের ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করি। পরে থানা পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
একাধিক অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ ফাহিমা শারমিন হানীর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার সাথে যোগাযোগের বিষয়ে কোন সাড়া শব্দ করেনি। এমনকি ডা. ফাহিমা শারমিন হানীর মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. বুলবুল আহম্মদ বলেন, গ্রামীণ হাসপাতালের দুর্ঘটনা আমি লোকমুখে শুনেছি। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply