তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ২০২৫ সাল নাগাদ ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। তবেবাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) বিশ্বাস করে শুধু ৫ বিলিয়ন ডলার নয়, ২০৩১ সাল নাগাদ এ খাত থেকে ২ হাজার কোটি ডলার রপ্তানি আয় করা সম্ভব। সরকার, ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিয়া—এ তিনটি স্টেকহোল্ডার সমন্বিতভাবে কাজ করলেই সেটি সম্ভব হবে। কাজগুলো হলো তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন, দেশে-বিদেশে ইন্ডাস্ট্রি ব্র্যান্ডিং এবং প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল তৈরি।
গতকাল রাজধানীর পূর্বাচলে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে চার দিনব্যাপী আয়োজিত বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। তিনি বলেন, ‘২০২৫ সাল খুব দূরে নয়, কাল বাদে পরশু। ২০৩১ সাল কিংবা ২০৪১ সালও খুব বেশি দূরে নয়। আমাদের সামনে অনেক সম্ভাবনা। আমরা যেন সে সম্ভাবনার নৌকাটাকে মিস না করি।’
‘ওয়েলকাম টু স্মার্টভার্স’ স্লোগান সামনে রেখে শুরু হওয়া এ বৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের জাতীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত চারদিনব্যাপী এ প্রদর্শনীতে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সক্ষমতা, সম্ভাবনা ও উদ্ভাবনকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিদিনই আমাদের সফটওয়্যার নির্ভরশীলতা বাড়ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফটওয়্যারের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে বেসিসের সদস্যরা সবচেয়ে বেশি অবদান রাখবেন বলে আশা করি। বেসিস সভাপতি ৫ বিলিয়ন থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট, সরকারি সহায়তা এবং ইন্ডাস্ট্রির জন্য সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলেছেন। তিনি তিনটি খাতকে একটি ছাতার নিচে আনতে বলেছেন। এক্ষেত্রে আগামীতে বিস্তারিত কাজ করার সুযোগ রয়েছে। যদি এ প্রস্তাব রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হয়, তবে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই সেটা বিবেচনা করবেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ই-ফাইলিং, প্রশ্নোত্তর পর্বসহ জাতীয় সংসদের ডিজিটালাইজেশনে কাজ করেছে বেসিস। ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মা স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট গভর্নমেন্ট নামে চারটি স্তম্ভ নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রেও বেসিস অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব সুবিধা অব্যাহত থাকবে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম প্রোগ্রামার হানিফ উদ্দিন মিয়ার কোডিং থেকে বাংলাদেশের সফটওয়্যার খাতের যাত্রা। এখন এ খাত বহুগুণ সমৃদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী আমাদের রফতানি বিকেন্দ্রীকরণের কথা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি খাতই একমাত্র খাত, যেখানে শুধু মেধার মাধ্যমে শতভাগ ভ্যালুয়েশন সম্ভব। আমাদেরকে দুটি জায়গায় কাজ করতে হবে, একটি হলো মেধাসম্পদ সংরক্ষণ ও আরেকটি হলো শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত তথ্যপ্রযুক্তি খাত যে করমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে, সেটির সময় বৃদ্ধির জন্য বেসিসসহ আইসিটি খাতের পাঁচটি সংগঠনকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘আইসিটি এখন অন্যতম শিল্প খাত হয়ে উঠেছে। ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বর্তমানে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার রফতানি হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ সেটি ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে সরকারি ও বেসিস যৌথভাবে কাজ করছে। রফতানি উৎসাহিত করতে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় ও ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরিতে আইসিটি বিভাগের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘এক লাখ ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটের প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রবলেম সলভার তৈরিতে প্রাথমিক থেকেই কোডিং শেখানো হচ্ছে। বেসিস সদস্যদের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশের প্রয়োজন মেটাতে এআই ও মাইক্রোচিপ তৈরির কাজ করছে। স্মার্ট বাংলাদেশের সফলতা নির্ভর করবে বেসিসের সফলতার ওপর।’
বেসিস সফটএক্সপো ২০২৩-এর আহ্বায়ক ও বেসিসের সহসভাপতি (প্রশাসন) আবু দাউদ খান জানান, ‘বিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, মেটাভার্সসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যে অগ্রযাত্রা চলমান, সে যাত্রায় বাংলাদেশকেও এগিয়ে নিতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের মেলার স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘ওয়েলকাম টু দ্য স্মার্টভার্স’।’ তিনি আরো বলেন, ‘এবারের আয়োজনে ব্যবসা সম্প্রসারণ কিংবা নতুন উদ্যোগকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিজনেস লিডারস মিট ও সমাপনী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আট শতাধিক পদস্থ কর্মকর্তা অংশ নেবেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে অ্যাম্বাসেডর নাইট, মন্ত্রীদের অংশগ্রহণে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স, তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল ও চাকরির খোঁজ দিতে আইটি জব ফেয়ার এবং ক্যারিয়ার ক্যাম্প, বিটুবি ম্যাচমেকিং সেশন, ফ্রিল্যান্সিং কনফারেন্স, স্টার্টআপ কনফারেন্সসহ নানা আয়োজন থাকছে। এছাড়া সফটএক্সপোতে অন্তত ১৮টি সেমিনার ও গোলটেবিল বৈঠক থাকছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট খাতের সরকারি-বেসরকারি নেতারা আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।’
আয়োজকরা জানান, এক্সপো উপলক্ষে এরই মধ্যে দেশের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালিত হয়েছে। সফটএক্সপোর প্ল্যাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড। গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে হুয়াওয়ে। সিলভার স্পন্সর হিসেবে রয়েছে রবি, পাঠাও ও ফাইবার অ্যাট হোম।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply