দেশীয় ব্যবসায়ীদের জন্য বিদেশে বিনিয়োগের (অফশোর ইক্যুইটি বিনিয়োগ) সুযোগ উন্মুক্ত করল বাংলাদেশ। তবে এ সুযোগ পাবে কেবলমাত্র রফতানিকারকরা। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। মূলধনি হিসাব লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা ২০২২ নামের ওই নীতিমালায় সাতটি শর্তে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের বিধিমালার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে বৈদেশিক মুদ্রায় লেনদেনে নিয়োজিত দেশের সব অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে পাঠিয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট, ১৯৪৭ এর ২৭ নম্বর ধারার ক্ষমতাবলে মূলধনী হিসাবের লেনদেন (বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ) বিধিমালা, ২০২২ জারি করেছে।
এ বিধির আওতায় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান তাদের রিটেনশন কোটা হিসাব থেকে বিদেশে ইক্যুইটি বিনিয়োগ করতে পরবে। এক্ষেত্রে কতিপয় শর্ত বিধিতে রাখা হয়েছে। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের বার্ষিক গড় রফতানি আয়ের ২০ শতাংশ বা সর্বশেষ নিরীক্ষিত বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে প্রদর্শিত নিট সম্পদের ২৫ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ অর্থ বিদেশে ইক্যুইটি হিসেবে বিনিয়োগ করতে পারবে।
বিধিমালা অনুযায়ী, আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিসহ বাংলাদেশ ব্যাংককে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য ১৫ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি রাখা হয়েছে। কমিটির সভাপতি হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকে অবহিত করাসহ পত্রের কপি আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হবে।
বিদেশে কোম্পানি গঠনের বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা বিধিমালাতে উল্লেখ রয়েছে। বিদেশে গঠিত কোম্পানির সব পাওনা, যেমন মুনাফা বা লভ্যাংশ, সুদ, শেয়ার বিক্রয়লদ্ধ অর্থ, বিনিয়োগ বিলুপ্তির ফলে অবশিষ্ট অর্থ, বেতন, রয়্যালটি, কারিগরি জ্ঞান ফি, পরামর্শ ফি, কমিশন, ইত্যাদি অর্জিত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশে পাঠাতে হবে।
বিনিয়োগের অপব্যবহারকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় মানিলন্ডারিং হিসেবে গণ্য হবে বলে বিধিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এতদিন বিশেষ বিবেচনায় বা কেইস টু কেইস ভিত্তিতে কিছু কোম্পানি বিদেশে বিনিয়োগ করলেও এ ব্যাপারে সরকারের আনুষ্ঠানিক কোন বিধি ছিল না। আগ্রহীদের আবেদনের বিপরীতে বিনিয়োগের অনুমোদন দিত বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন নীতিমালা তৈরির মধ্য দিয়ে দেশের ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগের সরাসরি সুযোগ তৈরি হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৩ সালে প্রথম একটি প্রতিষ্ঠানকে বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেয় সরকার। বর্তমানে দেশের আটটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি আছে। এরা হলো ডিবিএল গ্রুপ, মবিল যমুনা, এসিআই হেলথকেয়ার, স্কয়ার ফার্মা, ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালস, বিএসআরএম স্টিল, স্পেকট্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং ও আকিজ গ্রুপ।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply