শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন

চিটাগাং ডায়াবেটিস সামিট ২০২২ অনুষ্ঠিত

তানজিম হাসান পাটোয়ারী
  • আপডেট : সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২২
  • ২৬৮ Time View

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো চিটাগাং ডায়াবেটিস সামিট ২০২২। গত ১৩ই নভেম্বর, রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে এটি আয়োজন করা হয়।

তরুণ প্রজন্মকে ডায়াবেটিস বিষয়ে সচেতন করাই ছিল এ সামিটের মূল উদ্দেশ্য। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশের সবচেয়ে বেশি ডায়াবেটিস আছে যে তিনটি জেলায় তার মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির বিভিন্ন কর্মকান্ড থাকলেও তরুণদের মধ্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা খুবই কম। ডায়াবেটিসের এই অবস্থা প্রতিহত করার লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করার জন্য প্রথমবারের মতো চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো এ সামিট।

সামিটের আয়োজনে ছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডায়াবেটিস ও হরমোন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নেক্সট জেনারেশন সিকুয়েন্সিং এণ্ড ইনোভেশন ল্যাবরেটরি (এনরিচ), ডিজিস বায়োলজি এন্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ (ডিবিএমই), এবং এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেন এর জনস্বাস্থ্য বিভাগ। দিনব্যাপী এ আয়োজনে ছিল ডায়াবেটিস নিয়ে ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা, ডকুমেন্টারি তৈরি প্রতিযোগিতা, ডায়াবেটিস নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা, এবং ডায়াবেটিস নিয়ে চট্টগ্রামে গত ৪ বছরে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা কর্মকাণ্ড উপস্থাপন।

আয়োজনের উদ্বোধন করেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেনের ডিন ড. ডেভিড টেইলর। এছাড়া উদ্বোধনী পর্বে আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম এবং অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক ডা. মাসুদ রানা এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালস এর সেলস কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার মজুমদার। আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডাঃ ফারহানা আক্তার ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেনের শিক্ষক ও গবেষক ডঃ নাজমুল আলম।

সামিটে ডায়াবেটিস কেন হয়, এর লক্ষ্মণ, কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে একটি কর্মশালা পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগের প্রধান ডাঃ ফারহানা আক্তার। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃস্কুল এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কুইজ প্রতিযোগিতা। এতে চ্যাম্পিয়ন হয়  ডাঃ খাস্তগীর সরলারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, প্রথম রানার্স আপ হয় চট্টগ্রাম গভর্মেন্ট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, দ্বিতীয় রানার্স আপ হয় বাংলাদেশ বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, প্রথম রানার্স আপ হয় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এবং দ্বিতীয় রানার্স আপ হয় ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি চিটাগং (ইউএসটিসি)। ডায়াবেটিস রোগীর জীবন নিয়ে ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমতিয়াজ ইমন, সারিয়া কুন্ডু এবং ইউএসটিসির হৃদি দাস। ডকুমেন্টারি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় সৈয়দ আবরার ইয়াসিন। এসব প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডাঃ আবুল ফয়সাল নুরুদ্দিন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডাঃ এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী, ফটোগ্রাফার সৌরভ দাশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারজানা শারমিন ও আফরোজা আক্তার তন্বী।

পরবর্তীতে উপস্থাপিত হয় চট্টগ্রামে পরিচালিত ডায়াবেটিস নিয়ে  বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধ ও সাম্প্রতিক তথ্য। এতে ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, গৃহিণীদের মধ্যে ডায়াবেটিসের হার সবচেয়ে বেশি এবং তরুণদের মধ্যে এর হার দিন্দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নাজমুল আলম বলেন, ৭০ ভাগ ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে স্নায়ু দুর্বলতা, চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিক ফুট, কিডনী সমস্যা, হতাশা দেখা যাচ্ছে।

এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান অবহিত করেন, প্রতি দুজনের একজন ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে জিনগত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, ফলশ্রুতিতে তাদের মধ্যে ইনসুলিন এবং মেটফরমিন এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ডায়াবেটিসের ঔষধ কাজ করছে না। চট্টগ্রামে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগী লক্ষ্মণীয় হারে বাড়ছে। আর এই জিনগত পরিবর্তনকে ডায়াবেটিসের অগ্রীম পরীক্ষা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. ইসমাঈল খান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের  অধ্যাপক ডা. শাহানা আক্তার, সিভাসুর  অধ্যাপক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ তৌহিদ হোসাইন, অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলাম, অধ্যাপক ড. এস এম রফিকুল ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক  ডাঃ মোঃ ইসমাঈল খান বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মকান্ডে যত বেশি শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা যাবে তত বেশি ডায়বেটিস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ শাহেনা আক্তার বলেন, ডায়বেটিস সংক্রান্ত যেকোনো কর্মকাণ্ডে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। চট্টগ্রামে ডায়বেটিসের সেবা উন্নততর করবার ক্ষেত্রে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং ভবিষ্যতের যেকোনো গবেষণায় তারা সম্পৃক্ত থাকার জন্য সদা প্রস্তুত।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন বলেন, ডায়বেটিস নিয়ে শুধু চিকিৎসা দিলেই চলবে না, এর জন্য আরো প্রয়োজন বিস্তর গবেষণা। চট্টগ্রাম থেকে নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে যেটি খুবই আশাব্যঞ্জক একটি ব্যাপার।এই ধরনের গবেষণা ভবিষ্যতে আরো বেশি হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি ডায়বেটিস নিয়ে গবেষকদের আরো বেশি কাজ করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। 

পুরো আয়োজনটি সঞ্চালনা করে নাবিলা রহমান জুঁই এবং ফারহানা ইয়াসমিন মুন্নি। অনুষ্ঠানে ৩৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৭৭জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতায়  ছিলো বেক্সিমকো ফার্মা এবং শিওরসেল চট্টগ্রাম। এছাড়া আয়োজনের পার্টনার হিসেবে ছিলো চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ এন্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন পাব্লিক হেলথ ক্লাব, হোয়াইট বর্ড সায়েন্স ক্লাব, এবং ইউএসটিসি বিবিটেক সায়েন্স ক্লাব। আয়োজনের ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে ছিলো “বিজ্ঞানচিন্তা”।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS