কভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পাশাপাশি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে তাদের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে বলে ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিন গতকাল সাংবাদিকদের জানান তিনি।
জাহিদ মালেক বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে সরকার আতঙ্কিত না হলেও বিষয়টি আশঙ্কাজনক। সংক্রমণ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। আমরা জেলা প্রশাসকদের বলেছি, ‘আপনারা গতবার যেভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেছেন, এবারও সেটা করতে হবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওমিক্রনের কারণে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এগুলো বাস্তবায়নের মূল হাতিয়ার জেলা প্রশাসন। বাসে, ট্রেনে ও স্টিমারে যখন লোক চলবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে; সামাজিক দূরত্ব যতটুকু সম্ভব মানতে হবে। বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। এ বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরেছি। আমরা বলেছি, বিভিন্ন বন্দরে যেসব স্ক্রিনিং চলছে, সেগুলো যেন তারা ঠিকমতো দেখেন। যারা কোয়ারেন্টাইনে আছেন, তারা অনেক সময় এটা ঠিকমতো মানেন না। এ বিষয়ে নজরদারি করতে বলেছি। যারা স্বাস্থ্যবিধি মানবেন না, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। জাহিদ মালেক বলেন, জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় ১০টি করে আইসিইউ শয্যা ও ১০টি ডায়ালাইসিস শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা এখন ইন্সটলেশনের পর্যায়ে আছে। এটা আগেই একনেকে পাস করা। ইনশাআল্লাহ অল্প সময়ের মধ্যেই সব জেলায় এগুলো বসে যাবে।
অন্যদিকে, স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা ও সম্মান করেন নাÑজনপ্রতিনিধিদের এমন অভিযোগের ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীরা… নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, তাদের স্থানীয় প্রশাসন বা অন্য সরকারি অফিস সে ধরনের সম্মান দেয় না। তারা যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, কিছু কমিটমেন্ট আছে, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয় না। এসব বিষয় নিয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ হয় না, এটা দুঃখজনক। জনপ্রতিনিধিদের এই অভিযোগের বিষয়ে আরও সচেতন হতে জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে।’
প্রবাসীদের পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রেও ভোগান্তির কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি প্রবাসীরা সঠিক সময়ে সেবা পান না; পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন নেয়াসহ নানা সেবা নিতে হয়রানির শিকার হন। এসব হয়রানি দূর করে প্রবাসীদের সেবা সহজ করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’
আব্দুল মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাসপোর্ট ও এনআইডি তৈরি করে না। বিদেশে থাকা প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করে দেশে পাঠালে সেগুলো ফেরত যেতে অনেক দেরি হয়, ফলে প্রবাসীরা অসন্তুষ্ট হন। তিনি জানান, প্রবাসীদের কিছু দুঃখের কথা তিনি সম্মেলনে ডিসিদের বলেছেন। সেসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের প্রায় এক কোটির বেশি প্রবাসী বিদেশে আছেন। তারা অভিযোগ করেন, তারা পাসপোর্ট ঠিক সময়ে পান না, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পান না। তাদের অনেকে দেশে আসলে হয়রানির শিকার হন। তাদের ভূমি অনেকে দখল করে ফেলে, সময়মতো ম্যারেজ সার্টিফিকেট ও বার্থ সার্টিফিকেট এগুলো হয় না। তাদের ডেডবডি আনতেও তথ্য ঠিকমত পায় না। এ রকম নানা অভিযোগ আছে।
মোমেন বলেন, ‘আমরা আশা করি জেলা প্রশাসকরা এসব বিষয়ে আরও সচেতন হবেন যেন প্রবাসীদের আরও দ্রুত হয়রানি ছাড়া সেবা দেয়া যায়।’ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সামান্য বিষয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এসব খবরে বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ঠিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের আরও শক্ত অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। কোথাও একটা প্রতিমা ভেঙে ফেলল আর সারা পৃথিবীব্যাপী বিষয়টা ছড়িয়ে যায়। এখন পৃথিবীটা খুব কানেকটেড…। গ্রামেগঞ্জে যা হয় সেই খবর সব জায়গায় পৌঁছে যায়। এসব বিষয়ে তারা যেন খুব শক্ত অবস্থান নেন। এই ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে কখনও না হয়।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply