বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
কাস্টমসে হয়রানি প্রতিরোধে এনবিআরের নির্দেশনা গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার পাবে ৫ লাখ, আহতরা সর্বোচ্চ এক লাখ বাংলাদেশকে ৬০০ মিলিয়ন ইউরো দেবে জার্মানি ১০ লাখ কোটি টাকার বিদেশি ঋণ রেখে গেছে হাসিনা সরকার ২ স্বতন্ত্র পরিচালক পেল ডিএসই লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, মাস্টারকার্ড ও প্রিয়শপ এর যৌথ উদ্যোগে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য কো-ব্র্যান্ডেড টাইটেনিয়াম ক্রেডিট কার্ড চালু ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান: মির্জা ফখরুল আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ফরেন রেমিট্যান্স হাউসগুলোর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত দেশে প্রথমবারের মতো আর্মরশেল প্রটেকশনের ফোন নোট ৬০ এনেছে রিয়েলমি

রেডিওর সেকাল-একাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ৪৯০ Time View

কালের বিবর্তনে অন্য সকল কিছুর মতো পরিবর্তন এসেছে রেডিও ও এর ব্যবহারে। তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর কদর বেড়েছে বহুগুণ। এ অবস্থায় রেডিওর পুরোনো ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রাখতে এখনই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


১৯৩৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম রেডিও সংযোগ স্থাপিত হয়। আর গত শতাব্দীর শেষের দিকে এর জনপ্রিয়তা হয় তুঙ্গে। নয় থেকে নব্বই- এক কথায় সব বয়সী ব্যক্তিদের কাছেই এটি ছিল বিনোদনের অন্যতম সঙ্গী।  আজ থেকে এক দশক আগেও রেডিও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে এফ.এম. ছিল বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম। কিন্তু ইন্টারনেট প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তারের সাথে তাল মেলাতে একসময় অনলাইন রেডিও এবং পডকাস্ট যাত্রা শুরু করে এদেশে। ২০০৯ সালের দিকে এদেশে প্রায় দেড় শতাধিক রেডিও চ্যানেল ছিল যদিও এর অনেকগুলো পরবর্তী সময়ে তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। চলুন এবার শোনা যাক রেডিও সম্পর্কে মানুষের অনুভূতির কথা।


রাহেলা বেগম পেশায় একজন গৃহিণী। বয়স তার পঞ্চাশের কিছুটা উপরে। রেডিও সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি স্মরণ করেন হারানো সেসব দিনের কথা। তিনি বলেন, “আমাদের সময় টেলিভিশন হাতে গোনা কয়েকটি ঘরে ছিল। মোবাইল ফোন ব্যবহার করা তো সেসময় স্বপ্নের মতো মনে হতো। তাই রেডিও ছিল বিনোদনের অন্যতম একটি উৎস। কাজের ফাঁকে একটু সময় পেলেই তখন রেডিও শুনতে বসতাম। “


“রেডিওতে রাজ্জাক-কবরী কিংবা সালমান শাহ-শাবনূর জুটির গানগুলো ছিল সে সময়কার মানুষের পছন্দের শীর্ষে। আবার মাঝেমাঝে সেখানে নাটিকা প্রচারিত হতো। শুধু কথাগুলোই শোনা যেত বলে তখন নিজের মনেই নাটিকার একটি দৃশ্যপট কল্পনা করে নিতাম। আর বাড়ির মুরুব্বিরা সময় করে বসতেন খবর শোনার জন্য। সে সময়গুলো এখনো মনে দাগ কাটে,”- যোগ করেন রাহেলা।


বর্তমানে একটি এনজিওতে কর্মরত রয়েছেন হাশেম আহমেদ। রেডিওর সোনালী সে অতীত তার নিজ চোখে দেখা। তিনি সেসব অধ্যায়ের কথা স্মরণ করে বলেন, “আমার ছোটবেলাটি শহরে কেটেছে। আর রেডিওর প্রতি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ জেগেছিল কলেজ জীবনে। বিশেষ করে রেডিওতে গান শুনতে তখন খুব ভালো লাগতো। তখন রেডিওই ছিল গান শোনার সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম।”


“ঐ সময়টিতে শহরজুড়ে ট্যাক্সির আধিক্য ছিল। প্রায়ই দেখতাম চালক তার একপাশে রেডিও রেখে সেটি চালিয়ে রাখত। শহরের কোন রাস্তায় জ্যাম বেশি এবং কোন রাস্তায় জ্যাম কম সেগুলোর আপডেট রেডিওতে দেওয়া হতো। সে অনুযায়ী চালক মাঝেমাঝে তার রুট পরিবর্তন করে অন্য রুট ধরতেন তাড়াতাড়ি পৌঁছানোর জন্য।“ রাহেলা কিংবা হাশেমের মুখে তো জানা গেল তাদের প্রজন্মের কাছে রেডিও ঠিক কতটা জনপ্রিয় ছিল। তাহলে বর্তমান প্রজন্ম রেডিও নিয়ে কি ভাবছে? এ নিয়ে কথা হয় পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র রাকিব উদ্দিনের সঙ্গে। তার মতে, “যখন স্কুলে পড়তাম তখন প্রায়ই রেডিও শোনা হতো। বর্তমানে সেটি কিছুটা কমেছে ঠিকই, কিন্তু এখনো মাঝেমাঝে রেডিও শোনা হয়। বিশেষ করে রেডিওতে গানের অনুষ্ঠানগুলো খুব ভালো লাগে এবং রেডিও শুনতে বসলে এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলোই বেশি শোনা হয়।”

এছাড়া আব্দুল্লাহ আল মামুন রাফসান সদ্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগ থেকে এমবিএ শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন। তিনি বলেন, “যখন ছোট ছিলাম তখন রেডিও সবার কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। এখনো মনে আছে ছোটবেলায় যখন ভাত খেতে চাইতাম না তখন মা রেডিওতে নচিকেতার গান শুনাতে শুনাতে ভাত খাওয়াতেন। বিশেষ করে চাঁদমামা স্বপন এঁকে যায় নামক গানটির কথা এখনো খুব মনে পড়ে। এছাড়া আব্বু নচিকেতা ও মান্না দে এবং আম্মু রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিনের গানের খুব ভক্ত ছিলেন। আর আমিও তখন আব্বু-আম্মুর সাথে তাদের গানগুলো নিয়মিত শুনতাম।“
“আর.জে. যারা আছেন তারা অনেক সময় রেডিওর শ্রোতাদের তাদের প্রিয়জনের উদ্দেশে কোনো বার্তা থাকলে সেটি পাঠাতে বলতো। আর বার্তা পাঠানোর পর আর.জে. যখন সেগুলো পড়ে শোনাতো তখন খুবই ভালো লাগার একটি অনুভূতি কাজ করতো। এছাড়া আর.জে. কিবরিয়া মানুষের সফলতার গল্পগুলো যখন তার শোতে তুলে ধরতেন সেগুলো খুবই অনুপ্রাণিত করতো আমাকে। পাশাপাশি আর. জে. শাহরিয়ার শরীফের হাস্যরসাত্নক শোগুলোও নিয়মিত শোনা হতো।“- যোগ করেন রাফসান।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র আল-আমিন বলেন, “আমি সাধারণত রাতের বেলায় রেডিও শুনি। রেডিওর প্রোগ্রামগুলোর মধ্যে ভূতের গল্প সংক্রান্ত অনুষ্ঠানগুলো সবচেয়ে ভালো লাগে। পাশাপাশি গান, এবং সামাজিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে অনুষ্ঠানগুলো হয় সেগুলোও থাকে পছন্দের তালিকায়। এছাড়া রেডিও ফুর্তি এবং রেডিও টুডে আমার নিয়মিত শোনা হয়।“
এসব বিষয়ে আরো কথা হয় ব্যবসায়ী ও মার্কেটিং বিষয়ক লেখক মোঃ দানিয়েল আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমার রেডিও সবচেয়ে বেশি শোনা হয় যখন কোনো কাজে বাসার বাইরে থাকি। কারণ ঐ সময়ে টেলিভিশন চালু করে বিশ্বের খবরাখবর নেয়া সবসময় সম্ভব হয় না। আর ঐ মুহূর্তে রেডিওই আমার কাছে সবচেয়ে জপনপ্রিয় মাধ্যম। পাশাপাশি গাড়িতে কিংবা রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় অনেকসময় রেডিও শোনা হয়। তবে পূর্বে রেডিও শোনার আগ্রহ আরো বেশি ছিল যা বর্তমানে আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।“
এছাড়া কণ্ঠনীড় বাচিক শিল্পচর্চা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, “”রেডিও নিয়ে কথা বলতে হলে ফিরে যেতে হবে নব্বইয়ের দশকে। স্কুলে পড়তাম সেসময়। আর তখন রেডিও ছিল বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম। সেসময় রেডিওতে সিনেমার গান নিয়ে যেসব অনুষ্ঠানগুলো হতো সেগুলো ছিল পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। আর যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তখন পরিচয় হয় এফএম রেডিওর সাথে। নানা বৈচিত্র‍্যের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের কারণে এটি অল্প দিনেই দর্শক মহলে জনপ্রিয়তা পায়। সেসময় মোবাইল ফোনে এফএম রেডিও শোনার ব্যবস্থা না থাকলে অনেকেই সেই মোবাইল ফোন কিনতে চাইতো না।“
এছাড়া আবৃত্তি শিল্পী আচরারুল হক বলেন, “রেডিওর সাথে আমার পরিচয় সেই ছোটেবেলাতেই। তখন অবশ্য রেডিওর সঙ্গীতানুষ্ঠানগুলোই খুব বেশি শোনা হতো। বিভিন্ন ঘরানার গান পরিবেশিত হতো রেডিওতে। যেমন দেশাত্মবোধক গান, লোকগান,  আধুনিক গান, বাংলা চলচ্চিত্রের গান, হারানোদিনের গান সহ বিভিন্ন আঙ্গিকের গান ইত্যাদি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন আঙ্গিকের গান শোনার দরুন ছোটবেলাতেই রুচিবোধের বিকাশ ঘটে। বিশেষ করে লুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, সৈয়দ আবদুল হাদির মতো দেশবরেণ্য শিল্পীদের গানগুলো যেন এখনও সেই স্বর্ণালী অতীতের কথা মনে করিয়ে দেয়। এছাড়া রেডিওতে সম্প্রচারিত নাটিকাগুলোও খুব ভালো লাগতো তখন।“ তিনি আরো বলেন, “রেডিও আমাদের জাতীয় জীবনে অনস্বীকার্য ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে নতুন নতুন রেডিও চ্যানেলের আগমন ঘটেছে। সেই সাথে বেড়েছে নানাবিধ সৃজনশীল অনুষ্ঠানের সম্প্রচার। নিত্যনতুন কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করছে রেডিওর অনুষ্ঠান বিভাগগুলি। এটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। আমি আশা করছি রেডিও তার মান ধরে রাখবে এবং আরও সুন্দর সুন্দর অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মাধ্যমে আমাদের রুচিবোধের উন্নতি সাধনে ভূমিকা রাখবে।”

এ বিষয়ে বাংলা রেডিও ৯৫.২ এফএমের উপস্থাপক (আর.জে.) মোঃ ফজলে রাব্বী বলেন, “কালের বিবর্তনে মানুষের পছন্দ-অপছন্দে পরিবর্তন এসেছে। আগে মানুষ যে ধরনের অনুষ্ঠানগুলো শুনতে পছন্দ করতো এখন অনেকক্ষেত্রে তা করে না। আর বর্তমানে রেডিওর সবচেয়ে বড় দর্শক হলো তরুণ সমাজ। তাই আমদের রেডিও চ্যানেলগুলো সবসময় তাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে অনুষ্ঠান বানিয়ে থাকে।“ তিনি আরো বলেন, “আধুনিক গানের প্রতি এখন মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। আবার নব্বইয়ের দশকে যেখানে রেডিও নাটিকার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল, বর্তমানে সেটি আর তেমন নেই। বিপরীতে ভূত এফ.এম. কিংবা কমেডি শোগুলো মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আর এসবের সাথে মিল রেখে বর্তমানে আমাদের অনুষ্ঠান সূচীতে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে।“
লেখকঃ তানজিম হাসান পাটোয়ারী

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS