রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
বিজ্ঞান ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা: তারিখ জানাল ঢাবি, কেন্দ্র পরিবর্তন সম্ভব অনলাইনে রিটার্ন বাধ্যতামূলক হওয়ায় ভোগান্তিতে বয়স্ক করদাতারা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হলো ভারতের ভিসা আবেদন কার্যক্রম ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি “রেমিট্যান্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৬” অর্জন করেছে চাকসুর উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংক-চবি’র কর্পোরেট চুক্তি ভৈরবে দুই প্রতিষ্ঠানে আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ওসমান হাদীর খুনিদের ফাঁসির দাবিতে আইএইচআরসি’র প্রতিবাদী সমাবেশ আদালতের আদেশে আজ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সহযোগিতা করবে জামায়াত আমির চুয়াডাঙ্গায় শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া

হাজারো গুমের সাথে জড়িত পাকিস্তানের গোয়েন্দারা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
  • ১৬১ Time View

বিরোধী মতের মানুষকে গুম করে ফেলার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানে বিতর্ক চলছে৷ দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সন্দেহের আঙুল তুলছেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার দিকে৷

রাওয়ালপিন্ডির এরিড এগ্রিকালচার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফিরোজ বালোচ গত ১১ মে পড়াশোনার জন্য বইপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির দিকে রওয়ানা হন৷ কিন্তু এরপর তিনি আর ফেরেননি৷ সেই থেকে আজ পর্যন্ত আর কোনো খোঁজ মেলেনি বেলুচিস্তান থেকে আসা ছাত্র ফিরোজের৷ সন্ধ্যা পর্যন্ত ফিরে না আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকা তার রুমমেট এবং চাচাতো ভাই রহিম বালোচ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন৷ কারণ ফিরোজ সাধারণত সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসেন৷

রহিম জানান, আমি তাকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ পাঠালাম৷ কিন্তু মেসেজটি পৌঁছেনি৷ তারপর তাকে আমি ফোন কররাম, দেখলাম তার ফোন বন্ধ৷ ভাবলাম তার ফোনে হয়তো চার্জ ফুরিয়ে গেছে৷ অপেক্ষা করতে লাগলাম- সে ফিরে আসবে৷ সময় গড়িয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু ফিরোজ ফিরছেন না৷ উদ্বিগ্ন রহিম রাতে বালোচিস্তানের তুরবাতে তার বন্ধুর পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করতে লাগলেন৷ হয়তো ফিরোজ নিজ বাড়িতে গেছেন সেই আশায়৷ কিন্তু অনেক রাত, তাই বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছেন৷ যে কারণে ফেরোজের পরিবারের যোগাযোগ করতে পারেননি রহিম৷ সারারাত জেগে রইলাম৷ কিন্তু ফিরোজ ফিরেনি৷ পরদিন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালাম যে ফিরোজের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ কিন্তু প্রশাসন এ ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিল না৷

উদ্বিগ্ন রহিম তখন পুলিশ স্টেশনে গিয়ে অভিযোগ জানাতে চাইলেন৷ কিন্তু পুলিশ কোনো অভিযোগ নিতে রাজি নয়, রক্ত সম্পর্কের কেউ ছাড়া নাকি অভিযোগ জমা নেবে না পুলিশ৷ ফিরোজের বাবা নুর বক্স বেলুচিস্তান পুলিশ স্টেশনে কর্মরত৷ পরদিন স্থানীয় থানার একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি৷

পাকিস্তানে এভাবে হারিয়ে যাওয়া মানুষদের তালিকা অনেক লম্বা৷ ২০০০ সালের সেনাপ্রধান জেনারেল পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় আসার পর এভাবে নিখোঁজ হওয়া মানুষের তালিকা লম্বা হতে থাকে৷ আর নিখোঁজ হওয়া এসকল মানুষদের বেশিরভাগই বেলুচ ও পশতুন জাতিগোষ্ঠীর৷এমন প্রেক্ষিতে সরকার ২০১১ সালে কমশন অব ইনকোয়ারি অ্যান্ড এনফোর্সড ডিসএপিয়ারেন্স নামে একটি সংস্থা গঠন করে৷

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে সারাদেশে ৮ হাজার ৬৯৬টি নিখোঁজের ঘটনা ঘটে৷ এরমধ্যে ৬ হাজার ৫১৩টি ঘটনার সমাধান করা হয়েছে আর বাকী ২ হাজার ২১৯টি ঘটনার তদন্ত চলছে৷

ইসলামাবাদে কর্মরত পাকিস্তানি সাংবাদিক গওহর মেহসুদের মতে, নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে দেওয়া সরকারের যে তথ্য তার তুলনায় প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি৷ কমিশন অব ইনকোয়ারি অন এনফোর্সড ডিসএপিয়ারেন্স ২০১১ সালে গঠিত হয়৷ কিন্তু নিখোঁজ হওয়ার এমন ঘটনা তারও এক দশক আগে অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে হয়ে আসছে৷

তাছাড়া বালোচিস্তান, খাইবার পাখতুন ওবং সিন্ধ প্রদেশের মানুষেরা নিখোঁজের বিষয়ে সবসময় কমিশনকে তথ্যও দিতে পারেন না৷

এদিকে দেশটিতে নিখোঁজ হওয়া লোকের সংখ্যার বিষয়ে আলাদা আলাদা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে৷ পশতুন প্রদেশের পশতুন তাগাফুজ মুভমেন্টের (পিটিএম) নামে একটি সংগঠনের দাবি, এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজার পশতুন নিখোঁজ রয়েছেন৷

আর ভয়েস অব বালোচ ফর মিসিং পার্সনস নামের আরেকটি সংগঠনের দাবি, বালোচিস্তানের নিখোঁজ হওয়া ব্যাক্তির সংখ্যা ছয় হাজার পাঁচশ৷

পিটিএম-এর প্রধান মনজুর আহমেদ বলেন, নিখোঁজ হওয়া ব্যাক্তির পরিবারের সদস্যরা কার কাছে, কীভাবে অভিযোগ করতে হবে তা লোকজন জানেন না৷ তাছাড়া গোয়েন্দা দপ্তরের লোকেরা আমাকেসহ এবং পিটিএম-এর সদস্যদের এসকল তথ্য সংগ্রহ করতেও বাধা দিচ্ছে৷

এদিকে ২০১৯ সালে বালোচিস্তান সরকার এবং ভয়েস অব বালোচ ফর মিসিং পার্সন নামের সংগঠনটি একটি চুক্তি সই করে৷ চুক্তি অনুযায়ী, বেসরকারি সংস্থাগুলো নিখোঁজ হওয়া ব্যাক্তিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে৷ এরপর থেকে সংগঠনটি সরকারকে নানা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে৷

সংগঠনটির চেয়ারম্যান নসরুল্লাহ বালোচ বলেন, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বালোচ ছাত্রছাত্রীদের উপর সরকার নির্যাতন চালাচ্ছে৷ কয়েক মাস আগে করাচি বিশ্ববিদ্যারয়ের এক বালোচ নারী আত্মঘাতী হামলে করলে সারাদেশে বালোচ জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন শুরু হয়৷ ‘‘এরপর থেকে দেশজুড়ে প্রায় তিনশ বালোচ শিক্ষার্থীকে গুম করা হয়েছে৷

রহিম বলেন, ফিরোজ খুব সাধাসিধে একজন শিক্ষার্থী ছিল৷ সে সবসময় পড়াশোনা নিয়ে থাকতো এবং শিক্ষকেরাও তাকে খুব পছন্দ করতেন৷ বালোচিস্তানের শিক্ষা বিস্তারে তার বড় স্বপ্ন ছিল৷

মানবাধিকার কর্মী ইমরান বালোচ বলেন, গত কয়েক মাস বেশ কিছু ঘটনা ঘটার পর, নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা বালোচ জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মাঝে বিশেষ করে নিরীহ শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে৷

এদিকে ফিরোজের নিখোঁজ হওয়ার মামলাটি নিয়ে টালবাহানা করছে কমিশন অব ইনকোয়ারি অন এনফোর্সড ডিসএপিয়ারেন্স এমন দাবি, মামলার আইনজীবী ইমান মাজারির৷ এই পরিস্থিতিতে মামলাটিকে বর্তমানে ইসলামাবাদের একটি আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷

পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়্যারম্যান ও দেশটির সাবেক সিনেটর আফরাসিয়াব খাত্তাক জানান, তিনি সিনেটর থাকা অবস্থায় গুম হয়ে যাওয়ার এ সকল ঘটনার তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন৷ কমিটির তদন্তে দেখা গেছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা দপ্তর এ সকল গুমের ঘটনার সাথে জড়িত৷

তিনি বলেন, গোয়ন্দেদের আইনের আওতায় আনতে আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি আইন প্রণয়ন করার কথা বলেছিলাম৷ বারবার বলার পরও তারা আমার অনুরোধে সাড়া দেয়নি৷ গোয়েন্দা দপ্তরের সদস্যরা কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া মেনে চলতে চায় না৷

সূত্র: ডিডাব্লিউ

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS