১৯৭৫ সালের এই দিনে ইতিহাসের নৃশংস ও মর্মস্পর্শী জঘন্যতম এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষ হারায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
বীরত্ব, ত্যাগ, দৃঢ়প্রত্যয়, উদারতা, নেতৃত্বগুণ—একজন রাজনীতিক হিসেবে এর সব কটির সম্মিলন জাতি দেখেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে, যা সহজেই তাঁকে স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতার মর্যাদায় আসীন করেছে। ঘাতকেরা বিভীষিকাময় সেই কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তিনি স্থান নিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে। আজ শোকের দিনে বাঙালি তাদের মহান নেতাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও সেই রাতের সেই হত্যাযজ্ঞে তাঁর সহধর্মিণী সদা অনুপ্রেরনাদায়ী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বড় ছেলে শেখ কামাল, মেজ ছেলে শেখ জামাল ও ছোট্ট অবুঝ শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, এমনকি বঙ্গবন্ধুর ফোন পেয়ে তাঁর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিলউদ্দিন আহমেদ, এসবির কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান ও সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হককেও হত্যা করা হয়। সেই রাতেই বিপথগামী সেনাসদস্যদের আরেকটি দল বঙ্গবন্ধুর ভাগনে যুবলীগের নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসায় হামলা চালিয়ে তাঁকে এবং তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনিকে হত্যা করে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তাঁর কন্যা বেবি, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় আবদুল নঈম খানকেও হত্যা করা হয়।
দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা স্বামী সন্তান সহ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থান করায় বেঁচে যান।
এরপর এ নারকীয় হত্যাকান্ডকে বৈধতা দিতে মরিয়া খূনিগোস্ঠি জিয়াউর রহমান গং ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিচারের পথ রুদ্ধ করে। এমনকি খুনিদের দেশের বাইরে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর খুনিদের বিচার শুরু হয়। একই সঙ্গে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ও এই দিনে সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। পরে উচ্চ আদালত ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এখন পর্যন্ত ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। একজন বিদেশে মারা গেছেন। পাঁচজন এখনও পলাতক।
যে মানুষটি শুধুমাত্র বাঙালীর অধিকার আদায় করতে যেয়ে তেইশ বছরের ইস্ট পাকিস্তান এর ইতিহাসে প্রায় বার বছর জেল খাটলেন। সে মানুষটিই বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতিকে ঋণেজড়িত করে গেলেন।
কবি নির্মলেন্দু গুনের ভাষায় –
এসেছে কান্নার দিন, কাঁদো বাঙালি কাঁদো, দীর্ঘ দুই দশকের কান্নার ঋণ আজ শোধ কর অনন্ত ক্রন্দনে!!
_এম এ বাসার বিপুল_
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply