পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের কারখানা ও দীর্ঘমেয়াদী ইজারা নেওয়া প্লটগুলো নিলামে তুলেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। দীর্ঘদিনের বকেয়া প্রায় আঠারো মিলিয়ন ডলার (প্রায় ২২০ কোটি টাকা) পরিশোধে বারবার ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিটির সম্পদ ও কারখানা নিলামে তুলছে বেপজা। গত সোমবার সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে আগ্রহী ক্রেতাদের কাছে ২০২৬ সালের ৬ জানুয়ারির মধ্যে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়েছে।

বছরের পর বছর ধরে বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ অবশেষে এই সম্পত্তি উদ্ধারে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিল। নিলামের আওতায় আনা হয়েছে প্লট নম্বর ২৩০ থেকে ২৩৬ পর্যন্ত মোট ছয়টি প্লট, যেগুলোর ৩০ বছরের ইজারা নিয়ে রিং শাইন তার প্রধান উৎপাদন কারখানা নির্মাণ ও পরিচালনা করত।

বকেয়া ভাড়া পরিশোধ না করায় বেপজা এই বছরের শুরুতে কোম্পানিটিকে একাধিকবার সতর্ক করার পর ইজারা বাতিল করে দেয়। এখন ইজারা বাতিল কার্যকর হওয়ায় এবং কারখানাটিও নিলামের আওতায় আসায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমন ক্রেতা খুঁজছে যারা এই সম্পদগুলো অধিগ্রহণ করে সাইটটিতে উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পারবে।

একসময় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অন্যতম বৃহৎ সমন্বিত টেক্সটাইল প্রস্তুতকারক হিসেবে পরিচিত রিং শাইন টেক্সটাইলস ২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরপরই মারাত্মক পরিচালন, আর্থিক ও গভর্নেন্স সংকটে জড়িয়ে পড়ে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেপজা’র বকেয়া (প্রায় ১০ কোটি টাকা) পরিশোধের জন্য কোম্পানি আইপিও তহবিল থেকে একটি অংশ ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছিল। তবে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২০ সালে কোম্পানির আইপিও তহবিল ফ্রিজ করে দেয় এবং ইপিজেডের বকেয়া মেটানোর জন্য তহবিল ব্যবহারের আবেদন পরবর্তীতে প্রত্যাখ্যান করে।

তারা জানায়, এরফলে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারিনি, যার কারণে বেপজা আমাদের মোট পঞ্চাশটি প্লটের মধ্যে ছয়টি প্লট নিলামে তুলেছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, তারা কোম্পানিটি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করছেন, যা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আরও ভালো সুবিধা দিতে পারত, কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার অসহযোগিতার কারণে তারা তা করতে পারেনি। এখন আইনিভাবে কোম্পানিটির কাছে ওই জমি ধরে রাখার কোনো পথ নেই।

এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে, বকেয়া পরিশোধে ক্রমাগত ব্যর্থতার কারণে বেপজা রিং শাইনের ছয়টি প্লটের ইজারা বাতিল করে। গত জুলাই মাসে বিএসইসি কোম্পানিটির বকেয়ার কিছু অংশ পরিশোধের জন্য জব্দ থাকা আইপিও তহবিল থেকে এক মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১২ কোটি ২০ লাখ টাকা) ছাড়ের আবেদন নাকচ করে দেয়। কারণ হিসেবে বলা হয় যে, এই তহবিল অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না।

ব্যবসার সম্প্রসারণের জন্য রিং শাইন ২০১৯ সালে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির পরই মহামারীর সময় রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়া, তারল্য সংকট এবং একটি গভর্নেন্স কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে, যা পরবর্তীতে আইপিও কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত হয়।

রিং শাইনের আর্থিক অবস্থাও মারাত্মকভাবে খারাপ হয়েছে। তালিকাভুক্তির অর্থবছর থেকে কোম্পানিটি কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি এবং অর্থবছর ২০২১ থেকে অর্থবছর ২০২৪ পর্যন্ত ৪৪৬ কোটি টাকার লোকসান জমা হয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার বর্তমানে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে লেনদেন হচ্ছে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার সর্বশেষ ৩ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।