গত ০৩-সেপ্টেম্বর ২০২৫ সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক মুন্সীপাড়ার মোঃ আলম মিয়া (৬০) এর রক্তাক্ত মৃত দেহ নিজ বাড়িতে পাওয়া যায় এবং চুরির আলামত দেখা যায়। তিনি ফান্দাউক বাজারের একজন রড ও সিমেন্টের ব্যবসায়ী ছিলেন। পিবিআই,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ক্রাইমসিন টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয় যে, অজ্ঞাতনামা চোর ঘরের পিছনের টিন কেটে প্রবেশ করে ভিকটিমকে হত্যা করে নগদ, টাকা, মোবাইল সেট ও স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যায়। ঘটনার তিন দিন পর, গত ০৬ সেপ্টেম্বর’২৫ তারিখ নিহতের ছেলে মোঃ মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে নাসিরনগর থানার মামলা নং-০৫, তারিখ-০৬/০৯/২০২৫, ধারা-৪৫৭/৩৮০/৩০২/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন।
এজাহারে বাদী দাবী করেন যে, অজ্ঞাতনামা চোরেরা টিনের চালা কেটে ও দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে বাদীর বাবাকে হত্যা করে এবং বাদীর স্ত্রী সূচনার ২,৫০,০০০/- টাকার মূল্যের স্বর্ণালংকার চুরি করে নিয়ে যায়। ভিকটিমের ২য় স্ত্রী আমেনা এবং তার পূর্বের স্বামী মমিনকে সন্দেহভাজন হিসেবে উল্লেখ করেন। এজাহারে বাদী ঘটনার সময় সিলেটে ছিলেন বলে উল্লেখ করেন।গত ১০/০৯/২০২৫ইং তারিখ মামলাটির পিবিআই, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কর্তৃক অধিগ্রহণ করতঃ পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মোঃ বেলাল উদ্দিন’কে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। বাদীর অবস্থান সিলেটে না হয়ে নিজ এলাকায় হওয়ায় গত ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখ ১৭:৩০ ঘটিকার সময় মামলার বাদী মোঃ মাহমুদুল হাসানকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাদী তার বাবাকে হত্যার দায় স্বীকার করেন। মোঃ মাহমুদুুল হাসান এর দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের পেছনে রয়েছে পারিবারিক কলহ ও বাদীকে অপমান করা। বাদী সিলেট যাওয়ার মিথ্যা অজুহাতে বাড়ি থেকে বের হয়ে পরে রাত আনুমানিক ০৮:০০ ঘটিকার সময় পেছনের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকে মাচার ওপর লুকিয়ে ছিলেন। এরপর রাত আনুমানিক ১০:৪৭ ঘটিকার সময় বাদী তার বাবাকে ফোন করে স্ত্রীর স্বর্ণালংকার চুরি হওয়ার মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে বাড়িতে ডেকে আনেন। আলম মিয়া ঘুমিয়ে পড়লে রাত আনুমানিক ০১:৩০ ঘটিকায় তিনি একটি লোহার পাইপ দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাকে হত্যা করেন। হত্যাকাণ্ডের পর আসামি মোঃ মাহমুদুল হাসান ঘটনাস্থলকে চুরির জন্য হত্যাকাণ্ড হিসাবে প্রমাণ করতে।
ঘটনাস্থলকে চুরি ও হত্যাকাণ্ডের নাটক সাজিয়েছিলেন। বাদী বাবার দুটি মোবাইল সেট নিজের কাছে রেখে দেন, যা পরবর্তীতে সিলেট যাওয়ার পথে নদীতে ফেলে দেন। মাহমুদুল স্বর্ণালংকার নিজের হাতে আলমিরা থেকে বের করে সরিয়ে রাখে, যা পরবর্তীতে ২ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আসামির দেখানো মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৩ ফুট লম্বা লোহার পাইপটি ঘটনাস্থল সংলগ্ন পুকুর হতে উদ্ধার করা হয় । বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আসামি স্বেচ্ছায় তার অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করেছেন মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS