বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৪৮ অপরাহ্ন

জুলাইয়ে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫২০

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সারাদেশে বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ সড়ক-মহাসড়কে সৃষ্ট ছোট বড় গর্তে কারনে দ্রুতগামী যানবাহনে ভয়াবহভাবে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে। জরুরীতে ভিত্তিতে এসব সড়ক-মহাসড়ক মেরামতের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি বৃষ্টি সহনশীল সড়ক নির্মাণ ও মেরামতের কৌশল উদ্ভাবনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

আজ ১২ আগষ্ট মঙ্গলবার দেশের গণমাধ্যমে প্রেরিত বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই দাবী জানান। বিবৃতিতে জুলাই মাসের সড়ক দুর্ঘটনা পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, বিদায়ী জুলাই মাসে দেশের গণমাধ্যমে ৫০৬ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫২০ জন নিহত, ১৩৫৬ জন আহতের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এই মাসে রেলপথে ৩৪ টি দুর্ঘটনায় ৩১ জন নিহত, ৪১ জন আহতের তথ্য গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। তথ্যমতে, নৌ পথে ১৪ টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জন, আহত ১৪ জন ও ০৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৫৫৪ টি দুর্ঘটনায় ৫৬৮ জন নিহত এবং ১৪১১ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ১৬২ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৯ জন নিহত, ১৪৪ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.০১ শতাংশ, নিহতের ৩২.৫০ শতাংশ ও আহতের ১০.৬১ শতাংশ। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে ১২২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩০ জন নিহত ও ২৯৫ জন আহত হয়েছে, সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে ২৩ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত ও ৯৫ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ০৯ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৩১ জন চালক, ৯৭ জন পথচারী, ৬৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৩ জন শিক্ষার্থী, ০১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ০৫ জন শিক্ষক, ৭৮ জন নারী, ৬০ জন শিশু, ০১ জন সাংবাদিক, এবং ০৯ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছে- ০২ জন পুলিশ সদস্য, ০১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১২০ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৯০ জন পথচারী, ৭০ জন নারী, ৫৬ জন শিশু, ৫০ জন শিক্ষার্থী, ১৯ জন পরিবহন শ্রমিক, ০৫ জন শিক্ষক ও ০৯ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।

এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৭৪৮ টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৬.০৬ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৪.১৯ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৬.৮৪ শতাংশ বাস, ১৪.৮৩ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৬.২৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৬.৮১ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৪.৯৪ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।

সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪৮.২২ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৬.০৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯.৯৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৪.৩৪ শতাংশ বিবিধ কারনে, চাকায় ওড়না পেছিয়ে ০.৫৯ শতাংশ, এবং ০.৭৯ ট্রেন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।

দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৪০.৩১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৯.২৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪.১১ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৭৪ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৭৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৭৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।

বিভাগ .jpg

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে, জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণসমূহ :
১. বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দেশের সড়কের মাঝে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি, এসব গর্তের কারনে দুর্ঘটনা বেড়েছে।
২. সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, সিএনজি অটোরিক্সা, নসিমন-করিমন অবাধে চলাচল।
৩. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা।
৪. সড়কে মিডিয়ান বা রোড ডিভাইডার না থাকা, সড়কে গাছপালায় অন্ধবাঁেকর সৃষ্টি।
৫. মহাসড়কের নির্মাণ ক্রটি, যানবাহনের ক্রটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৬. উল্টোপথে যানবাহন, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন।
৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন।
৮. বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো।

দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ :
১. বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ দেশের সড়ক-মহাসড়ক জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা।
২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্য আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহন, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান।
৪. গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কে ফুটপাতসহ সার্ভিস লেইনের ব্যবস্থা করা।
৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা সুনিশ্চিত করা।
৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা।
৭. সড়ক পরিবহন আইন উন্নত বিশ্বের আদলে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রয়োগ করা।
৮. সারাদেশে উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।
১০. মেয়াদোর্ত্তীন গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবত ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া।
১২. ড্রাইভিং প্রশিক্ষন গ্রহনকারী চালকের উপর চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাট ও আয়কর অব্যাহতি দিতে হবে।
১৩. মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা আমদানী ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করা ।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS