বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৫০ অপরাহ্ন

কুষ্টিয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, ১৩ স্কুল বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

ভারী বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে আসা পানির কারণে কুষ্টিয়ার পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি প্রতিদিন বাড়ছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) পদ্মার পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয় ১২ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার। এদিন গড়াই নদীর পানির উচ্চতা পরিমাপ হয় ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। দুই নদীর পানি বিপৎসীমার চেয়ে মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।

আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে নদীতে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে পানি প্রবেশ করায় বিভিন্ন চরের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। 

দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। বন্যার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। চরাঞ্চলের ফসলি মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেখানকার বাসিন্দাদের।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ‍“সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণের ব্যবস্থা করছি। নদীর পানি আরো বাড়তে পারে। আমরা যথাযথ প্রস্ততি নিচ্ছি।”

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা জানান, চরাঞ্চলের নিম্নভূমি প্লাবিত হয়েছে। আবাদি জমি ও রাস্তা ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বন্যার শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন চরের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৭৯ সেন্টিমিটার। আজ বুধবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার। যা বিপৎসীমার এক সেন্টিমিটার নিচে। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। 

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত গড়াই নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার।

চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। চরের ধান, মরিচ ও পাট ডুবে গেছে। ঘরবাড়ি প্লাবিত না হলেও সবাই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি প্রবেশ করায় কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। গো-খাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।” 

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল বলেন, “নদীর ওপারে অন্তত ৩০ হাজার মানুষের বসবাস। তাদের অধিকাংশই পানিবন্দি। ঘরবাড়িতে এখনো পানি ওঠেনি, তবে মাঠের আবাদি ফসল ডুবে গেছে।”

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ জানান, চরের দুই ইউনিয়নের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। সরেজমিনে দেখে, প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, “বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট ও স্কুল প্লাবিত হয়েছে। ১৩টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে।”

পাবনা ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুজ্জামান জাহিদ জানান, পদ্মা ও গড়াই নদীতে প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধি কতদিন অব্যাহত থাকবে, তা বলা যাচ্ছে না।

Please Share This Post in Your Social Media

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS