২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ৪৩ হাজার ৯২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে। অথচ চলতি অর্থবছরের এই মাসে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায় কম হয়েছে ২৫ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। অর্জন ঘাটতির হার দাঁড়িয়েছে ৩৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
তবে শুধু লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় নয়, আগের অর্থবছরের জুন মাসের তুলনায়ও রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুন মাসে আদায় হয়েছিল ৫৩ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। সেই তুলনায় এবার আদায় কমেছে ৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত জুনে রাজস্ব আয় কমেছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা, যা ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
জুন মাসে এনবিআরের আয় কমে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ ছিল অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও আন্দোলন। এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান নিজেই জানিয়েছেন, আন্দোলনের কারণে আদায়ে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। তবে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বলছে, তা ছিল “কিছুটা” নয়, বরং বড় রকমের ব্যর্থতা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মে মাসে যেমন আন্দোলন করেছে, তেমনি জুন মাসের শেষ সপ্তাহেও তারা কর্মসূচি পালন করেছে। ২৮ ও ২৯ জুন ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালিত হয়। পরে ২৯ জুন ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন স্থগিত করা হয়।
আন্দোলনের প্রভাব কতটা ছিল, তা মূল্যায়নে এরই মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করেছে সরকার।
এ মাসে তিনটি প্রধান খাত—আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর—সব খাতেই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। আমদানি শুল্ক খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। আগের বছরের জুন মাসে আদায় ছিল ৯ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা।
ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬ হাজার ৮৮ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১৪ হাজার ২১৪ কোটি টাকা। গত বছর একই সময়ে আদায় হয়েছিল ২০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের জুনে এই খাতে আদায় ছিল ২৩ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। পুরো বছরের শেষে আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৯২ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে, যা ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ ঘাটতি।
তবে আগের অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় ছিল ৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা। সেই তুলনায় এবছর আদায় বেড়েছে ২ দশমিক ২৩ শতাংশ।
খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আয়কর ও ভ্রমণ কর মিলিয়ে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। তবে আদায় হয়েছে এক লাখ ২৯ হাজার ৯০ কোটি টাকা, ঘাটতি ৪২ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
একই পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছিল স্থানীয় পর্যায়ের ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রেও। আদায় হয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। ঘাটতি ২৯ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। তবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য এক শতাংশ। আগের বছর আদায় ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা।
কাস্টমস বা শুল্ক খাতে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে এক লাখ ১৯৮ কোটি টাকা, ঘাটতি ২০ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি মাত্র শূন্য দশমিক ৩৩ শতাংশ।
সার্বিকভাবে জুন মাসে আদায় খাতের দুর্বল পারফরম্যান্স এবং এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সংকট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, রাজস্ব ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা ছাড়া ভবিষ্যতেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হতে পারে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply