ফিলিস্তিনি চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২০ মে) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের লাইভ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
হামাস পরিচালিত বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান পূর্ব গাজা শহরের একটি স্কুলে, মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য একটি পরিত্যক্ত জ্বালানি স্টেশনে এবং দক্ষিণ গাজার দেইর আল-বালাহে একটি তিনতলা আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, “সরঞ্জামের অভাব এবং বোমাবর্ষণের তীব্র গতির কারণে আহতদের কাছে পৌঁছাতে উদ্ধারকারী দলগুলো বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।”
গাজা শহরের স্থানীয় কর্মীদের মতে, মুসা বিন নুসাইর স্কুলের শ্রেণীকক্ষে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছেন, যেখানে শত শত বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।
মধ্য গাজায়, নুসাইরাতের একটি পরিত্যক্ত জ্বালানি স্টেশনে বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে হামলায় ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, দেইর আল-বালাহ শহরের মধ্যাঞ্চলে একটি তিন তলা বাড়িতে বিমান হামলায় ১৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
পৃথকভাবে, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো পূর্ব গাজা শহরের শেজাইয়া পাড়ায় ১০টি বিমান হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় প্রতিবেদনে, বিস্ফোরণগুলোকে ভূমিকম্পের মতো কম্পন সৃষ্টিকারী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, এই হামলায় প্রায় ১২০০ নিহত ও দুই শতাধিক ইসরায়েলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস যোদ্ধারা। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় বিমান হামলা ও পরে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
দীর্ঘ ১৫ মাস ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরায়েল। তবে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের তীব্র হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
অব্যাহত হামলার পাশাপাশি ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক অবরোধ আরোপ করেছে, যার ফলে এর জনসংখ্যা, বিশেষ করে উত্তর গাজার বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply