শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত হয়েছে “নাগরিক নিরাপত্তা ও আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব” শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত আজ ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল টিউবস লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আল-আমিন কেমিক্যাল প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ করেছে ফাইন ফুডস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট আলমডাঙ্গার খাসকররা ইউনিয়নের পার লক্ষ্মীপুর বাজারে জামায়াতের পথ সভা অনুষ্ঠিত হয় নীলমণিগঞ্জ পিটিআই মাঠে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সভা: যুবকদের প্রতি আলোর পথে আসার আহ্বান ফাস ফাইন্যান্স দরপতনের শীর্ষে

ব্যারিস্টার ফুয়াদের অশ্লীল বক্তব্যের নেপথ্যে কি: মো. মনিরুজ্জামান মনির

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অনেক দিন ধরেই সোস্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলছেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ ওরফে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ। তিনি প্রায়ই বিতর্কিত মন্তব্য করে মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন। তিনি কতটা সফল হয়েছেন কিংবা বিফল হয়েছেন, তা নিয়ে আলোচনার দাবি রাখে। কিন্তু অশ্লীল ভাষা ব্যবহারে তিনি বেশ পটু— এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। একজন বিজ্ঞ আইনজীবী হয়ে তিনি যে ভাষায় কথা বলছেন, তাতে সভ্য সমাজের মানুষ লজ্জিত না হয়ে পারবে না। তার মতো অশ্রাব্য ভাষায় শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অন্য কোনও দেশের রাজনীতিক কথা বলেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তার এই অশ্লীল ভাষা বাংলাদেশি রাজনীতিকদের ইমেজ ক্ষুণ্ন করছেন বলেই প্রতীয়মান হয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে তার দল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) কোনও প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বলে জানা যায়নি।

কিছুদিন আগে ব্যারিস্টার ফুয়াদ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে নিয়ে বিরূপ (পত্রিকায় লেখার মতো না) মন্তব্য করেন। বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর ভিউ ব্যবসায়ী ডলার কামানোর ধান্দায় ব্যস্ত। বিভিন্নজন বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করে সেগুলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়া— ফেসবুক, টুইটার (এক্স), ইউটিউবে এগুলোর অসংখ্য ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে। ব্যারিস্টার ফুয়াদের অত্যন্ত নিম্নমানের—অরুচিকর এই বক্তব্যে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে খালেদ মহিউদ্দিনের ‘টকশো’তে কথা বলেছেন মেজর রেজা। এ সময় তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। ফুয়াদের বক্তব্যে যে সেনা কর্মকর্তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা তিনি তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে তিনি সেনাবাহিনী নিয়ে ব্যারিস্টার ফুয়াদকে আপত্তিকর মন্তব্য না করার আহ্বান জানিয়েছেন। শুধু মেজর রেজা নয়, তার মতো এ দেশের সাধারণ মানুষেরও একই আহ্বান থাকবে। সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। শুধু দেশ নয়, জাতিসংঘ মিশনেও তারা তাদের দক্ষতা, দায়িত্ববোধের প্রমাণ রেখে চলেছেন। খোদ জাতিসংঘ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূয়সী প্রশংসা করেছে।

এর আগে রেলের ব্যবস্থাপনা ঠিক করার জন্য রেলের ডিজিকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ২৪ ঘণ্টা পেটানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ। তার এই বক্তব্যও সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা তার বক্তব্যে ব্যথিত হন। তাকে রেলের ডিজির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায় বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি।

এখন প্রশ্ন হলো ব্যারিস্টার ফুয়াদ কেন এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য করছেন? এখানে দুটি প্রশ্ন সামনে আসছে। প্রথমত, তিনি কী সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় থাকতে চান? দ্বিতীয়ত, তার এই বিতর্কিত বক্তব্যের পেছনে অন্য কোনও উদ্দেশ্য কি আছে? সেটা হতে পারে সমাজকে অস্থিতিশীল করা কিংবা কারো উদ্দেশ্য হাসিল করা। তবে, তার উদ্দেশ্য যা-ই হোক, তিনি যে ভাষায়, কথা বলছেন, তাতে মানুষ উত্তেজিত হতে পারে। এ থেকে মব পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এটা সমাজ-দেশের জন্য সুখকর নয়। শান্তিতে বসবাস করা এ দেশের মানুষের অধিকার এবং আমরা এটাই প্রত্যাশা করি। ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, “সেনাপ্রধানকে বলছি ক্যান্টনমেন্ট উড়ায়ে দিবো” এবং রেলওয়ে নিয়ে বলেন, “ডিজি রেলকে রাস্তায় ফেলে ২৪ ঘন্টা শুধু পিটান তাহলে রেল ঠিক হয়ে যাবে”। এই বক্তব্যের কারণে ব্যারিস্টার ফুয়াদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হওয়া উচিত। রাষ্ট্র যদি কোন আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে সেনাবাহিনী ও রেল প্রেমিক জনতা তার বিরুদ্ধে যে কোন সময় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া ব্যারিস্টার ফুয়াদ একজন আইনজীবী এবং রাজনীতিক। দুটোই অত্যন্ত মর্যাদাশীল পোস্ট। তার আচরণ অবশ্যই সুন্দর হওয়া উচিত। কেননা, রাজনীতিকরা হলেন এক ধরনের শিক্ষক। তাদের কাছ থেকে এ দেশের মানুষ অনেক কিছু শিখে থাকে। সেই শিক্ষক যদি হন বদমেজাজী, অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন, তাহলে তার কাছ থেকে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ কী শিখবেন? সহকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে তার ভাবমূর্তিই বা কী হবে? আশা করি ব্যারিস্টার ফুয়াদ বিষয়গুলো মাথায় রেখে ভবিষ্যৎ পথ চলবেন।

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না: বিশ্বের সম্মানজনক পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম আইন পেশা। বাংলাদেশে যারা এই পেশায় নিয়োজিত তাদের বলা হয় এ্যাডভোকেট বা উকিল। আমেরিকায় আইনজীবীদের বলা হয় এ্যাটর্নি। অস্ট্রেলিয়ায় তাদের বলা হয় ব্যারিস্টার। বিভিন্ন দেশে আইনজীবীদের বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। ‘ব্যারিস্টার অ্যাট ল’র সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ‘বার অ্যাট ল’। এই কোর্সটি ইংল্যান্ডের চারটি ইনসের (লিংকনস্ ইন, গ্রেইসইন, ইনার টেম্পল ও মিডল টেম্পল) যেকোনো একটি থেকে করতে হয়। এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের এই ‘বার অ্যাট ল’ ডিগ্রি ভুয়া দাবি করে ১ এপ্রিল ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভারতে পালিয়ে থাকা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক এই শিক্ষার্থীর স্ট্যাটাসে এই ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মিডল টেম্পলকে পাঠানো একটি ই-মেইলও যুক্ত করা হয়েছে।  গোলাম রাব্বানী ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের এই ‘বার এ্যাট ল’ ডিগ্রির বিষয়ে জানতে মিডল টেম্পলকে একটি ই-মেইল করেন। সেখানে ব্যারিস্টার ফুয়াদের পরিচয় ‘আসাদুজ্জামান ফুয়াদ’ অথবা ‘ফুয়াদ আবদুল্লাহ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিউত্তরে মিডল টেম্পল জানায়, ‘আসাদুজ্জামান ফুয়াদ’ অথবা ‘ফুয়াদ আবদুল্লাহ’ নামে কোনো রেকর্ড তাদের কাছে নেই।

এবি পার্টির প্রতিক্রিয়া: গোলাম রাব্বানীর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু। ফেসবুকে তিনি বলছেন, এটা আমি পজিটিভ হিসেবে দেখছি। ফুয়াদকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার ব্যাপারে জনগণের আগ্রহ আছে এবং সবশেষে যখন প্রমাণিত হবে যে ফুয়াদের (আসল নাম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া) বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার হয়েছে। তখন তার পজিশন আরও হাই হবে ও গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। ফুয়াদ ব্যারিস্টারি পাশ করার পর এক যুগেরও বেশি সময় ইউকেতে মেইনস্ট্রিম ‘ল’ প্র্যাক্টিস করেছে। এটার প্রতিবাদ বা প্রমাণ তার সহপাঠী বন্ধুরাই দিবে। আমরা এটার জবাব দেয়ার দরকার মনে করছি না। স্ট্যাটাসে তিনি ‘সোসাইটি অব মিডল টেম্পল’র একটি ই-মেইলও সংযুক্ত করেছেন। সেই ই-মেইলে বলা হয়, ২০০৮ সালে ২৯ অক্টোবর ফুয়াদ (আসল নাম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া) প্রতিষ্ঠানটিতে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

আলোচনা আর দীর্ঘায়িক করতে চাই না। ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ এই দেশের নাগরিক। আমাদের ভাই, বন্ধু, স্বজন। তিনি একই সঙ্গে দুটি মহান পেশায় (আইন ও রাজনীতি) আছেন। এটা আমাদের জন্য গর্বের। দুটো পেশাই সেবামূলক। তিনি মানুষকে সেবা দেবেন, ভালবাসবেন— এটাই স্বাভাবিক। তার আচরণে কেউ কষ্ট পাক— এটা কাম্য নয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS