নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আজ ৭ মার্চ ২০২৫ :ঠাকুরগাঁও কালিবাড়ি জেলা পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ) ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার উদ্যোগে ন্যায্যমূল্যে ডিম ও মুরগি বিক্রয় কার্যক্রম শুভ উদ্বোধন হয়েছে। রমজান মাসে সাধারণ ভোক্তাদের স্বল্পমূল্যে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য দেওয়া এই কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য।
দেশের বড় কর্পোরেট কোম্পানি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে খামারিরা তাদের প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হন এবং ভোক্তারাও অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য কিনতে বাধ্য হন। এই বৈষম্য দূর করতে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ) উদ্যোগ নিয়েছে খামারিদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ভোক্তাদের কাছে ন্যায্যমূল্যে পৌঁছে দেওয়ার।
পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে এই মূল্য তালিকা বহাল থাকবে, ফার্মের ডিম প্রতি পিস ৯.৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৬০, টাকা জীবন্ত মুরগি, ফ্রোজেন ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজি ২৬০ টাকা, কালার বার্ড মুরগি প্রতি কেজি ২২০ টাকা সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ২৪০ টাকা রাতে বিভিন্ন ধরনের মাছ বিক্রি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন এর আগেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে এবং ভবিষ্যতেও বাজার স্থিতিশীল রাখতে এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। সংগঠনটি বরাবরই খামারিদের স্বার্থ রক্ষা এবং ভোক্তাদের সাশ্রয়ী মূল্যে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এই মহতী আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থেকে তাদের মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য ,ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক, মোছাঃ ইশরাত ফারজানা বলেন, “রমজান সংযমের মাস, আর এই মাসে যাতে প্রতিটি মানুষ সঠিক পুষ্টি পেতে পারে, সে জন্য জেলা প্রশাসন সবসময় সচেষ্ট। বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো অনেক সময় বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা বঞ্চিত হন। আজকের এই উদ্যোগ খামারিদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ সহায়তা করব, যাতে সাধারণ জনগণ এবং খামারিরা উভয়েই উপকৃত হন। আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ)-এর সভাপতি জনাব মোঃ সুমন হাওলাদার এবং সংশ্লিষ্ট সকল নেতৃবৃন্দকে, যারা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তারা খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন এবং ভোক্তাদের জন্য ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করছেন। তাদের এই প্রচেষ্টা পোল্ট্রি শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন এর আগেও বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন ডিম ও মুরগির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়, তখন তারা ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকলে, বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা হবে এবং সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে।”
বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য ,শেখ জাহিদুল ইসলাম, পিপিএম, পুলিশ সুপার, ঠাকুরগাঁও বলেন, “আমরা দেখেছি, প্রতি বছর রমজান এলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়, যার ফলে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কর্পোরেট কোম্পানি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেটের কারণে দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। আজকের এই ন্যায্যমূল্যে বিক্রয় কার্যক্রম সেই অপতৎপরতা রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখবে। আমরা সবসময় জনগণের পাশে থাকব এবং বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”
বিশেষ অতিথিদের বক্তব্য ,মোঃ ইজহার আহমেদ খান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ঠাকুরগাঁও বলেন, “দেশের প্রাণিসম্পদ খাত বিশেষ করে পোল্ট্রি শিল্প আমাদের পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে
আমরা দেখি, বাজারের মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে খামারিরা তাদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগির ন্যায্যমূল্য পান না, আবার ভোক্তারাও উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে বাধ্য হন। আজকের এই উদ্যোগ বাজার ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও ভারসাম্যপূর্ণ করবে এবং সাধারণ ভোক্তাদের পাশাপাশি খামারিদেরও উপকার করবে।”
বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতির বক্তব্য বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ)-এর সভাপতি জনাব মোঃ সুমন হাওলাদার বলেন, “বাংলাদেশের প্রান্তিক খামারিরা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছেন। বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে সাধারণ ভোক্তারাও বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন সবসময় খামারিদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দাঁড়াবে। অতীতেও আমরা ঢাকাসহ সারাদেশে ন্যায্যমূল্যে ডিম বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা করেছি এবং বাজার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতেও আমরা ভোক্তা ও খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করে যাব। আমি জেলা প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং সকল সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই, যারা আমাদের এই উদ্যোগকে বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি খামারি যাতে তাদের ন্যায্যমূল্য পায় এবং প্রতিটি ভোক্তা যাতে সাশ্রয়ী দামে পুষ্টিকর খাদ্য পায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।”
উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিথিবৃন্দ
প্রধান অতিথি: মোসাঃ ইশরাত ফারজানা, জেলা প্রশাসক, ঠাকুরগাঁও
বিশেষ অতিথি: শেখ জাহিদুল ইসলাম পিপিএম পুলিশ সুপার ঠাকুরগাঁও
বিশেষ অতিথি: মোঃ ইজহার আহমেদ খান, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, ঠাকুরগাঁও
মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঠাকুরগাঁও সদর ঠাকুরগাঁও
এ.এস.এম. মামুম-উদ-দৌলা, সহকারী পরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ঠাকুরগাঁও
ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, সদর উপজেলা, ঠাকুরগাঁও
উক্ত অনুষ্ঠানে ঠাকুরগাঁও জেলার খামারি, ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও গণমাধ্যম কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন। সকলের সহযোগিতায় “ভোক্তা ন্যায্যমূল্যে খাবে, উৎপাদক ন্যায্যমূল্য পাবে”—এই মূলনীতিকে বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন ভবিষ্যতেও এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে, যাতে দেশের সাধারণ জনগণ ও প্রান্তিক খামারিরা আরও উপকৃত হতে পারেন। প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বন্ধুদের উদ্দেশ্যে , আপনারা সবসময় জনগণের কথা তুলে ধরেন, আমাদের কণ্ঠস্বর জনগণের কাছে পৌঁছে দেন। এই উদ্যোগের তথ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে আপনাদের সহযোগিতা একান্ত কাম্য। আপনাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে যেন ভোক্তারা সহজেই জানতে পারেন কোথায় এবং কীভাবে ন্যায্যমূল্যে ডিম ও মুরগি পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply