নিজস্ব প্রতিবেদক: পাবনার আটঘরিয়া উপজেলায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা, মদ, গাঁজা, ঘুমের ওষুধ, হেরোইন, ফেনসিডিল প্রভৃতি মাদকদ্রব্য। তবে এসব মাদকদ্রব্যের মধ্যে ইয়াবা, ফেনসিডিলে আসক্ত হচ্ছে বেশি। অথচ এগুলো নিষিদ্ধ।
আটঘরিয়া, কয়রাবাড়ী, ডেঙ্গাগ্রাম, ত্রিমোহন, একদন্ত বাজার, গোড়রী, মতিঝিল, গনির বটতলা, চাঁদভা বাজার, খিদিরপুর বাজার, নাদুড়িয়া সড়াবাড়িয়া চৌরাস্তা মোড়, পারখিদির পুর, রামচন্দ্রপুর, হাড়লপাড়া হুজুরের ঢাল, রামেশ্বরপুর বাজারে সহ দেবোত্তর বাজারে অহরহ এসকল মাদক হাত বাড়ালেই ছদ্দনামে পাওয়া যাচ্ছে। তবে ধংস হচ্ছে যুব সমাজ।
এগুলোর প্রতি তরুণদের আসক্তি সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে তারা এর সংস্পর্শে আসে। তারপর তাদের মধ্যে এক ধরনের নতুন ও রঙিন অনুভূতি কাজ করে।
এভাবে তারা নেশার জগতে পা বাড়ায় এবং মাদক তাদের এমনভাবে গ্রাস করে যে, সেখান থেকে ফিরে আসা তাদের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন।
মাদকের ভয়াল থাবায় আজ বিপন্ন তরুণ। স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্র আজ মাদকের ছড়াছড়ি। পারিবারিক সম্পর্ক শিথিল হওয়া তিক্ততা, বেকারত্ব, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবে দিন দিন মাদক আসক্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
মাদক যেহেতু হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় তাই উঠতি বয়সের ছেলেরা বাবার পকেট চুরি এমনকি ছিনতাই করেও অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।
মাদক সেবনের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় ১৫ থেকে ৩০ বছরের বয়সীদের মধ্যে। মাদক এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
তরুণদের পাশাপাশি তরুণীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। মাদকের নীল ছোবলে কোমলমতি হাত পরিণত হচ্ছে ভয়ংকর খুনির হাতে।
তারা অত্যন্ত সংগোপনে মাদক তুলে দিচ্ছে তাদের সহযোগীদের। তারা এসব সহযোগীর হাত থেকে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল প্রভৃতি মাদকদ্রব্য চলে যাচ্ছে তাদের খদ্দরের হাতে। চলে যাচ্ছে তরুণ যুবসমাজের হাতে।
বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে তরুণদের উদ্দীপনাময় শক্তি স্বপ্ন আজ থেমে গেছে মাদকের ভয়াল গ্রাসে। তাই দেখা যায়, বিগত বছরগুলোয় মাদক বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভয়াবহ নেশায় পরিণত হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, মাদক বর্তমান যুবসমাজকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে, এর পরিণতি কী? সর্বনাশা এ নেশা থেকে বেরিয়ে আসা অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ, জাতি ও সমাজের উজ্জ্বল নক্ষত্র আজকের যুব বা তরুণ সমাজ।
কিন্তু তারা যেভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে এই নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এর কুপ্রভাবে যেভাবে আমাদের তারুণ্য শক্তি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত, তা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আমাদের তরুণসমাজের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।
শিক্ষিত, অশিক্ষিত হতাশাগ্রস্ত এক শ্রেণির বেকার তরুণরা এই সর্বনাশা পথে পা বাড়িয়েছে। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি সমাজের ধর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তানরাও মাদকে আসক্ত।
নেশার ছোবলে পড়ে এ দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মাদকের পেছনে ছুটছে। আমাদের দারুণভাবে শঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন করে, এক শ্রেণির কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও মাদকে আসক্ত হয়েছে।
খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে এসব শিক্ষার্থী কখন যে আমাদের মনের আড়ালে, চোখের আড়ালে, মনের অজান্তে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়ে তা আমরা জানি না।
তাই মাদকদ্রব্য উৎপাদন থেকে সাধারণ খদ্দরের কাছে পৌঁছাতে বেশ কয়েকবার হাতবদল হয়। ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশে মাদক অতি সহজে পাওয়া যায়। আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ মাদকের মরণনেশা থেকে তরুণদের বাঁচানো।
মাদক যে শুধু ঢাকা বা বড় বড় শহরে এর ব্যাপ্তি তা নয় মাদকের যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে গ্রাম, গঞ্জে এমনকি পাড়া-মহল্লায়। তবে মাদকদ্রব্যের প্রতি বেশি আসক্ত হচ্ছে বেকার, ভবঘুরে হতাশাগ্রস্ত তরুণরা।
এ মরণনেশার ছোবলে একদিকে যেমন সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। অন্যদিকে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না যে মাদক এখন তরুণ-তরুণীদের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
এর ভয়াল থাবা প্রতিহত করতে আমাদের যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি সরকারি উদ্যোগেরও প্রয়োজন রয়েছে। মাদকের নীল ছোবলে তরুণরা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তা ছাড়া নেশায় আসক্ত হয়ে তারা ক্রমাগতভাবে ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
আমাদের প্রত্যেক অভিভাবককে তাদের সন্তানদের খোঁজখবর নেওয়া উচিত। সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তাদের ভালো-মন্দের শেয়ার করা উচিত। আসলে আমাদের ছেলেমেয়েদের কোনো খোঁজখবর আমরা অনেকে রাখি না।
অধিকাংশ অভিভাবকই তাদের সন্তানদের ব্যাপারে উদাসীন। এমনকি তার স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া সন্তান নিজ শয়নকক্ষে কী করছে সে খবরও অনেক অভিভাবক রাখেন না। তাদের সহপাঠী বা বন্ধু-বান্ধব কেমন প্রকৃতির কাদের সঙ্গে মিশে এ সম্পর্কে অভিভাবকদের খোঁজ নেওয়া দরকার।
বেকারত্ব, হতাশা, পারিবারিক বন্ধন হালকা, খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা ইত্যাদি কারণে আমাদের সন্তানরা বিগড়ে যায় এবং মাদকে আসক্ত হয়। মাদকসেবীর অধিকাংশই কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যাদের ওপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে।
অথচ তারা আজ বিপথগামী, ধ্বংসের মুখে, মাদকের ভয়াল থাবায় বিপন্ন। যাদের ওপর দেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন, ভবিষ্যৎনির্ভর করছে তাদের একাংশ যদি পথভ্রষ্ট হয়, ইয়াবা,
ফেনসিডিল মাদকের আসক্ত হয় তাই তাদের সঠিক পথে ফিরে আনা অত্যন্ত জরুরি এবং স্থানীয় প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সচেতন মহল।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply