নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) যাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া উচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ যাতে বরাদ্দ বাড়লেও নানা ধরনের বৈষম্য রয়ে গেছে। সামগ্রিকভাবে এ খাতে তিন ধরনের। বৈষম্য লক্ষ করা যায়, যা সমাধান করা উচিত। গ্রাম-শহরের বৈষম্য, আস্তানার বৈষম্য এবং বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে পৌছানো কঠিন এমন কিছু এলাকায় কম মনোযোগ দেওয়া। বরাদ্দের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সব ধরনের বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ওয়াশ খাতের বরাদ্দ এডিপি বৃদ্ধির আকারের সমানুপাতিক বা উচ্চতর হতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। পিপিআরসি, ওয়াটার এইড, ফানসা, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অলসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এবং সংস্থাসমূহের ফোরাম প্লাটফর্ম যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসি নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ৬ নং লক্ষা হলো সকলের জন্য নিরাপদ পানীয় জল এবং স্যানিটেশন নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যমাত্রা সঠিক সময়ে অর্জন নিশ্চিত করতে হলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বৃদ্ধির হার এবং উন্নয়ন বাজেটের সাথে ওয়াশ খাতের বরাদ্দকেও তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
তিনি বলেন, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এভিপি বরাদ্দের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য নিরসন এবং সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততাকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। চর, হাওর, পাহাড়ি অঞ্চলসহ জলবায়ুগত ঝুঁকির আওতাধীন সুবিধাবঞ্চিত এলাকা এবং নগয়গুলোর মধ্যকার বরাদ্দ বৈষম্য নিরসন করা প্রয়োজন্য ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ওয়াশ খাতের জন্য এডিপির বরাদ্দ ওঠানামা এবং কম আনুপাতিক বৃদ্ধির প্রবণতা দেখায়। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাতে (এমডিজি) ওয়াশ খাতের তুলনায় এসডিজি যুগের ওয়াশ খাতের লক্ষ্যমাত্রা আরও জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং, এখন নিরাপদ যাবার পানি এবং নিরাপদ স্যানিটেশনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী আমরা এই লক্ষ্যমাত্রায় যথাক্রমে ৫৯% এবং ৩৯% পূরণ করেছি। এসডিজি৬ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জনা মাত্র ৬ বছর বাকি আছে। আমাদের শুধু ওয়াশ খাতের বরাদ্দ বাড়ালে হবে না বরং আরও গুরুত্ব সহকারে আমাদের পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রয়োজন, বিশেষ করে ওয়াশ খাতের বরাদ্দ এডিপি বৃদ্ধির আকারের সমানুপাতক বা উজ্জ্যতর হতে হবে। পরিবেশ রক্ষার জন্য, পাবলিক প্লেস সহ সকল প্রতিষ্ঠানে নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধী-বান্ধব স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপির দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ওয়াশ খাতের বেশ প্রশংসনীয় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যায় যদিও বিশ্লেষণাত্মক রিপোর্ট দেখায় যে প্রবৃদ্ধি সামগ্রিক এডিপির আকার বৃদ্ধির হারের সমানুপাতিক ছিল না। লক্ষ্য করা যায় যে, এডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭.৪% থেকে ওয়াশ খাতের বরাদের জন্য ৫.৪৪% খুবই কম। ওয়াশ খাতের বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনুপাতের তুলনায় এই ধরনের কম বৃদ্ধি SDGB-এ সরকারের প্রতিশ্রুতি সময়মত অনুধাবনের বেলায় নেজিরাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এভাবে, ২৩২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ২৩% হ্রাস পেয়েছে। ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরে WASH এর জনা এডীপি বরাদ্দের ওঠানামাও পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবহুরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আকারে ১১.৮% বৃদ্ধি (২.৬৩ ট্রিলিয়ন টাকা) থাকা সত্ত্বেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিম্নগামী ওঠানামা ছিল বরাদ্দের প্রায় এক চতুর্থাংশ। এই ধরনের বাজেট কাটছাঁট লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি 100% নিরাপদ পানি এবং ১০০% নিরাপদ স্যানিটেশন প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণে বাঁধার সৃষ্টি করে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত সম্পূর্ণ বাজেট ব্যবহার করা যায়নি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যয় ছিল ১২৪.৪৭ কোটি টাকা, যার ফলাবরূপ সংশোধিত বাজেট ১৩৯ ৬৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই পরিমাণ সম্পূর্ণভাগ ব্যবহার করা হয়নি। একই ঘটনা প্রায় প্রতি বছর ঘটেছে। ২০২০-২১ আার্থবিছার কোডিড ১৯ এর কারণে সংশোধিত বাজেট ১১২,৩২ বিলিয়ন টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র ৭০.০৬ বিলিয়ন টাকা।
বরাদ্দের এই ধরনের ওঠানামা আনুপাতিকহারে ওয়াশ খাতের বিকাশের সাথে জিডিপি, জাতীয় বাজেট, এবং উন্নয়ন বাজেটের ব্যবধানকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে যা শেষ পর্যন্ত শহয় ও গ্রামের মধ্যকার বাবধানের প্রতিফলন দেখায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ২২.৫% থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৭.৭%। ওয়াশ যাতের জন্য বরদ্দে গ্রাম এবং শহরের মধ্যে যে ব্যবধান তা ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও বাপকভাবে অব্যহত ছিল।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ওয়াশ খাতের জন্য নেওয়া বরাদ্দ (৫.৪৪%) এডিপির বর্ধিত (৭.৪%) আকারের সাথে তাল মিলিয়ে এগোতে পারেনি। ওয়াশ খাতের এমন ‘অনুপাতের চেয়ে কম বৃদ্ধি সরকারের এসিডিজও এবং জাতীয় অগ্রাধিকার লক্ষ্যমাত্রার প্রতিশ্রুতি, যেমন, ১০০% সুপেয় খাবার পানি (NPT 17) এবং ১০০% নিরাপদে পরিচালিত স্যানিটেশন (NPT 18) বাবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সবশেষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে, পূর্ববর্তী অর্থবছরগুলোর মত এই বছরেও কিশোরী ও প্রজননক্ষম নালীদের মাসিককালীন বাস্থ্য যাবস্থাপন। নিশ্চিতকরণে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরীতে ব্যবহৃত কাঁচামালসহ স্থানীয় পর্যায়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন। বিক্রয়ের উপর ধার্যকৃত বিদ্যমান সকল ধরনের শুল্ক ও কর শতভাগ মওকুফ করার আশু প্রয়োজনীয় বাবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবী জানানো হয়।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply