শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ
জাতীয় প্রেসক্লাবে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা, ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠনে তওহীদভিত্তিক শিক্ষানীতির বিকল্প নাই ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও যুব সংহতি দিবস উপলক্ষে শহীদ জিয়ার মাজারে নাগরিক দলের শ্রদ্ধা এবং বিএনপির র‌্যালি অনুষ্ঠিত ভৈরবে ট্রাকের পিছনে পিকআপের ধাক্কায় চালক ও হেলপার গুরুতর আহত চব্বিশ এবং একাত্তরের অপরাধীরা নির্বাচন চায় না : মোমিন মেহেদী জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)-এর আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিনাজপুরের বীরগঞ্জে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালিত হয়েছে “নাগরিক নিরাপত্তা ও আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব” শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত আজ ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল টিউবস লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আল-আমিন কেমিক্যাল

দুই দশকে এশিয়ার মর্যাদাসম্পন্ন দেশ হবে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২

করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার এবং উন্নত দেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০৪১ সালের মধ্যে অর্থাৎ আগামী দুই দশকের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশে রূপান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, নৌ ও সড়ক-রেলের এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের বিষয়কে এ উদ্যোগে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আগামী দুই দশকে এশিয়ার মধ্যে অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ, পররাষ্ট্র, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়, নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের মধ্যেই উন্নত দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ অনেকাংশে এগিয়ে নিতেই এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত দেশের সমপর্যায়ে নিতে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। আর ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, মেট্রো রেল প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্পের কাজগুলো সফলভাবে এগিয়ে চলেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ইমেজ আরো বৃদ্ধি এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস্ (এসডিজি) যথাযথ বাস্তবায়নেও নেওয়া হয়েছে বাড়তি উদ্যোগ।

উল্লেখ্য, প্রতিবেশী মিয়ানমারের বিতাড়িত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে আশ্রয়-খাবার ও চিকিৎসা সুবিধা দিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ইমেজ অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিতও হয়েছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ইমেজ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ ও শক্ত অবস্থানের কারণে ভাবমূর্তি আরো বেড়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বের বুকে উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিশ্বের সব অঞ্চলের দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, ভুটান, জাপান-চীন-ভিয়েতনাম এবং ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার এবং সহযোগিতা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে এশিয়ার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এসবের মূল উদ্দেশ্য দেশকে যতদ্রুত সম্ভব উন্নত দেশে রূপান্তর এবং বাংলাদেশকে এশিয়ার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করা।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার বিশ্বব্যপী সহযোগিতা সম্প্রসারণের ব্যাপক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এজন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি ‘রিজিওনাল কানেক্টিভিটি’র ওপর বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ গত ১০ বছরে নিরপেক্ষ ও ভারসাম্যমূলক পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী দেশের সুনাম বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। সরকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক, সামরিক ও কারিগরি সক্ষমতাও আগের তুলনায় অনেক গুণ বৃদ্ধি করেছে।

শাহরিয়ার আলম বলেন, বিশ্ব অর্থনতির মূল কেন্দ্র এখন এশিয়ায়। তিনি বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ায় মর্যাদাসম্পন্ন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, উন্নয়নের গতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও মিয়ানমার নিয়ে একটি রিজিওনাল ইকোনমিক করিডর গঠনের বিষয়টি নিয়েও উচ্চপর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে। জানা গেছে, এসব দেশের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি ও এসব দেশের কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগানো, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং রপ্তানি সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে এসব উদ্যোগে।

এদিকে, ভূরাজনৈতিকভাবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংযোগস্থল হওয়ায় এশিয়া মহাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের সংযোগ সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষেজ্ঞরা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে গত ৫০ বছরে আমাদের অর্জন অনেক । এখন আর কেউ আমাদের হতদরিদ্র দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করে না। আগে যারা আমাদের নিয়ে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করত, এখন আর কেউ তা করে না। করোনা মহামারির আগ পর্যন্ত গত ১০ বছর বাংলাদেশ ‘অসাধারণ গতিশীলতায়’ এগিয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে কিছুটা ধাক্কা খেলেও বাংলাদেশ গত দুই দশক ধারাবাহিকভাবে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

জানা গেছে, আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পারস্পরিক বন্দর ব্যবহার, রেলওয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ভুটান-ভারত-বাংলাদেশ মধ্যে সড়ক ও নৌপথে যোগাযোগ আরো বৃদ্ধি ও সহজীকরণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে নৌপরিবহণ মন্ত্রলালয়, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজও শুরু করেছে। যদিও ইতোমধ্যে সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ যোগাযোগ আগের চেয়ে অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া ভুটানের সঙ্গেও নৌপথে চলাচলের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া আঞ্চলিক বাণিজ্যে দিন দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্র্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশের নৌপথ। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে সড়ক ও নৌপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে নেপাল ও ভুটান অনেক আগে থেকেই আগ্রহী। এছাড়া আঞ্চলিক যোগাযোগে ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া অতি শিগগির আখাউড়া-আগরতলা রেল চলাচল শুরু হচ্ছে।

সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আঞ্চলিক সহযোগিতা সম্প্রসারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর মানুষের মধ্যে আন্তঃচলাচল ও পণ্য পরিবহণ সুবিধা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে গঠিত এ-সংক্রান্ত কমিটির এক প্রতিবেদনে ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানকে ট্রানশিপমেন্ট সুবিধা প্রদানের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নে ৪৯ হাজার ৯২৬ কোটি ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব উল্লেখ ছিল। এর মধ্যে সড়কপথ উন্নয়নে ১১ হাজার ৯৪১ কোটি ২০ লাখ টাকা, রেলপথ উন্নয়নে ৩২ হাজার ২৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা, নৌপথের উন্নয়নে ১ হাজার ১৭১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়।

এছাড়া চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১ হাজার ৮৫০ কোটি ৯০ লাখ টাকা, মংলা সমুদ্র বন্দরের উন্নয়নে ২ হাজার ৭৯৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা এবং স্থলবন্দরগুলোর উন্নয়নে ১৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহণের জন্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অর্থাৎ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান প্রচলিত নৌ প্রটোকল ‘ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রেড ও ট্রানজিটের’ আওতায় ভারতকে আশুগঞ্জ বন্দর হয়ে আখাউড়া হয়ে নৌ-ট্রানজিট সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সড়কপথে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটানের মধ্যে সরাসরি বাস-ট্রাক চলাচলের জন্য ১৫ জুন ২০১৫ সালের ১৫ জুন ভুটানের রাজধানী থিম্ফুতে এ চার দেশের মধ্যে একটি মোটর ভেহিকলস্ চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল। বাংলাদেশের পক্ষে এ চুক্তিতে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষর করেছিলেন। এ চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নিয়মিত বাস-ট্রাক চলাচলও করছে। বিশ্লেষকদের মতে, সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সরকারের এসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে আগামী দুই দশকের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের পাশাপাশি এশিয়ার অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন দেশে রূপান্তরিত হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS