 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    স্টাফ রিপোর্টারঃ লাল টুকটুকে মরিচে সাজানো পুরো হাট। সূর্য ওঠার পর থেকেই হাটে আসতে শুরু করে মরিচ। নৌকা এবং ঘোড়ার গাড়িতে করে ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি, মোল্লারচর, খোলাবাড়ি, ফজলুপুর, এরেন্ডবাড়ি, উড়িয়া, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের বকশিগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে মরিচ বিক্রি করতে আসেন কৃষক ও পাইকাররা। এরপর শুরু হয় বেচাকেনার হাঁকডাক।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় মরিচ চাষ বেশি হওয়ায় জেলার একমাত্র মরিচের হাট বসে এখানে। গজারিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র সংলগ্ন হাটে বিভিন্ন চর থেকে প্রচুর মরিচ আসে। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার দুই দিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এই হাট বসে। এই অঞ্চলে ফুলছড়ি হাট মরিচের বাজার হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ। প্রতি হাটে কোটি টাকার ওপর মরিচ কেনাবেচা হয়।
ফুলছড়ি মরিচ হাট নামে পরিচিত এই হাট এখন লাল মরিচে রঙিন হয়ে উঠেছে। গাইবান্ধা সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের কয়েকটি চর থেকে কৃষকরা মরিচ বিক্রি করতে আসেন।
উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের গলনাচরের কৃষক আব্দুল জব্বার (৪৩) বলেন, বিঘা প্রতি কাঁচামরিচ উৎপাদনে ব্যয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বিঘায় ৫০ মণের বেশি মরিচ উৎপন্ন হয়। ৫০ মণ কাঁচামরিচ জমিতে লাল রং হয়ে পাকার পর তা রোদে শুকিয়ে ১০ মণের মতো শুকনো মরিচ হয়। শুকাতে শ্রমিকসহ অন্যান্য আরও খরচ হয় প্রায় হাজার দশেক টাকা। সে হিসেবে ১০ মণ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। ব্যয় বাদে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার মতো আয় হয় তার।

এই হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসেন প্রায় হাজার খানেক কৃষক।
গাইবান্ধার লাল মরিচ বা শুকনো মরিচের কদর রয়েছে দেশব্যাপী। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদীবেষ্টিত জেলার চার উপজেলার চর-দ্বীপচরের শত শত বিঘা জমিতে মরিচের ব্যাপক ফল হয়ে থাকে। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরই চরের পলি মাটিতে বীজ ছিটিয়ে দুই-তিনবার নিড়ানি দিলেই বিনা সারে বিস্তর ফলন হয় মরিচের। মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়ার কারণে চরাঞ্চলের মরিচের রং সুন্দর ও আকার বড় হয়। এ কারণে বগুড়া, নওগাঁ, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা ফুলছড়ি হাটে মরিচ কিনতে আসেন। তবে বেশি মরিচ কেনেন ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী নামি দামি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা।
বগুড়া থেকে ফুলছড়ি হাটে মরিচ কিনতে এসেছেন জয়নাল ব্যাপারী বলেন, ভোরবেলা ট্রাক নিয়ে এ হাটে মরিচ কিনতে এসেছি। ফুলছড়ির মরিচ ভালোমানের। প্রতি হাটে ৩০ থেকে ৪০ মণ মরিচ কিনে নিয়ে যাই। এরপর তা আমাদের স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করি।
উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত পুরাতন উপজেলা হেডকোয়ার্টার্স মাঠে ২০০৪ সাল থেকে এই মরিচের হাট বসে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ভরা মৌসুমে মরিচ বেশি বিক্রি হয়। অন্য সময়ে বিক্রি হয় কম।
ফুলছড়ি হাটের ইজারাদার বজলুর রহমান মুক্তা জানান, সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুদিন সকাল ৭টা থেকে হাট বসে। এবার প্রতি মণ মরিচ ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হাটে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার মণ শুকনো মরিচ বিক্রি হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, গাইবান্ধার সাতটি উপজেলায় যে পরিমাণ মরিচের চাষ হয় তার অর্ধেকই উৎপন্ন হয় ফুলছড়ি উপজেলায়। আবহাওয়া ও চরের উর্বর মাটিতে দিন দিন মরিচ চাষের পরিমাণ বাড়ছে। চরের লোকজনও মরিচ চাষে ঝুঁকছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
 
                                 
									Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply