নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মেহেরপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় নারী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাইসাইকেল। প্রতিদিন সাইকেলে চড়ে ৪০০-৫০০ মেয়ে দল বেধে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। ফলে বাড়তি টাকা খরচ না করেই সময়মতো বিদ্যালয়ে যাওয়া যাচ্ছে। এতে বেড়েছে নারী শিক্ষার হার। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সচেতন মহল।
বছর পাঁচেক আগেও মেহেরপুরে গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া সীমান্ত এলাকার রাস্তা ঘাট ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অনুন্নত। সেই সঙ্গে ছিল সামাজিক কুসংস্কারও। নারী শিক্ষাকেই যেখানে বাঁকা চোখে দেখা হতো, সেখানে নারী শিক্ষার্থীরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাবে! এমন ভাবনা যেন আকাশ কুসুম কল্পনা।
দিন বদলেছে। বদলে গেছে মানুষের চিন্তাধারা, জীবন যাত্রার মান। বর্তমানে সীমান্ত এলাকার রাস্তাঘাট উন্নত হলেও যোগাযোগের মাধ্যম অপ্রতুল। তাই বিকল্প বাহন হিসেবে বাইসাইকেল জনপ্রিয় হচ্ছে। ছেলেমেয়ে উভয়ে স্কুলে যাতায়াতে এ বাহন ব্যবহার করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তেঁতুলবাড়িয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৪০০-৫০০ মেয়ে দল বেঁধে সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। এ বাহন মেয়েদের জন্য নিরাপদ এবং সঠিক সময়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছতে পারছে শিক্ষার্থীরা। বিষয়টিকে শিক্ষা ব্যবস্থায় অগ্রযাত্রার মাইলফলক হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী।
তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের একজন অভিভাবক মোছা. ফাতেমা বলেন, ‘আমার মেয়ে এখন সাইকেলে স্কুলে যায়। প্রথম প্রথম অনেকেই অনেক কিছু মনে করতো, কিন্তু এখন বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। সাইকেল কিনে দেবার ফলে তার পড়াশোনাতেও আগ্রহ বেড়েছে।
তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের আরও একজন অভিভাবক মো. জাহিদুল হক বলেন, ‘আমার মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। এটি আমার প্রথম লক্ষ্য এবং আমার ইচ্ছা আছে মেয়েকে নার্সিং পড়াবো। প্রতিদিন স্কুলে পাঠানো এবং প্রাইভেট পড়াতে পাঠানো বেশ একটি খরচের বিষয়, যেটি প্রতিদিন প্রায় ১০০ টাকার কাছাকাছি। যে খরচটি আমার জন্য বহন করা কষ্টসাধ্য। সে ক্ষেত্রে সাইকেলটি একটি ভাল মাধ্যম। এই স্কুলে অনেক মেয়ে সাইকেলে করে আসে এবং আজ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি।’
স্কুলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে, তাদের ভাষ্য, ‘অনেক দূর থেকে পায়ে হেঁটে স্কুলে আসতে অনেক সময় লাগতো। সাইকেল নিয়ে আসায় নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারছি। আগে সাইকেল না থাকায় স্কুল কামাই হতো, এখন আর তা হয় না। রাস্তার মাঝে হঠাৎ করে সাইকেলের কোনো সমস্যা হলে আমাদের ছেলে বন্ধুরা সহযোগিতা করে। আমাদের মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই।’
তেঁতুলবাড়িয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘সর্বমোট ৫০০ থেকে ৬০০ শিক্ষার্থী সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করে। যার বেশিরভাগই ছাত্রী। এছাড়া সাইকেল নিয়ে সময়মতো স্কুলে আসার ফলে নারী শিক্ষার হারও বেড়েছে। এ গ্রামে লেখাপড়ার হার বিশেষ করে নারী শিক্ষার হার অনেক কম ছিল। কিন্তু এখানে স্কুল প্রতিষ্ঠার পর এ এলাকার শিক্ষার হার অনেকাংশে বেড়ে গেছে।’
ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোছা. রুমানা নাসরিন বলেন, ‘আমাদের ছাত্রীদের সংখ্যা ৬৫ শতাংশ। এরা অনেক দূরদূরান্ত থেকে স্কুলে আসে। ফলে হেঁটে এলে যথাসময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারে না। তাই সাইকেলে চড়ে স্কুলে আসাটা অনেক জরুরি বলে মনে করি। সেই সঙ্গে সাইকেলে করে স্কুলে আসার বিষয়ে বাবা-মায়েদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে। তারা চায় তাদের মেয়েরা উচ্চ শিক্ষিত হয়ে সমাজের ভালো কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখুক।
তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস বলেন, ‘দূর থেকে আসা এই স্কুলের ছাত্রীদের কষ্ট লাঘবে আমি এরআগে বেশকিছু সাইকেল দিয়েছি। পরবর্তীতে আমার ইউনিয়নের অন্যান্য স্কুলেও সাইকেলসহ শিক্ষাকাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র দেয়ার ইচ্ছা রয়েছে। নারীশিক্ষা এগিয়ে নিতে আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা থাকবে।’
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনি খাতুন বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এবং সরকারি প্রকল্প প্রণোদনা দিয়ে নারীর অগ্রযাত্রায় সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হবে।’
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply