বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

রাষ্ট্রহীন শিশুর পোড়া শৈশব!

জাহাঙ্গীর আলম
  • আপডেট : শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ “যেখানে বিরাজ করে ন্যায় ও স্বাধীনতা; আমাদের দেশ, আমাদের মাতৃভূমি; যেখানে প্রাধান্য পায় সমানাধিকার ও সঠিক নীতি; মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের জন্য; আমাদের দেশ, আমাদের মাতৃভূমি।”

এই বাক্যগুলো নিয়েই তৈরি মিয়ানমারের জাতীয় সঙ্গীত–‘কাবা মা কেই’। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি স্কুলের শিশু–আসমান উল্লাহ, মুহিব, ইয়াজ, আমিরুল মনের সব আবেগ দিয়ে তার সহপাঠীদের নিয়ে গেয়ে চললো মিয়ানমারের জাতীয় সঙ্গীত। যদিও গুনে গুনে পাঁচটি বছর হচ্ছে সেই দেশ থেকে তারা বহন করে এনেছে ভয়াবহ স্মৃতি আর স্বজন হারানোর বেদনা। 

অত্যাচারের বর্বরতায় সে সময় অজানা এক গন্তব্যে পা বাড়াচ্ছিল সবাই, তখন ছোট্ট এই শিশুদের কেউ কেউ সাহস করে জিজ্ঞেস করেছিল ঘর-বাড়ি ছেড়ে তাদের গন্তব্য কোথায়? শুধু বাবা-মা চোখের দিকে তাকিয়ে অভয় দিয়ে এতটুকু বলেছিল, ‘জীবনটা বাঁচাতে হলে এই ভূমি থেকে পালাতে হবে।’ পোড়া ঘর আর বর্বর অত্যাচার থেকে কি মুক্তি পাবো? উত্তর ছিল- আল্লাহ রহম! 

রোহিঙ্গা ট্যাগ, নির্যাতন, তুচ্ছতাচ্ছিল্য আর কোণঠাসা নিয়ে শৈশব পার করছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরনার্থী শিশুরা। নিজ গোত্রের লোকদের অন্যায়-অত্যাচারে অতিষ্ঠ তারা। কেউ কোণঠাসা হয়ে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন; কেউ কেউ ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছে; কাজ করছেন টেকনাফ-কক্সবাজারের হোটেল-রেস্তোরাঁয়। বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে থাকা রোহিঙ্গারা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া, খুন, ধর্ষণ, অপহরণের, গোলাগুলি, আধিপত্য বিস্তার, মাদক, অস্ত্রসহ সহিংসতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নানান শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। 

ট্রমা নিয়ে মিয়ানমার থেকে আসা এসব রোহিঙ্গা শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য একটা পারিবারিক পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা পাচ্ছে না এই শিশুরা। বরং পরিবেশ প্রতিকূল ক্যাম্পে, কখনো আগুন, কখনো বৃষ্টি, কখনো মারামারি। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ। 

সরেজমিন টেকনাফের উনচিপ্রাং ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শিশুদের উপস্থিতি বেশি। যাদের সিংহভাগের বয়স ৭ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে। কেউবা উলঙ্গ, জামা-কাপড় ছাড়া শিশুর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। দল বেঁধে আড্ডা দিতে অথবা খেলা করতে দেখা যায় তাদের। ১৩ থেকে ১৪ বছরের বেশকিছু শিশুকে সিগারেট খেতেও দেখা যায়। সর্বত্র যেন শিশুদের বিচরণ। কেউ কাজ করছে, কেউ থালা-বাসন ধুচ্ছে, আবার কেউ রাস্তার পাশে বিক্রি করছে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস। 

ক্যাম্প-১৮, ব্লক-৩ থেকে ভেসে আসছিল গান ,“আরো ও সোনার দেশ তোয়ারে আরকান নামে আবাদ কইজ্জে কেরে…”মার্বেল নিয়ে খেলছে আর গলায় গলা মিলিয়ে গাচ্ছে– আহমদ কামরান, ইযাযুল, ইরান, ফজে ও জামি উল্লাহ। এদের সবার বয়স ১০-১২ বছরের এদিক সেদিন।

শিশু ফজে আলমের সাথে কথা হয়, কোথায় থেকে এসেছ? জানতে চাইলে মিয়ানমারের দিকে হাত দেখিয়ে বলেন, ‘আঁরা হেততুন হেততুন ধাই আইস্যি যে। আই…’(আমরা ওইখান (মিয়ানমার)  থেকে পালিয়ে এসেছি। আমি…) 

ক্যাম্পে কাজ করা ইউনিসেফের স্বেচ্ছাসেবী সানজিদা তার কথার প্রতি-উত্তর করে জানালেন; শিশুটি (ফজে আলম) বলছে, ‘আমি অনেক কষ্টে আছি। এখানে খেলার কোন জায়গা নাই। থাকাতে অনেক কষ্ট আমাদের। আমি আমার ঘর আর বাড়ি ফিরে চাই। এখানে মাঝেমধ্যে গুলি ফুটে। সবসময়ই আওয়াজ হয়। ঠিকমতো পড়তে পারি না। আমার সব বন্ধুকে ফিরে পেতে চাই আমি। ওরা কেন পুড়িয়ে দিলো আমাদের ঘর? আমাদের ঘর কি আর দিবে না! ’ 

একটু পাশেই থাকা সিতোম ভূঁইয়া (৯) নামের আরেক শিশু দৌড়ে এসে মুখস্থ বুলির মতো করে আঞ্চলিক ভাষায় বলল, ‘আঁর নাম মোহাম্মদ সিতোম, বাপন (বাবা) নামো মৃত আবদু রফু, আঁই (আমি) বুচিডং অর (মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যের) কোয়ানচিমং পাড়ার। বাংলাদেশত হইলদে (আছি) ক্যাম্প-১৮, ব্লক-ইস্ট-৩।’ বলেই দৌড় দিল কিছু বলার আগেই। 

‘এখন যদি নিজের দেশে থাকতাম, লোকে বলতে পারতো না রোহিঙ্গা শিশু! পরবাসী! আমার বাবা আমাকে স্কুলে দিয়ে আসতো। মা আমার জন্য কত ভালো ভালো খাবারই না রান্না করতো! এখানে আমাদের খেলার জায়গা নেই। ঘোরাঘুরি করারও জায়গা নেই। পড়তেও ভালো লাগে না।’ 

এভাবেই কাপড় কাচতে কাচতে কষ্টের কথাগুলো বলছিল ক্যাম্পের চৌদ্দ বছরের শিশু রূপা। শুধু রূপা নয়, কক্সবাজার কুতুপালং, উখিয়াসহ রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে তার মতো অনেক শিশুই এমন আক্ষেপের কথা জানিয়েছে। বলছে নিজেদের সংগ্রামী জীবনের কথা। সবার চাওয়া একটাই- কবে তারা ফিরে সেই নিজেদের ঘরবাড়ির জায়গায়? সেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া পোড়ামাটিতে ! 

বেশ কয়েকজন বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা হলে রিহানা নূর নামের একজন বলেন, ‘আমাদের বাচ্চারা এখানে থাকতে চাচ্ছে না, তারা এখানে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না। ঠিকমতো খেলাধুলা করার জায়গা পাচ্ছে না। আমরা চাইলেও তাদের পছন্দমতো খাবার রান্না করে দিতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমরা আমাদের দেশে থাকলে নিজের ইচ্ছামতো সবকিছু করতে পারতাম। এখানে আমাদের অন্যের ওপর নির্ভর করে থাকতে হয়। আমাদের সন্তানদের জন্য হলেও নিজের দেশে যেতে চাই।’

বেসরকারি কয়েকটি সমীক্ষা বিশ্লেষণ করে মোটাদাগে দেখা গেছে– রোহিঙ্গা শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে, শরণার্থী পরিচয়ে বেড়ে উঠা। কারণ, ক্যাম্পে জন্ম নেওয়ার পর একটি শিশু যখন কিছু বুঝতে শিখছে, ঠিক তখনই সে জানতে পারছে- যে সে একজন শরণার্থী। অথচ তার নিজেরও একটি দেশ আছে। যেখান থেকে তারা বাস্তুচ্যুত। যেখানে নিজেদের সুন্দর বাড়ি ছিল। পরিবার অনেক আভিজাত্যের সঙ্গে বসবাস করতো। এসব বিষয় স্বাভাবিকভাবেই শিশুটির মনে দাগ কাটছে।

এছাড়া অগ্নিকাণ্ড, বন্যা ও পাহাড় ধ্বসসহ প্রায় সারাক্ষণ বিভিন্ন ঝুঁকি ও আতঙ্কের সঙ্গে বসবাস করছে রোহিঙ্গারা। সবথেকে বেশি আতঙ্কে থাকে শিশুরা। ২০২১ সালের ২২ মার্চ কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালির তিনটি ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অনেক ভয়াবহ ছিল সেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। সেই দুর্বিষহ অগ্নিকাণ্ড যেন এখনো ভুলতে পারছে না শিশুরা। এছাড়া নিজ দেশের ঘটা লোমহর্ষ দৃশ্য তো আছেই। ২০২১ সালের ২৭ জুলাই ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়। ওই সময় আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। সে সময় পানির স্রোতে ভেসে ক্যাম্প-১৮ এর এক শিশুর মৃত্যু হয়। বর্তমানেও সেই আতঙ্কের সঙ্গেই বসবাস করছে রোহিঙ্গা শিশুরা।

রোহিঙ্গা শিবিরে শিশুদের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা। তারা এই আবদ্ধ পরিবেশে পড়াশোনায় মন বসাতে পারছে না। আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল সংস্থার (ইউনিসেফ) তথ্য বলছে- বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে প্রায় চার লাখ স্কুল-বয়সী রোহিঙ্গা শিশু রয়েছে। এদের মধ্যে তিন লাখ শিশু তাদের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে।

আরও পড়ুন: ময়লার ভাগাড়ে হারাচ্ছে শৈশব!

রোহিঙ্গা ক্যাম্পজুড়ে ৩ হাজার ৪০০টি শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে ২ হাজার ৮০০ টিই ইউনিসেফ সমর্থিত। যেখানে বেশিরভাগ শিশুই তথাকথিত ‘লার্নিং কম্পিটেন্সি ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাপ্রোচ (এলসিএফএ)’ এর আওতায় শিখছে, যা প্রাথমিকভাবে চার থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রথম থেকে চতুর্থ গ্রেড সমমানের শিক্ষা নিশ্চিত করছে। এছাড়াও তাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও বেশকিছু উদ্যোগও নিয়েছে ইউনিসেফ।

এই অগ্রগতি সত্ত্বেও, প্রায় এক লাখ স্কুল-বয়সী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু স্কুলে যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ক্যাম্পে বসবাসরত অভিভাবকরা দোষছেন আবদ্ধ পরিবেশে বড় হওয়া এবং খেলাধুলার ব্যবস্থা না থাকায় শিশুরা পড়াশোনায় আগ্রহ হারাচ্ছে।শরণার্থী ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা প্রত্যেকটি শিশুর আরেকটা চ্যালেঞ্জ উন্মুক্ত খেলাধুলার ব্যবস্থা। শিবিরে নেই কোনো বড় মাঠ কিংবা পার্ক। যদিও এখানে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা খেলাধুলার জন্য অল্পকিছু ব্যবস্থা রেখেছে। তবে যেখানে তৃপ্তি হচ্ছে না শিশুদের। তারা উন্মুক্তভাবে খেলাধুলা চায়, মুক্ত পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে চায়। 

শিবিরে বসবাসরত কোনো বাবা-মা ইচ্ছে করলেই সন্তানদের পছন্দের খাবার দিতে পারেন না। রোহিঙ্গা শিবিরের অভিভাবকদের সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। বাবা-মায়েদেরই তাকিয়ে থাকতে হয় অন্যের দিকে। যার প্রভাব পড়ছে শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও। রোহিঙ্গা শিবিরে জন্মের পর থেকেই একটি শিশুকে আবদ্ধ পরিবেশের মধ্যে বড় হতে হচ্ছে। শিশুটি যখন বুঝতে শিখছে, তখন তার জন্য প্রতিকূল পরিবেশ মেনে নেওয়া অনেক কষ্টের হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিশু বয়সে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা ছাড়াও উন্মুক্তভাবে চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আবদ্ধ জীবন শিশুদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

রোহিঙ্গা শিবিরে এমন অনেকেই আছেন যারা নিজ দেশে খুব বিলাসবহুল জীবনযাপন করতো। তবে বর্তমানে তারা নিজেদের সন্তানদের নিয়ে খুব ছোট পরিসরে বসবাস করছেন। আর একটি শিশু যখন বড় হয়ে নিজেদের অতীত জানছে, তাদের মনে সেটি ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। রোহিঙ্গা শিবিরে জন্ম নেওয়া বা এখানে বেড়ে ওঠা অধিকাংশ শিশুই বড় হচ্ছে মানসিক অবসাদ নিয়ে। প্রতিকূল পরিবেশে প্রতিটি মুহূর্তে তাদের মনে নিত্য নতুন আকুতি। নানা চাওয়া-পাওয়ার সীমাবদ্ধতার কারণে একপ্রকার মানসিক অবসাদের ভুগেই বড় হচ্ছে তারা। এছাড়াও আরও অনেক সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে বেড়ে উঠছে রোহিঙ্গা শিশুরা।

এসব বিষয়ে কথা হলে রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা ইমরান হোসেন রাজের সাথে। তিনি বলেন, ‘এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে রোহিঙ্গা শিশুরা একটা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে। এখানে আবদ্ধ জীবনযাপন, ঘনবসতির পরিবেশ, উন্নত শিক্ষা-চিকিৎসাসহ নানা ধরনের সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে শিশুরা বড় হচ্ছে।’

তিনি আরো জানান,‘প্রতিকূল পরিবেশে অনেক শিশুই ছোট-খাট ইনকাম জেনারেট কাজের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে। এতে করে শিশুশ্রম বা শিশুদের ওপর একটা বার্ডেম চলে আসে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- তারা একটা মানসিক ডিপ্রেসের মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে।’

সবমিলিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য- রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরলেই বিশাল এই জনগোষ্ঠী নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বমহলের চিন্তা দূর হবে। সেই সঙ্গে জন্ম থেকেই সংগ্রামী জীবনে থাকা রোহিঙ্গা শিশুরাও নিজেদের স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে।

জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী চার দশকের বেশি সময় রাষ্ট্রহীন জীবনযাপনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের পর সংকট আরও জটিল রূপ ধারণ করে। এটি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয়। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জীবন, পরিচিতি সংকট এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও এটা দুশ্চিন্তার বিষয়। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের বিশ্বের অন্যতম নিগৃহীত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে। 

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে প্রায় পাঁচ বছর ধরে বাস করছে ১৫ বছর বয়সী সাহাব উল্লাহ। ২০১৭ সালে নিজেদের দেশ মিয়ানমারে নির্যাতন ও সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসে সাহাব ও তার পরিবার। আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে চলে আসে তারা। প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম নেওয়া সাহাবের জন্য এই যাত্রা ছিল অন্যদের থেকে বড় কষ্টের, এত পথ হেঁটে আসাটা তার জন্য ছিল খুবই কঠিন। পুরো পথ তার বড় ভাই পিঠে করে নিয়ে আসে। সাহাবের চোখের সামনেই হারিয়েছে তার সহপাঠীদের কেউ কেউ। এখন সেই স্মৃতি তাড়া করে সকাল সন্ধ্যা! 

ক্যাম্পে অনেক শিশুই এসেছে তাদের বাবা-মা কিংবা আত্মীয় স্বজন ছাড়াই। জাতিসংঘ বলছে তাদের সাথে কক্সবাজারে কাজ করছে এমন সাহায্য সংস্থাগুলোর হিসেবে এখন পর্যন্ত এরকম এক হাজার তিনশর বেশি শিশুকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাহায্য সংস্থাগুলোর ধারণা, এই শিশুদের বাবা-মা দুজনকেই অথবা বাবাকে মিয়ানমারে মেরে ফেলা হয়েছে।জাতিসংঘ, সেইফ দ্যা চিলড্রেন, এএফপি, রয়টার্স সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যম থেকে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে এক হাজার ১০০’র বেশি শিশু দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে একাই বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।

সংঘাত, সহিংসতা এবং অন্যান্য সংকটের কারণে ২০২১ সালের শেষের দিকে তিন কোটি ৬৫ লক্ষ শিশু তাদের বসতবাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। গণমাধ্যমে পাঠানোকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, ইউনিসেফের অনুমান এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ সংখ্যা। এর মধ্যে উদ্বাস্তু এবং আশ্রয়প্রার্থী শিশুর সংখ্যা এক কোটি ৩৭ লক্ষ। তাছাড়া প্রায় দুই কোটি ২৮ লক্ষ শিশু রয়েছে; যারা সংঘাত ও সহিংসতার কারণে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ক্যাম্পে কথা বলা ডজনখানেক শিশুর কণ্ঠেই একটাই কথা-‘অনারার মুল্লুকের রাজার হাচে মোরার ফরিয়াদ আঁরারে ওয়াহপেস পাঠাওন।’ ( মোটাদাগে – তারা দেশে ফিরতে চায় )  

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাস্তচ্যুত হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসাসহ ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া হয় কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি অস্থায়ী আশ্রয় ক্যাম্পে।

ফটো গ্যালারী

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS