গাজা শহরে পাঁচ সন্তান নিয়ে বসবাসরত ৪১ বছর বয়সী রীম তৌফিকের মতো অসংখ্য পরিবার এখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। গত পাঁচ মাস ধরে তার পরিবার কোনো প্রকার মাংস বা ফলমূল খায়নি। চার বছর বয়সী তার ছেলে জানে না ফলের স্বাদ কেমন।
জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানিয়েছে, গাজা সিটি ও আশপাশের এলাকায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ চলছে। সংস্থার সতর্কবার্তা অনুযায়ী, পাঁচ লাখের বেশি মানুষ এখন ক্ষুধা, চরম দারিদ্র্য ও মৃত্যুর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ছয় সন্তানের মা রাজা তালবেহ এক মাস আগে গাজার জেইতুন এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তার শরীর গ্লুটেন সহ্য করতে পারে না। বাজারে খাবার পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুত জীবন, দুর্ভিক্ষ—সবই মেনে নিতে কঠিন। এখন খাবারই একমাত্র বড় চ্যালেঞ্জ।”
২৯ বছর বয়সী রিদা হিজেহের পাঁচ বছরের মেয়ে লামিয়ার ওজন ১৯ কেজি থেকে নেমে সাড়ে ১০ কেজি হয়েছে। লামিয়া পা ফোলা, চুল পড়া এবং স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছে। তিনি বলেন, “শিশুরা খেতে পায় না, কোন ফল বা সবজি নেই। ডাক্তারেরা শুধু অপুষ্টির কথা বলেন, কিন্তু সাহায্য কেউ দেয়নি।”
ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা ইউকে-মেডের নার্স ম্যান্ডি ব্ল্যাকম্যান বলেন, মাতৃত্বকালীন সময়ে ক্লিনিকে আসা ৭০ শতাংশ মায়ের শরীরে অপুষ্টি ভয়াবহ পর্যায়ে রয়েছে। এর প্রভাব শিশুরা জন্মের সময়ই বহন করছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে ৬২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত করেছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অন্তত ২৭১ জন দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে মারা গেছে, যাদের মধ্যে ১১২ জন শিশু।
গাজার বাসিন্দা আসিল বলেন, “আমি মাসের পর মাস কোনো ফল বা মাংস খাইনি। সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে। শিশুদের জন্য গুঁড়া দুধ পাওয়া কঠিন, পাওয়া গেলেও দাম খুব বেশি।”
সেভ দ্য চিলড্রেনের সিনিয়র মিডিয়া ম্যানেজার শাইমা আল-ওবাইদি বলেন, “মানুষ ঘাস খাচ্ছে, পাতা খাচ্ছে। শিশুরা বলছে, তারা মরে যাক, যেন বেহেশতে খাবার খেতে পারে।”
গাজার মানুষ এখন প্রতিদিন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও যুদ্ধের ভয়ের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS