শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৫ অপরাহ্ন

রমজানে সিন্ডিকেটেরে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ডিম মুরগির বাজার স্বস্তি, জনগণ খুশি হচ্ছে – সরকার ক্রেডিট নিচ্ছে, আসলে পরিস্থিতি ভিন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের পোল্ট্রি খাত একটি সময়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের ওপর নির্ভরশীল ছিল, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি তাদের জন্য চরম সংকট তৈরি করেছে। সিন্ডিকেট, কর্পোরেট কোম্পানির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ, মুরগির বাচ্চা ও ফিডের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, এবং বাজারের অসামঞ্জস্যপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে দেশের পোল্ট্রি শিল্প একটি ভয়াবহ সংকটে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে, ডিম উৎপাদনকারী প্রান্তিক খামারিরা প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি ডিম উৎপাদন করেন, কিন্তু তাদের প্রতিটি ডিমে ৩ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এর ফলে প্রতিদিন প্রায় ১২ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। গত দুই মাসে ডিম উৎপাদনকারী খামারিরা আনুমানিক ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে, ডিম ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছেন, তবে খামারিরা এখনো ক্ষতির মধ্যে রয়েছেন। বিশেষ করে, ঈদকে সামনে রেখে মুরগির দাম বাড়ানো হলেও, তার উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বাজারে আরো সংকট দেখা দিতে পারে। ঈদের পরে, ডিম-মুরগির বাজারের সংকট আরো বড় আকার ধারণ করবে, কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।

বর্তমানে, একটি মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৮-৩০ টাকা হলেও, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এটি নির্ধারণ করেছে ৪৯ থেকে ৫৭ টাকা, কিন্তু খামারিদের তা কিনতে হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়! আর এই অস্বাভাবিক খরচের কারণে প্রান্তিক খামারিরা পণ্য উৎপাদন করেও খরচ উঠাতে পারছেন না। প্রান্তিক খামারিরা এখন খুবই সংকটে রয়েছেন, কারণ তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। দেশের পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে রয়েছে, যা সারা দেশের পোল্ট্রি খামারিদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিন্ডিকেট এবং কর্পোরেট কোম্পানির একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণের কারণে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদন খরচের তুলনায় ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না, যা তাদের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব করে তুলছে। তবে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোম্পানির বাণিজ্যিক খামারের তুলনায় প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ ২২.৬০% বেশি এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিং-এর তুলনায় ৩৮.৬৬% বেশি।

একইভাবে, কোম্পানির বাণিজ্যিক খামারের তুলনায় কন্ট্রাক্ট ফার্মিং-এর উৎপাদন খরচ ১১.৫৮% কম, যা প্রমাণ করে যে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন খরচ অনেক কম। এই কারণে, কোম্পানিগুলো বাজারে ২০% উৎপাদন করেও পুরো বাজার দখল করে ফেলছে, যা প্রান্তিক খামারিদের জন্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন করে তুলছে।
বর্তমানে, একটি ডিম উৎপাদনের খরচ ১০ থেকে ১০.৫০ টাকা হলেও, খামারিরা তা ৭-৮ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন, যার ফলে প্রতি ডিমে ৩ টাকা লোকসান হচ্ছে। একইভাবে, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৫৫-১৭০ টাকা, কিন্তু বাজারে তা ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি প্রান্তিক খামারিদের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, কারণ তাদের ন্যায্যমূল্য না পেলে তারা ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন না। বাজার সিন্ডিকেট এবং কর্পোরেট কোম্পানির নিয়ন্ত্রণের ফলে প্রান্তিক খামারিরা শর্তবিহীন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আজ, তেজগাঁও ডিম সমিতির সিন্ডিকেট পুরো দেশে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ফিড ও মুরগির বাচ্চার বাজারও সিন্ডিকেট দ্বারা চালিত হচ্ছে, যার কারণে প্রান্তিক খামারিরা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারছেন না। যদি এ পরিস্থিতি চলতে থাকে, তবে দেশের পোল্ট্রি শিল্প চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

সরকার যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয় এবং সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তবে দেশের পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংস হতে বাধ্য। ডিম-মুরগির বাজারের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে, এবং এ জন্য সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। ডিম-মুরগির বাজারে স্বস্তি ফেরাতে, ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, বড় কোম্পানির একচেটিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করতে হবে এবং তেজগাঁও ডিম সমিতির সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এছাড়া, প্রান্তিক খামারিদের টিকিয়ে রাখতে সরকারকে সঠিক নীতিমালা ও সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। পোল্ট্রি শিল্প বাঁচাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং সরকারের পাশাপাশি নীতিনির্ধারক, গণমাধ্যম, ও সাধারণ জনগণের সহযোগিতা জরুরি। যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে এবং পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের পথে যাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2025 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS