নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের উদ্যোগে পাবনার ঈশ্বরদীতে গড়ে তোলা বেনারসী পল্লী প্রকল্প শুরুতে ছিল সম্ভাবনাময়। উত্তরাঞ্চলের তাঁতীদের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা, বেনারসী তাঁতশিল্পের উন্নয়ন ও তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা দেওয়া এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল। তবে প্রকল্পটির মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হতে চললেও এটি পূর্ণতা পায়নি। প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে তাঁতী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করেছে।
১৯৯০ দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ঈশ্বরদীতে বেনারসী পল্লী স্থাপন করার জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ২০০০ সালে প্রকল্পের অধীনে ‘ঈশ্বরদী বেনারসী পল্লী’ নামে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এই প্রকল্পের জন্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয় এবং শহরের ফতে মোহাম্মদপুর এলাকায় ৫ দশমিক ৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের প্রথম ধাপে বিদ্যুৎ, পানি, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সীমানা প্রাচীর, অফিস, মসজিদসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়।
২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর তৎকালীন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী শাজাহান সিরাজ এমপি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। কিন্তু এরপর থেকে প্রকল্পের কার্যক্রমে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
বর্তমানে ঈশ্বরদী বেনারসী পল্লীতে মোট ৯০টি প্লট রয়েছে। তবে সেখানে এখনো পূর্ণাঙ্গ কারখানা গড়ে ওঠেনি। মাত্র পাঁচটি বেনারসী কারখানা স্থাপিত হলেও এর মধ্যে একটি বন্ধ হয়ে গেছে এবং বাকি চারটি কোনো রকমে চালু রয়েছে। বেশির ভাগ প্লটে কারখানা গড়ে ওঠেনি। এ ছাড়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় ৩৬টি প্লট বাতিল করা হয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা, সুষ্ঠু তদারকি এবং উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে প্রকল্পটি হতাশাজনকভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে।
তাঁতীদের অভিযোগ, দুই দশক ধরে প্রকল্পটি কার্যত কোনো অগ্রগতি অর্জন করেনি। তাদের দাবি ছিল, ২০ বছর মেয়াদে সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ, সরকারি অর্থায়নে কারখানা ও আবাসন নির্মাণ এবং ঈশ্বরদীর তাঁতীদের জন্য একটি বেসিক সেন্টার ও ক্যালেন্ডার মেশিন স্থাপন। কিন্তু এসব দাবির প্রতি বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের কোনো সদর্থক পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাঁতীদের মতে, প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।
একাধিক তাঁত মালিক জানিয়েছেন, প্রতিটি কারখানা নির্মাণের খরচ ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা, যা তাদের পক্ষে এককভাবে বহন করা সম্ভব হয়নি। অধিকাংশ কারখানার মালিক আর্থিক সংকটে ভুগছেন এবং পল্লীতে গড়ে তোলা কারখানাগুলোর কার্যক্রমও সীমিত হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে নির্মিত প্রশাসনিক ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। চারপাশে ঝোপঝাড় এবং জঙ্গল ছড়িয়ে পড়েছে। পুরো এলাকায় নীরবতা বিরাজ করছে, কারণ অধিকাংশ প্লটে কোনো কার্যক্রম নেই। তবে কয়েকটি কারখানা নিজস্ব অর্থায়নে চালু করা হয়েছে। কিন্তু তাতে তেমন কাজ নেই।
শরিফুল ইসলাম নামে এক কারখানার মালিক জানান, পল্লীতে কোনো ভবিষ্যৎ নেই। কারণ এখানে কারও দৃষ্টি নেই এবং আর্থিক সংকটের কারণে কারখানা স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এ মাসেই প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে এবং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বেনারসী পল্লীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামাল মোবাইলে জানান, অনেক প্লট গ্রহীতা সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করেননি এবং কারখানাও গড়ে তোলেননি। তিনি বলেন, ‘২০ বছর আগে শুরু হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদ চলতি ডিসেম্বরেই শেষ হচ্ছে। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে তারা এখনো জানাননি, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে কি না।’
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply