বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ন

ঋণ পরিশোধে ইসলামের নির্দেশনা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪
  • ৯৫ Time View

কোরআন ও হাদিসে একদিকে যেমন ঋণ দেয়াকে উৎসাহিত করা হয়েছে, অপরদিকে ঋণ পরিশোধের বিষয়েও যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করবে, তাদের জন্যে হুঁশিয়ারিও উচ্চারিত হয়েছে।

ঋণ যথারীতি পরিশোধের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ দিয়ে ঋণদাতা গ্রহীতাকে উপকার ও অনুগ্রহ করে থাকে। কিন্তু ঋণ পরিশোধ কোনো অনুগ্রহ নয়, বরং ঋণগ্রহীতার ওপর এক অবধারিত দায়িত্ব।

ঋণগ্রহীতার ওপর এটি ঋণদাতার অধিকার। এমনকি যদি ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করার আগে মারা যায়, তাহলে কাফন-দাফনের পর প্রথমেই তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে ঋণ পরিশোধ করে দিতে হবে। ঋণ পরিশোধের পর যদি অতিরিক্ত কিছু থাকে, তাহলেই কেবল তার ওয়ারিশদের মাঝে তা বণ্টন করা হবে এবং তাতে তার অসিয়ত কার্যকর হবে।

ঋণ পরিশোধের বিষয়টি একদিকে যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনি হাদিস শরিফে এর ফজিলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে। এতে প্রাকারান্তরে ঋণ পরিশোধের প্রতি উৎসাহিতও করা হয়েছে। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা, হযরত রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধ করে দেয়ার নিয়তে কারও কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে আল্লাহ তা‘আলা তার পক্ষ থেকে তা আদায় করে দেন। ’ (বুখারি ২৩৮৭)

সময়মতো যেন ঋণ পরিশোধ করে দেয়া যায় এজন্যে হাদিসে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। হজরত আবু যর (রা.) বলেছেন, আমি একদিন হয়রত রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। একপর্যায়ে উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বললেন,

‘আমি চাই না- উহুদ পাহাড় আমার জন্যে স্বর্ণে পরিণত করে দেয়া হলেও এর একটি দিনার আমার কাছে তিনদিনের বেশি সময় থাকুক; হ্যাঁ, যদি কোনো দিনার আমি আমার ঋণ পরিশোধের জন্যে রেখে দিই সেটা ভিন্ন। (বুখারি ২৩৮৮)

ঋণ পরিশোধের দোয়া-

সময়মতো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে ঋণ পরিশোধ করে দেয়া মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ। ঋণগ্রহীতা যেন এ দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারে সে জন্যে রসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের দোয়াও শিখিয়েছেন। দোয়াটি হলো-

اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনী বিহালালিকা আন হারামিক, ওয়া আগনিনী বিফাজলিকা আম্মান সিওয়াক।

অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালাল বিষয়ের মাধ্যমে হারাম থেকে বাঁচান। এবং আপনার দয়া ও করুণা দিয়ে অন্যদের থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দিন। (তিরমিজি ৩৫৬৩)

ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করা ঠিক নয়-

অনেকে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করে থাকে। কাজটি সুস্পষ্ট অন্যায়। ঋণগ্রহীতার মনে রাখা উচিত- ঋণদাতা তার ওপর অনুগ্রহ করেছে, এ অনুগ্রহের পরিবর্তে তার সঙ্গে  সুন্দর আচরণ করাই কর্তব্য। সময়মতো যদি তার ঋণ পরিশোধের সামর্থ্য না থাকে, তাহলে সে সৌজন্য রক্ষা করে ঋণদাতাকে তা জানাতে পারে, তার কাছ থেকে আরও কয়েকদিন সময় চেয়ে নিতে পারে। কিন্তু সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ যথাসময়ে আদায়ে টালবাহানা করা- হাদিসে একে সরাসরি ‘জুলুম’ বলা হয়েছে।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সচ্ছল ব্যক্তির (ঋণ পরিশোধে) টালবাহানা করা অন্যায়। (বুখারি ২৪০০)

ঋণদাতার কটুকথায় করণীয়-

সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করলে পাওনাদার অনেক সময় কটুকথাও বলে। ইসলামের শিক্ষা হলো পাওনা টাকার জন্যে তাগাদা করার সময় ঋণদাতা যেন সহজ ও কোমল আচরণ করে, কোনো কটুবাক্য ব্যবহার না করে। কিন্তু এরপরও যদি সে কটুকথা বলে, অসুন্দর আচরণ করে, তাহলে ঋণগ্রহীতার উচিত তার সঙ্গে বাদানুবাদে কিংবা ঝগড়া-তর্কে জড়িয়ে না পড়া।

হাদীসে আছে, এক ব্যক্তির কাছ থেকে হযরত রসুলুল্লাহ (সা.) কিছু ঋণ নিয়েছিলেন। সে এসে তার সঙ্গে কঠোর ভাষায় কথা বলতে লাগল। তা দেখে সাহাবায়ে কেরাম তাকে মারতে উদ্যত হচ্ছিলেন। কিন্তু হযরত রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও, পাওনাদারের একটু কথা বলার অধিকার রয়েছে। (বুখারি ২৪০১)

খুশি হয়ে বেশি ফেরত দেয়ার বিধান-

ঋণ পরিশোধের সময় ঋণগ্রহীতা ইচ্ছা করলে ঋণদাতার অনুগ্রহের বদলাস্বরূপ তাকে কিছু টাকা বাড়িয়েও দিতে পারে কিংবা যে  মানের সম্পদ ঋণ নিয়েছিল তাকে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট মানের জিনিস ফেরত দিতে পারে। বাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপারে যদি স্পষ্ট কিংবা অস্পষ্ট কোনো পূর্ব কথা না থাকে, তাহলে এটা নিষিদ্ধ সুদের অন্তর্ভুক্তও হবে না। অনুগ্রহের বিনিময় তো অনুগ্রহ দিয়েই হতে পারে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনালেখ্য থেকেও আমরা এ অনুগ্রহের শিক্ষা পাই।

হাদীসে আছে, সাহাবি হযরত জাবের (রা.) বলেছেন, রসুলুল্লাহ (সা.) আমার কাছ থেকে একবার ঋণ নিয়েছিলেন। পরে যখন তিনি তা আমাকে পরিশোধ করলেন, তখন আমার পাওনার চেয়েও বাড়িয়ে দিলেন। (আবু দাউদ ৩৩৪৯)

পাওনা পরিশোধকালে পাওনাদারের কৃতজ্ঞতা জানানো এবং তার জন্যে কল্যাণের দোয়া করা ইসলামের এক অনন্য শিক্ষা। রসুলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি রবিয়া (রা.)-এর থেকে চার হাজার দিরহাম ঋণ করেছিলেন। যখন তা পরিশোধ করলেন, তখন তিনি তার জন্য এ দোয়া করলেন, আল্লাহতায়ালা তোমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন। (নাসায়ি ৪৬৮৩)

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো খবর »

Advertisement

Ads

Address

© 2024 - Economic News24. All Rights Reserved.

Design & Developed By: ECONOMIC NEWS