বর্তমানে থাইরয়েড একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে ওজন কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে থাকে না। চুল অকালেই ঝরে পড়ে, ত্বক হয়ে ওঠে জৌলুসহীন। তাই আসুন জেনে নিই ডায়েটে ঠিক কোন খাবারগুলো রাখলে থাইরয়েড রোগটি ভালো না হলেও বশে রাখতে পারবেন।
থাইরয়েড গ্রন্থিটি আমাদের গলায় শ্বাসনালির সামনের দিকে অবস্থিত। এই গ্রন্থি থেকে দুধরনের হরমোন টি থ্রি ও টি ফোর নিঃসরিত হয়। আমাদের শরীরের রক্তে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এই হরমোন থাকে।
থাইরয়েডের সমস্যা প্রধানত দুধরনের হয়। হাইপারথাইরয়েডিজমে রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর অন্যটি হলো হাইপোথাইরয়েডিজমে রক্তে থাইরয়েড নিঃসৃত হরমোনের পরিমাণ কমে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য না থাকলে হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যাওয়া, খিদে পাওয়া, অসহ্য গরম লাগা, শীত বেশি অনুভূত হওয়া, অতিরিক্ত ঘাম, পেশি দুর্বলতা বা পিরিয়ডের সমস্যার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
থাইরয়েড গ্রন্থির আল্ট্রাসাউন্ড, অ্যান্টি টিপিও অ্যান্টিবডি, থাইরয়েড স্টিমুলেটিং, ইমিউনোগ্লোবিউলিন ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। পরীক্ষায় থাইরয়েড ধরা পড়লেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়া শুরু করেন অনেকেই।
কিন্তু অনেকেই সঠিক নিয়মে ওষুধ না খাওয়ায় এর কার্যকারিতা পান না। এ বিষয়ে ভারতের আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ডা. দিক্সা ভাবসার থাইরয়েড বশে রাখতে ৫টি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আসুন, একে একে তা জেনে নিই–
১। আমলকী: যে কোনো টক ফলের তুলনায় আমলকীতে আট গুণ বেশি ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। তাই নিয়মিত আমলকী খাওয়ার অভ্যাস থাইরয়েডজনিত সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
২। কুমড়া বীজ: কুমড়ার বীজে রয়েছে জিঙ্ক। এই জিঙ্ক শরীরের অন্যান্য ভিটামিন এবং খনিজগুলোকে শোষণ করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে শরীরে থাইরয়েড হরমোন সংশ্লেষণ করে একটি ভারসাম্য বজায় রাখে।
৩। ব্রাজিল নাটস: থাইরয়েড হরমোনের প্রয়োজন সেলেনিয়ামের। এটি একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা শরীরে থাইরয়েড হরমোনের বিপাক সংগঠিত হওয়ার জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। ব্রাজিল বাদাম সেলেনিয়ামের সেরা প্রাকৃতিক উৎসগুলোর মধ্যে একটি। চিকিৎসকের মতে, দিনে মাত্র তিনটি ব্রাজিল নাট খেলেই শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট তৈরি হবে; যা থাইরয়েড মিনারেল সরবরাহ করতে পারে।
৪। মুগ ডাল: মুগ ডালে আছে প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, জটিল কার্বোহাইড্রেট, প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ডালে ফাইবারের পরিমাণও বেশি। কোষ্ঠকাঠিন্য হলো থাইরয়েড ভারসাম্যহীনতার একটি সাধারণ লক্ষণ। তাই ফাইবারজাতীয় খাবার খেলে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সহজ হবে।
৫। নারকেল: থাইরয়েড রোগীদের জন্য অন্যতম কার্যকর খাবার হতে পারে ডাব অথবা নারকেল। নারকেল বিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। যার ফলে খাবার ভালোভাবে হজম হয়। এটি থাইরয়েড নিরাময়ের একটি মহৌষধ।
থাইরয়েড সমস্যা থেকেই গলগণ্ড, থাইরয়েডাইটিস, হাইপারথাইরয়েডিজম, হাইপোথাইরয়েডিজম, গ্রেভস ডিজিজ, থাইরয়েড ক্যানসার, থাইরয়েড নোডুলস, থাইরয়েড স্টর্মসহ নানা রোগ হয়। তাই থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় অবহেলা নয়। সঠিক খাবার প্রাধান্য দেয়ার মাধ্যমেই বশে রাখুন জটিল এ রোগকে।
Design & Developed By: ECONOMIC NEWS
Leave a Reply